রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কাপড় হাঁটুর উপর উঠলে কি অজু ভেঙে যায়?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

পুরুষের কাপড় হাঁটুর উপর উঠলে কি অজু ভেঙে যায়?

ইসলামে অজু নামাজের পূর্বশর্ত, তাই এর নিয়মকানুন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরি। অনেক সময় অজু করার পর বা অজু থাকা অবস্থায় হঠাৎ অসাবধানতাবশত শরীরের কোনো অংশ, যেমন হাঁটু থেকে কাপড় সরে যায়। এ অবস্থায় অজু থাকে কি না, তা নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েন। ইসলামি শরিয়তের আলোকে এই প্রশ্নের উত্তর নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

অজু ভঙ্গের কারণসমূহ

ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট কারণে অজু নষ্ট হয়। সেগুলো হলো-

১. পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া: ১/৭)
২. শরীরে যেকোনো জায়গা থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে অজু ভেঙে যায়। (হেদায়া: ১/১০)

আরও পড়ুন: অজুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেসব দোয়া পড়বেন

৩. মুখ ভরে বমি, নাক দিয়ে রক্ত বা মজি (সহবাসের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হলে অজু ভেঙে যায়। (ইবনে মাজাহ: ১২২১)
৪. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১৩৩০)
৫. চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুমানো। (মুসনাদে আহমদ: ২৩১৫, আবু দাউদ: ২০২)
৬. পাগল, মাতাল বা অচেতন হয়ে গেলে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৪৯৩)
৭. নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে। (দারা কুতনি: ৬১২)
৮. নারীদের ইস্তেহাজার রক্ত বের হলে। ইস্তেহাজায় নামাজ-রোজার বিরতি হয় না; তবে প্রতি ওয়াক্তের শুরুতে নতুন অজু করে নিতে হয়। (মাজমাউল বাহরাইন পৃ. ৯৮; আদ্দুররুল মুখতার: ১/২৮৫)


বিজ্ঞাপন


উপরের কারণগুলোই মূলত অজু ভঙ্গের জন্য যথেষ্ট। এর বাইরে শরীরের কোনো অংশ, যেমন হাঁটু অসাবধানতাবশত অল্প সময়ের জন্য প্রকাশ পেলে তা অজু ভঙ্গের কারণ নয়।

বিখ্যাত ইসলামি স্কলারদের মতে, শরীরের কোনো অংশ দৃশ্যমান হলে তা অজু নষ্ট করে না। এ বিষয়ে ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘অজু শুধু নির্দিষ্ট কিছু কাজের মাধ্যমে ভাঙে। শরীরের কোনো অংশ খোলা হলে তা অজু ভঙ্গের কারণ নয়।’ (আল মাজমু: ২/১০০)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘কাপড় সরে যাওয়া বা শরীরের কোনো অংশ দৃশ্যমান হওয়া অজু নষ্ট করে না; বরং এটি সতর খোলা হওয়ার আলাদা বিষয়।’ (মাজমুউল ফতোয়া: ২১/২২৫)

সতর ঢাকার বিধান ও গুরুত্ব

ইসলামে সতর (শরীরের যে অংশ ঢেকে রাখা ফরজ) গোপন রাখা একটি বাধ্যতামূলক নির্দেশ।

পুরুষদের সতর: নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ সতর। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘পুরুষের সতর হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত।’ (বায়হাকি: ৩২৩৫; আবু দাউদ: ৪৯৭)

নারীদের সতর: মাহরামদের সামনে মাথা, চুল, গর্দান, কান, হাত, পা, টাখনু, চেহারা, গর্দানসংশ্লিষ্ট সিনার ওপরের অংশ ছাড়া বাকি পূর্ণ শরীর। অর্থাৎ, এর বাইরের অংশ ঢেকে রাখতেই হবে। আর গায়রে মাহরামের সামনে পূর্ণ শরীরই সতর। তবে অতীব প্রয়োজনে চেহারা, পা ও হাত খোলা জায়েজ আছে। যেমন—রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড় হলে, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া ইত্যাদি। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩২; ফতোয়ায়ে শামি: ১/৪০৬; ফতোয়ায়ে রহিমিয়া: ৪/১০৬ হেদায়া: ১/৯২)

সুতরাং, সতর ঢেকে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা অবশ্যই পালন করতে হবে।

সতর্কতা

অজুর পর যদি হঠাৎ কাপড় সরে গিয়ে হাঁটু বা অন্য কোনো সতর প্রকাশ পায়, তবে অজু নষ্ট হয় না। তবে, সতর খোলা থাকলে দ্রুত তা ঢেকে নেওয়া ফরজ। যদি অসাবধানতাবশত এমন পরিস্থিতিতে কেউ (বিশেষ করে নন-মাহরাম) দেখে ফেলে, তাহলে তা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তাই অজু অবস্থায় সতর ঢাকার বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।

মোটকথা, হাঁটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে বা শরীরের কোনো অংশ অসাবধানতাবশত প্রকাশ পেলে অজু ভাঙে না। কারণ, অজু ভঙ্গের জন্য নির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। তবে সতর ঢাকার বিধান আলাদা এবং তা অবশ্যই মানা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর