মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

জুমার রাত শুরু হলে মুমিনের ৫ করণীয়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

জুমার রাত শুরু হলে মুমিনের ৫ করণীয়

মুসলমানদের কাছে জুমাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে হাদিসে। সৃষ্টিজগতের শুরু থেকেই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। জুমাবার শুরু হওয়া থেকে শেষ পর্যন্ত বেশকিছু ফজিলতপূর্ণ আমল রয়েছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতটি হলো জুমার রাত। কারণ আরবি হিসাবে বৃহস্পতিবার মাগরিব থেকে জুমাবার শুরু হয়। এই রাতটি দোয়া কবুলের উপযুক্ত। 

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘পাঁচটি রাত এমন রয়েছে, যে রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।— ১. জুমার রাত। ২. রজব মাসের প্রথম রাত। ৩. শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত (শবে বরাত)। ৪. ঈদুল ফিতরের রাত। ৫. ঈদুল আজহার রাত।’ (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক: ৭৯২৭)


বিজ্ঞাপন


এখানে জুমার রাতের বিশেষ কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো। যেগুলো সম্পর্কে নবীজির হাদিস রয়েছে।

১. নফল ইবাদত
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘হে আলী! শুক্রবার রাতের শেষ তৃতীয়াংশে সাহস করে উঠে পড়ো, কারণ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং এতে দোয়া কবুল হয়।’ (মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন: ১১৯০)

আরও পড়ুন: ফরজ বাধ্যতামূলক, নফলে আল্লাহর নৈকট্য 

২. আত্মীয়-স্বজন ও ভাই-বন্ধুর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘সোম ও বৃহস্পতিবারে আল্লাহ সব মুসলিমকে ক্ষমা করে দেন। তবে ওই দুই ব্যক্তি ছাড়া, যারা একে অপরকে বর্জন করেছে। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘পরস্পর মিলে যাওয়া পর্যন্ত এদেরকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দাও।’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৪০)


বিজ্ঞাপন


এই হাদিসের আলোকেই আলেমরা বলে থাকেন, অন্তত বৃহস্পতিবারে বিবাদ মিটিয়ে নেওয়া উচিত। কেননা যেসব মুসলমান ঝগড়া করে ও অন্যের প্রতি রাগান্বিত হয় তাদের এই রাতেও ক্ষমা করা হবে না। একইভাবে আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারীকেও এই রাতে ক্ষমা করা হবে না। এ কারণে নবীজি (স.) কোনো মুসলমানকে অন্য মুসলমানের সাথে তিন দিনের বেশি রাগ করে থাকতে নিষেধ করেছেন। (বুখারি: ৬০৫৬; মুসলিম: ২৫৫৯)

৩. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করো, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন।’ (বায়হাকি: ৬২০) আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন ও রাতে আমার ওপর দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ১০০টি প্রয়োজন পূরণ করবেন। এর মধ্যে ৭০টি আখিরাতে এবং ৩০টি পৃথিবীতে। (বায়হাকি: ২৭৬)

সাধারণ দিনেও দরুদ পাঠের অনেক ফজিলত রয়েছে। যে দরুদ পাঠ করে তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং এটি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে ভালবাসার একটি নিদর্শন বহন করে।

আরও পড়ুন: জুমার দিন দরুদ পড়ার ৫ ফজিলত

৪. সুরা কাহাফ পাঠ 
জুমাবার শুরু হলেই সুরা কাহাফ পাঠ শুরু করা যায়। ১১০ আয়াতের পুরো সুরাটি এক বৈঠকে পাঠ করা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে, তাই রাতে কিছু পাঠ করা এবং জুমার দিনে কিছু পাঠ করে পুরো সুরাটি জুমার দিনে শেষ করতে পারা অনেক বড় অর্জন। কেননা  জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়ার বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুরা কাহাফ পাঠ করবে, তার পায়ের নিচ থেকে আসমান পর্যন্ত নুর প্রজ্জ্বলিত হবে এবং কেয়ামতের দিনটি তার জন্য উজ্জ্বল হবে। আর দুই জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড ৬, পৃ-৩৯৮)

সবচেয়ে বড় ফেতনা হলো দাজ্জালের ফেতনা। এমন কঠিন ফেতনা থেকেও নিরাপদ থাকার উপায় হচ্ছে সুরা কাহাফ পাঠ। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যেভাবে নাজিল করা হয়েছে, সেভাবে যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য সেটি নিজের স্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত আলো হবে এবং শেষ ১০ আয়াত পড়লে দাজ্জালের গণ্ডির বাইরে থাকবে আর দাজ্জাল তার ওপর কোনোরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। (সুনানে নাসায়ি: ১০৭২২)

হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। (সহিহ মুসলিম: ৮০৯; আবু দাউদ: ৪৩২৩)

৫. বৃহস্পতিবার দিনে রোজা রাখা 
বৃহস্পতিবার রাতে পুরো সপ্তাহের আমল আল্লাহর সামনে উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে নবীজির ইরশাদ- ‘বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তাআলার সামনে বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়, তাই আমি চাই- আমার আমল পেশ করার সময় আমি যেন রোজা অবস্থায় থাকি। (সুনানে নাসায়ি: ২৩৫৮) এখানে বৃহস্পতিবার দিনে রোজা রাখার কথাই বলা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মর্যাদাপূর্ণ জুমার দিনটি কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর