মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

পৃথিবীতে শয়তানের ১২ টার্গেট

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

পৃথিবীতে শয়তানের ১২ টার্গেট

শয়তান মানুষের সরাসরি দুশমন। ধোঁকা ও প্ররোচনার নতুন নতুন ফাঁদে মানুষকে আটকানোর চেষ্টা করে সে। আল্লাহ তাআলা যখন শয়তানকে জান্নাত থেকে বের করে দেন তখন সে চারটি বিষয় প্রার্থনা করে। ১. কেয়ামত পর্যন্ত জীবন ২. জীবিকার ব্যবস্থা নিশ্চিত ৩. মানুষের দৃষ্টির বাইরে থেকে শয়তানি করার সুযোগ ও ৪. মানুষের শিরা-উপশিরায় চলাচলের সুযোগ। তার সব আবেদনই আল্লাহ তাআলা কবুল করে বলেন- ‘তুমি সুযোগপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা আরাফ: ১৫)

এরপর সে আল্লাহর বান্দাদের পিথগামী করা সুযোগ পেয়ে যায়। এরপর মূলত ১২টি নিকৃষ্ট কাজের মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করে যাচ্ছে শয়তান। সেগুলো হলো-


বিজ্ঞাপন


১. ঈমানদারদের আল্লাহর আদেশ ভুলিয়ে দেওয়া
শয়তানের প্রথম মিশন শুরু হয় আদম ও হাওয়া (আ.)-কে ধোঁকা দেওয়ার মাধ্যমে। তার কুমন্ত্রণায় আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) আল্লাহর আদেশ ভুলে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়েছিলেন। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর শয়তান উভয়কে প্ররোচিত করল, যাতে তাদের অঙ্গ, যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়। সে বলল, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের এ গাছ থেকে নিষেধ করেননি, তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও কিংবা হয়ে যাও এখানে চিরকাল বসবাসকারী। সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বলল, আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্খী।’ (সুরা আরাফ: ২১-২১)

২. আল্লাহর পথকে ভুল পথ হিসেবে প্রচার
শয়তান আদম ও হাওয়া (আ)-কে ধোঁকা দিয়ে বলেছিল, মানুষের পরিণাম হলো মৃত্যু, তবে এ গাছের ফল যে খাবে সে চিরজীবী হবে। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর শয়তান এ ব্যাপারে তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদেরকে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার প্ররোচনা দ্বারা বহিষ্কৃত করল।’ (সুরা বাকারা: ৩৬)

আরও পড়ুন: শয়তানের খপ্পর থেকে সংসার নিরাপদ রাখার উপায়

৩. দারিদ্র্যের ভয় ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ
শয়তান মানুষের সামনে অশ্লীল ও খারাপ জিনিসকে আকর্ষণীয় ও উত্তম হিসেবে পেশ করে এর পেছনে অর্থ খরচ করায়। অন্যদিকে দারিদ্র্যের ভয় দেখিয়ে দান-সদকা থেকে বিরত রাখে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ‘শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্র্যের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়।’ (সুরা বাকারা: ২৬৮) 


বিজ্ঞাপন


৪. আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করানো
মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস ও প্রবঞ্চনা দ্বারা পথভ্রষ্ট করা এবং আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তনের মতো অবাধ্যতায় লিপ্ত করা শয়তানের অন্যতম কাজ। আল্লাহ বলেন, ‘(শয়তান বলল) আমি অবশ্যই তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, মিথ্যা আশ্বাস দেব, তাদের নির্দেশ দেব, যার ফলে তারা পশুর কর্ণ ছেদ করবে এবং তাদের নির্দেশ দেব ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করবে।’ (সুরা নিসা: ১১৯)

৫. নিজেদের দলভুক্ত করার প্রচেষ্টা
শয়তান মানুষকে বশীভূত করে নিজেদের দলভুক্ত করে নেয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘শয়তান তাদের বশীভূত করে নিয়েছে। অতঃপর আল্লাহর স্মরণ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা শয়তানের দল। সাবধান, শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা মুজাদালা: ১৯)

৬. আল্লাহর বান্দাদের চারদিক থেকে আক্রমণ
শয়তান মানুষকে সহজ-সরল ও সঠিক পথ থেকে বিমুখ করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘শয়তান বলল, আপনি আমাকে যেমন উদ্ভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব। অতঃপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের বেশির ভাগকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৬-১৭)

৭. মানুষের শিরা-উপশিরায় বিচরণ
শয়তান আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আদম সন্তানের শিরা-উপশিরায় বিচরণ ও চলাফেরা করে আদম সন্তানকে পথহারা করে। মহানবী (স.) বলেন, ‘অবশ্যই শয়তান মানুষের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি: ১২৮৮)

আরও পড়ুন: ব্ল্যাক ম্যাজিকের প্রভাব ঘরে ঘরে, বাঁচার আমল

৮. পাপকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলা
পথভ্রষ্ট করতে শয়তানের অন্যতম কৌশল হলো, পাপ কাজকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলা। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে (ইবলিস) বলল, হে আমার পালনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করব। আপনার মনোনীত বান্দারা ছাড়া (তাদের কোনো ক্ষতি আমি করতে পারব না)।’ (সুরা হিজর: ৩৯-৪০)

৯. ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা
শয়তান মুমিনের ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে ইবাদত নষ্ট করে দেয়, যাতে সে পুণ্য থেকে বঞ্চিত হয় এবং আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায়। হজরত উসমান বিন আবিল আস (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, শয়তান আমার নামাজ ও কেরাতের মাঝে এসে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং আমার মনে সংশয় সৃষ্টি করে। অতঃপর নবী কারিম (স.) বললেন, এটি খিনজাব নামক শয়তানের কাজ। যখন তুমি এর প্রভাব অনুভব করবে, তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে এবং বামদিকে তিনবার থুথু ফেলবে। আমি তাই করলাম এবং আল্লাহ তাআলা তাকে আমার থেকে বিতাড়িত করলেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২২০৩)

১০. প্রভাব বিস্তার করা
শয়তান আদম সন্তানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তার প্রভাব হলো, অকল্যাণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং সত্যকে মিথ্যায় প্রতিপন্ন করা। আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই সে (শয়তান) তোমাদের মন্দ ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয়। আর যেন তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে এমন কথা বলো যা তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা: ১৬৯) তবে ‘যেসব মুমিন তাদের রবের ওপর নির্ভর করে, তাদের ওপর তার (শয়তানের) কোন আধিপত্য নেই। তার আধিপত্য তো শুধু তাদেরই উপর যারা তাকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে এবং যারা আল্লাহর সাথে শরিক করে। (সুরা নাহল: ৯৮-১০০, তাফসিরে মারেফুল কোরআন, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯১-৩৯৪)

১১. শিরক-বিদআতে জড়ানো শয়তানের অন্যতম অস্ত্র
মানুষকে শিরক-বিদআতে জড়ানো শয়তানের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। শিরকে জড়াতে পারলে সে সাকসেস। কারণ শিরকের কারণে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। এরপর মুসলিম সমাজে বিদআত চালু করা তার খুব প্রিয় একটি বিষয়। প্রসিদ্ধ তাবেয়ি সুফিয়ান সাওরি (রহ) বলেন- ‘ইবলিসের নিকট যেকোনো নাফরমানির চেয়ে বিদআত বেশি প্রিয়। কারণ নাফরমানি থেকে তাওবা করার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু বিদআত থেকে তাওবা করার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।’ (শাতিবি, আলইতিসাম: ১/১১; ইমাম সুয়ুতি, আলআমরু বিল ইত্তিবা পৃ-১৯)

আরও পড়ুন: বিদআত চালুর নেপথ্যে শয়তান

১২. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো
স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেয়ে বেশি আনন্দের বিষয় শয়তানের নেই। কারণ এতে করে সে পবিত্র সম্পর্কের পরিবর্তে অপবিত্র সম্পর্কের দরজা খুলে দিতে সক্ষম হয়। জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘শয়তান পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে, তারপর (পুরো বিশ্বে) তার বাহিনী পাঠিয়ে দেয়। আর (ওই শয়তান সদস্য) তার সবচেয়ে বেশি নৈকট্যপ্রাপ্ত, যে (মানুষের মাঝে) সবচেয়ে বেশি ফেতনা সৃষ্টি করে। শয়তান সিংহাসনে বসে সবার ঘটানো ফেতনার বর্ণনা শোনে। একজন এসে বলে আমি অমুক কাজ করেছি, শয়তান বলে তুমি তেমন কোনো কাজ করোনি। এভাবে শয়তান তার পাঠানো অন্যদের (শয়তান সদস্যদের) মন্দ কাজের বিবরণ শুনতে থাকে। অতঃপর একজন এসে বলে- 'আমি অমুকের সঙ্গে ধোঁকার আচরণ করেছি, এমনকি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছি। এ (ফেতনার) কথা শুনে শয়তান তাকে তার কাছাকাছি (বুকে) টেনে নেয়। আর বলে- তুমিই বড় কাজ করেছ। হাদিস বর্ণনাকারী আমাশ বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, অতঃপর শয়তান তাকে তার বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নেয়।' (মুসলিম: ৭২৮৪; আহমদ: ১৪৩৭৭)

শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার উপায়
শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী দোয়া ও আমলের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সাতটি করণীয় রয়েছে।

১. ঘরে প্রবেশের সময় দোয়া পড়া: বাহির থেকে ঘরে প্রবেশ করতেই সালামের পর সুন্নতের দিকনির্দেশনা মোতাবেক এ দোয়া পড়া- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাল মাউলিজি, ওয়া খাইরাল মাখরাজি; বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা; ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আগমন ও প্রস্থানের কল্যাণ চাই। আপনার নামে আমি প্রবেশ করি ও বের হই এবং আমাদের রব আল্লাহর উপর ভরসা করি।’ (আবু দাউদ: ৫০৯৬)

২. পরিবারে সালামের প্রচলন করা: পরিবারের কোনো সদস্য বাহির থেকে ঘরে প্রবেশ করতেই ঘরে অবস্থানরত পরিবারের অন্য লোকদের সালাম দেওয়ার প্রচলন চালু করা। এটি কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশ। এতেই রয়েছে কল্যাণ। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ- فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُون ‘যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ যা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র। (সুরা নূর: ৬১)। রাসুলুল্লাহ (স.)আনাস (রা.)-কে বলেন, ‘হে বৎস, যখন তুমি তোমার পরিবারের কাছে ফিরবে, তখন তাদের সালাম দেবে। এটা তোমার ও তোমার ঘরবাসীর জন্য বরকতের কারণ হবে।’ (তিরমিজি: ২৬৯৮)

৩. খাবারগ্রহণের আগে-পরে দোয়া পড়া: খাবার গ্রহণের আগে পরে দোয়া পাঠ করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সে খাবারে শয়তানের অংশ থাকে। সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে।’ (মুসলিম: ৫৩৭৬) তাই বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে খাওয়া শুরু করতে হবে। অতঃপর এই দোয়াটি পড়া- اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَ اَطْعِمْنَا خَيْراً مِّنْهُ ‘আল্লাহুম্মা বা-রিক লানা- ফী-হি ওয়া আত্বইমনা খাইরাম্ মিনহু।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে এতে বরকত দিন, ভবিষ্যতে আরো উত্তম খাদ্য দিন’। (তিরমিজি, আবু দাউদ, মেশকাত: ৪২৮৩)

খাবারগ্রহণ শেষে এই দোয়া পড়া—الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا، وَسَقَانَا، وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আতআমানা, ওয়া সাকানা, অজাআলানা মুসলিমিন।’ অর্থ: ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের খাইয়েছেন, পান করিয়েছেন এবং মুসলিম বানিয়েছেন।’ (আবু দাউদ: ৩৮৫০)

আরও পড়ুন: প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০ দোয়া

৪. ঘরে সুরা বাকারা তেলাওয়াত করা: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সবকিছুরই একটি চূড়া থাকে আর কোরআনের চূড়া হল সুরা আল-বাকারা। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বাড়িতে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় সে বাড়িতে শয়তান প্রবেশ করে না।’ (তিরমিজি: ২৮৭৭)

৫. অশ্লীল বিনোদন থেকে পরিবারকে মুক্ত রাখা: ঘর ও পরিবার-পরিজনকে গান ও বাদ্যযন্ত্র থেকে মুক্ত রাখা শান্তির অন্যতম উৎস। কেননা গান-বাজনা হলো শয়তানের আওয়াজ। শয়তানের উদ্দেশে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ বলেন চলে যা, অতঃপর তাদের মধ্য থেকে যে তোর অনুগামী হবে, জাহান্নামই হবে তাদের সবার শাস্তি-ভরপুর শাস্তি। তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়াজ (বাদ্য-বাজনা) দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ কর, তাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে শরিক হয়ে যা এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান তাদেরকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয় না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৬৩-৬৪)

আল্লাহর জিকির যেমন শয়তানকে দূরে রাখে তেমনিভাবে গান এবং বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ রহমতের ফেরেশতাগণকে দূরে রাখে। আর ঘর থেকে যখন ফেরেশতা বের হয়ে যায়, তখন সেখানে শয়তান তার রাজত্ব কায়েম করে। এভাবে সংসার থেকে শান্তি দূর হয়ে যায়।

৬. ঘরে কুকুরের প্রবেশ থেকে সাবধান থাকা: ঘরকে কুকুরের প্রবেশ থেকে হেফাজত করা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে- ‘যে ঘরে ছবি এবং কুকুর থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ (নাসায়ি: ৫৩৪৭-সহিহ)

৭. ঘরে ছবি ও জীব-জন্তুর মূর্তি না থাকা: ছবি এবং বিভিন্ন জীব জন্তুর মূর্তি থেকে ঘরকে পরিচ্ছন্ন রাখা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে- ‘যে ঘরে মূর্তি বা ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না’ (মুসলিম)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘কেয়ামতের দিনে ছবি বা মূর্তি নির্মাতাদের সর্বাধিক কঠিন শাস্তি হবে।’ (বুখারি: ৫৯৫০, মুসলিম: ২১০৯)

শয়তানের বৈশিষ্ট্য
শয়তানের প্রধান বৈশিষ্ট্য অহংকার। শয়তানের শয়তানি শুরুই হয়েছে অহংকার দিয়ে। সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করে আদম (আ.)-কে সেজদা করতে অস্বীকার করেছিল। অহংকারের নানান রূপ রয়েছে। যেমন- ১. সত্যকে গ্রহণ না করা; অন্যায়ভাবে বিতর্ক করা। ২. নিজের সৌন্দর্য্য, দামী পোশাক ও দামী খাবার ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে হেয় করা এবং মানুষের ওপর দাম্ভিকতা ও অহংকার প্রকাশ করা। ৩. আত্মীয়স্বজন ও বংশধরদের নিয়ে গৌরবের মাধ্যমেও অহংকার হতে পারে। অহংকার হকে পারে, নিজের সম্পদ, মেধা ইত্যাদিরও।

আরও পড়ুন: রাতে আয়াতুল কুরসি পড়লে সকাল পর্যন্ত শয়তানের যে অবস্থা হয়

মানুষরুপি শয়তান
যারা অন্যায় কাজ করে, অন্যকে অন্যায়ের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজে উৎসাহী করে, তারাই মানব শয়তান বা মানুষরুপি শয়তান। এজন্যই পবিত্র কোরআনের সুরা নাসে জ্বিন শয়তানের কাছ থেকে আশ্রয় গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে মানব শয়তান থেকেও আশ্রয়ের নির্দেশ এসেছে। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘শয়তান দুই প্রকার। জ্বিন শয়তান ও মানব শয়তান। জ্বিন শয়তান সর্বদা মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়। আর মানুষ শয়তান প্রকাশ্যে মন্দ কাজে প্ররোচিত করে।’ (তাফসিরে কুরতুবি, সুরা নাসের তাফসির দ্রষ্টব্য)
কাতাদাহ (রহ.) বলেন, ‘জ্বিনের মধ্যেও শয়তান আছে, মানুষের মধ্যেও শয়তান আছে। তারা নিজ নিজ দলভুক্তদের পাপকাজ শিক্ষা দেয়। তোমরা উভয় শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও।’ ইকরিমা (রহ.) বলেন, ‘মানব শয়তান হচ্ছে তারাই, যারা মানুষকে পাপকাজের পরামর্শ দেয়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, সুরা আনআমের ১১২ নম্বর আয়াতের তাফসির)

মুসলমানের উচিত হবে- শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলা। তাতে শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ফিরে আসবে শান্তি ও নিরাপত্তা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর