মুসাফাহা মুসলিম সভ্যতা-সংস্কৃতির একটি অংশ। মুসাফাহা অর্থ করমর্দন, হাতে হাত মেলানো। আগন্তুক অথবা সাক্ষাতকারীর হাত ধরে তাকে অভিনন্দন জানানোর নাম মুসাফাহা। মুসাফাহায় হিংসা-বিদ্বেষ ও অহংকার দূর হয়। একে অন্যের প্রতি মহব্বত বাড়ে। সর্বোপরি ছোট ছোট গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আতা ইবনে আবি মুসলিম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পরে মুসাফাহা করো, তাহলে তোমাদের প্রতিহিংসা দূর হয়ে যাবে।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১৬১৭)
অন্য হাদিসে বারা ইবন আজিব (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন দু’জন মুসলমান মিলিত হয় এবং পরস্পর মুসাফা করে ও পরস্পর আল্লাহর প্রশংসা করে এবং তাঁর নিকট ক্ষমা চায়, তখন তিনি তাদের মাফ করে দেন। (আবু দাউদ: ৫২১১, ইফাবা-৫১২১, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকি: ৮৫৫৪)
বিজ্ঞাপন
সাহাবিরা মুসাফাহায় অভ্যস্ত ছিলেন। কাতাদাহ (রহ.) বলেন, ‘আমি আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম- নবী (স.)-এর সাহাবিগণের মধ্যে কি মুসাফাহা চালু ছিল? তিনি বললেন, হ্যাঁ।’ (সহিহ বুখারি: ৬২৬৩)
মুসাফাহার দোয়া
মুসাফাহা করার সময় এই দোয়া পাঠ করা উত্তম— يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ উচ্চারণ: ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম।’ অর্থ: ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন।’ আবু দাউদের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আওনুল মাবুদের লেখক মুহাম্মদ শামসুল হক আজিমাবাদী (রহ.) লিখেছেন, মুসাফাহার সময় আল্লাহর প্রশংসা ও ইস্তেগফার করা অর্থাৎ ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম’ দোয়াটি পড়া মোস্তাহাব।
আরও পড়ুন: নারী-পুরুষ একে অপরকে সালাম দেওয়া জায়েজ?
এই দোয়াটিও মুসাফাহার সময় পড়া যাবে—رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ উচ্চারণ: ‘রব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল-আখিরাতি হাসানাহ ওয়া কিনা আজাবান-নার।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১)
বিজ্ঞাপন
ইবনুস-সুন্নী সঙ্কলিত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, নবীজি (স.) মুসাফাহার সময় উক্ত দোয়াটি পড়তেন। কারো সাথে দেখা হলে মাথা ঝোঁকানো বা চুমু খাওয়া মুসলমানদের সংস্কৃতি নয়। বরং সালাম দিয়ে মুসাফাহা করবে। মুসাফাহার সময় হাতে ঝাঁকি দেওয়া এবং হাত বুকের সঙ্গে মেলানো নিষ্প্রয়োজন। মুসাফাহা এক হাতে নয়, বরং দুই হাতে করাই নিয়ম।