আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের বিভিন্ন দায়িত্বে নিযুক্ত করে রেখেছেন। এদের মধ্যে কিছু ফেরেশতা রয়েছেন, যারা আল্লাহর রহমত নিয়ে আবির্ভুত হন। কিন্তু কিছু কারণে তারা বাধাপ্রাপ্তন হন। হাদিস অনুযায়ী যেসব কারণে তারা বাধাপ্রাপ্ত হন, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
কাপড়-চোপড়ে বা ফার্নিচারে প্রাণীর ছবি থাকলে
প্রাণীর ছবি থাকলে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একটি বালিশ বা গদি কিনে এনেছিলাম, যার মধ্যে ছবি ছিল। যখন রাসুলুল্লাহ (স.) সেই ছবিটি দেখলেন, তিনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে গেলেন; ভেতরে প্রবেশ করলেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে তাঁর চোখে এটা অত্যন্ত অপছন্দনীয় ব্যাপার। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করছি এবং তাঁর রাসুলের কাছে ফিরে আসছি। আমি কী অন্যায় করেছি? তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, এ গদি কীসের জন্য? আমি বললাম, এটা আপনার জন্য খরিদ করে এনেছি, যাতে আপনি বসতে পারেন এবং হেলান দিতে পারেন। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, এই ছবি নির্মাতাকে কেয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে এবং বলা হবে, যা তুমি সৃষ্টি করেছ তার প্রাণ দাও এবং তিনি আরো বলেন, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সহিহ বুখারি: ৫১৮১)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ঘরে প্রাণীর ছবি থাকলে নামাজ শুদ্ধ হবে?
অপর বর্ণনায় হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জিব্রাইল (আ.) আমার কাছে এসে বলেন, গত রাতে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আমি প্রবেশ করিনি। কারণ ঘরের দরজায় ছবি ছিল। ঘরের মধ্যে ছিল ছবিযুক্ত পর্দা এবং ঘরের ভেতরে ছিল কুকুর। সুতরাং আপনি ঘরে ঝুলানো ছবির মাথা কেটে দেওয়ার আদেশ করুন, তাহলে তা গাছের আকৃতিতে পরিণত হবে। আর পর্দাটি কেটে দুটি বালিশের ভেতরের কাপড় বানাতে আদেশ করুন এবং কুকুরটিকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দিন। রাসুলুল্লাহ (সা.) উপদেশমতো কাজ করলেন। কুকুরটি ছিল হাসান বা হুসাইনের এবং তা তাদের খাটের নিচে শুয়ে ছিল, তিনি সেটাকেও বের করে দেওয়ার আদেশ দেন। ফলে তা বের করে দেওয়া হলো। (আবু দাউদ: ৪১৫৮)
কুকুর থাকলে
হজরত আবু তালতা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (স.) বলেছেন, ‘ফেরেশতা ওই ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর থাকে এবং ওই ঘরেও না, যে ঘরে ছবি থাকে।’ (সহিহ বুখারি: ৫৯৪৯)
বিজ্ঞাপন
মাথাবিহীন ছবি থাকলে সমস্যা নেই
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নিষিদ্ধ ছবি হলো- প্রাণীর মাথা ও চেহারাবিশিষ্ট ছবি, মাথাবিহীন ছবি নিষিদ্ধ নয়। (শরহু মাআনিল আসার: ৬৯৪৭)
প্রাণী ছাড়া অন্যকিছুতে সমস্যা নেই
সাঈদ ইবনু আবুল হাসান (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনে আববাস (রা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, এমন সময়ে তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে ইবনে আব্বাস! আমি এমন ব্যক্তি যে আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরি করি। ইবনে আববাস (রা.) তাঁকে বলেন, (এ বিষয়ে) আল্লাহর রাসুল (স.)-কে আমি যা বলতে শুনেছি, তা-ই তোমাকে শোনাব। তাঁকে আমি বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোনো ছবি তৈরি করে আল্লাহ তাআলা তাকে শাস্তি দেবেন, যতক্ষণ না সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে। আর সে তাতে কখনো প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। এ কথা শুনে লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। এতে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আক্ষেপ তোমার জন্য, তুমি যদি এ কাজ না-ই ছাড়তে পারো, তবে গাছপালা ও যেসব জিনিসে প্রাণ নেই, তা তৈরি করতে পারো। (বুখারি: ২২২৫)
তাই আসুন বাসস্থান ও কর্মস্থল সব জায়গাকেই রহমতের ফেরেশতার জন্য উন্মুক্ত করে রাখি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

