রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নবীজির সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

নবীজির সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু

মানুষের জীবনে একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ভালো বন্ধু শুধু সুখের সঙ্গী হয় না, দুঃখের সময়ও পাশে থাকে এবং সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে। প্রিয়নবীজির জীবনেও অনেক ভালো ও বিশ্বস্ত বন্ধু ছিলেন। তন্মধ্যে যার নাম সবার ঊর্ধ্বে তিনি হলেন হজরত আবু বকর (রা.)। আল্লাহর নবীকে তিনি প্রাণাধিক ভালোবাসতেন। প্রিয়নবীজির সব কথা শর্তহীন মেনে নিতেন। 

মক্কার কাফেরেরা যখন প্রিয়নবীর ওপর অকথ্য নির্যাতন করছিল তখন তিনি তাঁর পাশে ছিলেন। ঈমানের দাওয়াত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনা দ্বিধায় ইসলামগ্রহণ করেছিলেন হজরত আবু বকর (রা.)। হিজরতের সময় তিনি নবীজির সঙ্গী হয়েছিলেন। মেরাজের খবর শুনে তিনি শুধু একটি কথা জানতে চেয়েছিলেন, কথাটা কি তিনিই (মুহাম্মদ স.) বলেছেন? জাবাবে যখন হ্যাঁ বলা হলো, তখন আবু বকর (রা.) বলেছিলেন- তাহলে আমি বিশ্বাস করি। এর চেয়েও আশ্চর্যজনক কোনো বিষয় তাঁর জবান থেকে বের হলে সেটাও বিশ্বাস করব। এ ঘটনার পর আবু বকর থেকে তিনি হয়ে গেলে আবু বকর সিদ্দিক (রা.)।


বিজ্ঞাপন


প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচারের শুরুর দিন কাবায় মার খেয়ে পড়ে রইলেন হজরত আবু বকর (রা.)। অচেতন অবস্থায় পরিবারের লোকজন তাঁকে বাড়িতে নিয়ে গেল। রাতে জ্ঞান ফিরতেই প্রথমে জানতে চাইলেন রাসুলুল্লাহ (স.) কেমন আছেন? তাঁর মা খাবার নিয়ে এলেও তিনি খেলেন না। নিজ চোখে নবীজির অবস্থা না দেখা পর্যন্ত তিনি খাবেন না। তখন তাঁকে দারুল আরকামে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে নিয়ে যাওয়া হল। অবস্থা দেখে তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে রাসুলুল্লাহ (স.) কেঁদে ফেললেন।

আরও পড়ুন: আবু বকর (রা.) সম্পর্কে ওমর (রা.) বর্ণিত সুন্দর একটি হাদিস

আরো একবার, হারাম শরিফে নামাজ আদায়ের সময় কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় এক ব্যক্তি উকবা ইবন আবু মুয়িত রাসুলুল্লাহ (স.)-এর গলায় চাদর পেঁচিয়ে সজোরে টান দিল। শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। আবু বকর দৌড়ে এসে তাঁর গলা থেকে চাদর খুলে দিলেন আর বললেন- ‘তুমি কি এমন একজন লোককে মেরে ফেলতে চাও, যিনি শুধু বলেন একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই?’

এভাবেই নবীজিকে সবসময় সঙ্গ দিয়েছিলেন তিনি। হিজরতের সময় রাসুলুল্লাহ (স.) যখন জানালেন যে, আল্লাহ তাঁকে মদিনায় হিজরতের অনুমতি দিয়েছেন। তখন আবু বকর জিজ্ঞাসা করলেন, আমিও কি আপনার সাথে যেতে পারবো? রাসুল (স.) বললেন: হ্যাঁ, তুমিও যেতে পারবে। আনন্দে আবু বকর কেঁদে ফেললেন। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সঙ্গী হবেন এটাই ছিল তাঁর আনন্দ, অথচ হিজরতের কাজটি ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক, ধরা পড়লে অবধারিত মৃত্যু। এরপরও তিনি নবীজির সঙ্গী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। আগেই হিজরতের জন্য দুটো উট তৈরি করে রেখেছিলেন। 


বিজ্ঞাপন


তাবুক অভিযানের সময় চরম সংকটময় মুহূর্তে তিনি তাঁর সব অর্থসম্পদ রাসুল (স.)–এর হাতে তুলে দেন। আল্লাহর রাসুল তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ছেলেমেয়েদের জন্য বাড়িতে কিছু রেখেছ কি? তিনি জবাবে বললেন, তাঁদের জন্য আল্লাহ আর তাঁর রাসুলই যথেষ্ট।

আরও পড়ুন: আবু বকর (রা.)-এর বিরুদ্ধে ইহুদির নালিশ ও কোরআনের সাক্ষ্য

হজরত আবু বকর (রা.)-এর ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আবু বকর ছাড়া আমার ওপর কারো এমন কোনো অনুগ্রহ নেই যা আমি পরিশোধ করিনি। আমার ওপর আবু বকরের যেই অনুগ্রহ তা কেয়ামতের দিন আল্লাহ নিজেই দেবেন। কারো সম্পদ আমার এতটুকু উপকার করেনি যতটুকু আবু বকরের সম্পদের মাধ্যমে হয়েছে। আমি যদি কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম তবে অবশ্যই আবু বকরকেই গ্রহণ করতাম। (তিরমিজি: ৩৬৬১)

হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, ওমর (রা.) বলেন, আবু বকর (রা.) আমাদের সর্দার এবং সবার মাঝে সর্বোত্তম। তিনি নবীজির কাছে আমাদের সবার থেকে প্রিয় ছিলেন। (তিরমিজি: ৩৬৫৬)

মৃত্যুকালেও আবু বকরের (রা.) এই ভালোবাসার ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। বর্ণিত আছে, ‘মৃত্যুশয্যায় তিনি আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, নবীজি কোন দিন ইন্তেকাল করেছেন? আয়েশা (রা.) জানালেন, সোমবার। তিনি বলেন, আজ কী বার? জবাব দিলেন, সোমবার। তখন তিনি বলেন, হায়, যদি আমার মৃত্যু রাতের আগেই হতো! (বুখারি: ১৩৮৭)

১৩ হিজরিতে ৬২ বছর বয়সে হজরত আবু বকর (রা.) ইন্তেকাল করেন। রাসুল (স.)–এর রওজা মোবারকের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর