শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

দাওয়াতি কাজ না করার পরিণতি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

দাওয়াতি কাজ না করার পরিণতি

দ্বীনের দাওয়াত তথা আল্লাহর পথে আহ্বানের জন্যই নবী-রাসুলদের আগমন। এই নবুয়তি কাজের আঞ্জাম দেওয়া মুমিনের জীবনের অন্যতম মিশন ও আবশ্যকীয় কাজ। নিজেদের জীবনে কোরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধান বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরিবার ও পাশ্ববর্তীদেরকে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আহ্বান করা মুমিন বান্দার কর্তব্য।

সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ, তাবলিগ ও নসিহত ছিল নবী-রাসুলদের ওপর ফরজ দায়িত্ব। সব নবী-রাসুলই নিজ নিজ উম্মতকে এ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তাওহিদ ও ইবাদতের আদেশ করেছেন। শিরক, কুফর ও পাপ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘রাসুলগণের দায়িত্ব তো শুধু সুস্পষ্টভাবে প্রচার করা।’ (সুরা নাহল: ৩৫)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ইজতেমার লক্ষ্য উদ্দেশ্য

দাওয়াতের মূল কাজই হচ্ছে মানুষকে সত্য ও ভালো পথে আহবান করা, আর অন্যায় ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা। কিন্তু কেউ যদি এই প্রধান কাজগুলো পালন না করে তাহলে তাদের প্রতি আল্লাহর হুঁশিয়ারি রয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আপনি আপনার রবের দিকে আহবান করুন আর আপনি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। (সুরা কাসাস: ৮৭)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘বনি ঈসরাঈলদের মধ্যে যারা কাফির তাদেরকে দাউদ ও মরিয়মপুত্র ঈসা (আ)-এর মুখে অভিসম্পাত করা হয়েছে। এটা এ কারণে যে, তারা অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করেছিল। তারা পরষ্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না, তারা যা করত তা অবশ্যই মন্দ ছিল।’ (সুরা মায়েদা: ৭৮-৭৯)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেছেন, ‘হে রাসুল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার ওপর যা নাজিল হয়েছে (কোরআনের বিধি-নিষেধ) তা আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না করেন তবে আপনি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলেন না। (সুরা মায়েদা: ৬৭)


বিজ্ঞাপন


রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যদি কওমের কোনো ব্যক্তি পাপ কাজে লিপ্ত হয় এবং কওমের লোকেরা তাকে বারণ করতে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও বারণ না করে তবে মৃত্যুর পূর্বেই আল্লাহ তাদেরকে আজাবে নিপতিত করবেন। (মেশকাত: ৪৯১৬)

অপর একটি হাদিসে জাবির (রা) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা জিবরাঈল (আ.)-কে বললেন, অমুক শহরকে তার বাসিন্দাসহ উল্টিয়ে দাও। তখন জিবরাঈল (আ.) বললেন, হে প্রভু! তাদের মধ্যে আপনার অমুক বান্দাটি আছে যে জীবনে একটি পলকের জন্যও আপনার নাফরমানি করেনি। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, অত:পর আল্লাহ ইরশাদ করলেন যে, শহরটিকে ওই ব্যক্তিসহ ওই লোকদের উপর উল্টিয়ে দাও। কেননা মুহূর্তের জন্য ওই ব্যক্তির চেহারা এসব দুর্ষ্কমের কারণে পরিবর্তিত হয়নি। (মেশকাত: ৪৯২৫)

আরও পড়ুন: দাওয়াত মুসলমানদের দিলে তাবলিগ হবে কি?

তাই দাওয়াতি কাজ করে যেতে হবে। ন্যায়ের আদেশের পাশাপাশি অন্যায় কাজ দেখলে বাধাও দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো অন্যায় কাজ দেখে, সে যেন তার হাত দ্বারা প্রতিহত করে, আর যদি সে শক্তি তার না থাকে তাহলে সে যেন মুখের কথার দ্বারা তা বন্ধ করে। যদি মৌখিকভাবে বারণ করতেও অপারগ হয় তাহলে সে যেন অন্তরে উক্ত কাজকে ঘৃণা করে। আর এটাই হলো ঈমানের দুর্বলতম লক্ষণ।’ (মুসলিম: ৮৫)

হুযাইফা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সে মহান আল্লাহর শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করবে এবং আর অসৎ ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের উপর আজাব পাঠাবেন। আর তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করবে কিন্তু তখন তোমাদের দোয়া কবুল করা হবে না।( তিরমিজি, মেশকাত: ৪৯১১)

ইসলামের বিধি-বিধানের এ দাওয়াতি মিশন পালনের বর্তমান দায়িত্ব হচ্ছে মুমিন মুসলমান, আলেম-ওলামাদের ওপর। যারা এ দায়িত্ব পালন করবেন তারাই সফল হবেন। আল্লাহ তাআলা এ দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে কোরআনে উল্লেখ করেন, ‘আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতিকে সম্বোধন করে বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির (কল্যাণে) জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে। তোমরা ন্যায় কাজের আদেশ এবং অন্যায় কাজের নিষেধ কর এবং আল্লাহকে বিশ্বাস কর।’ (সুরা আলে ইমরান: ১১০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ সাধ্যমতো পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর