রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শীতের বিয়ে, ফজিলত কী

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

শীতের বিয়ে, ফজিলত কী

বিয়ে নবীজির গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। মানবজাতির স্বভাবগত পরিচ্ছন্নতা, মানসিক ভারসাম্য ও চারিত্রিক পবিত্রতার অন্যতম উপায় বিয়ে। সুন্নাহ পালন ও পাপ থেকে বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে বিয়ে করলে তা ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হয়। এজন্য ইসলামে বিয়ের যথেষ্ট গুরুত্ব ও তাৎপর্য আছে। সক্ষমতা থাকলে দ্রুত বিয়ে করা আবশ্যক।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—‘হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ (বুখারি: ৫০৬৬; মুসলিম: ১৪০০)


বিজ্ঞাপন


নির্দিষ্ট মাস বা দিনে বিয়ের বিশেষ ফজিলতের কথা কোরআন সুন্নাহয় দেখা যায় না। তাই বছরের যেকোনো মাসে, যেকোনো দিন বিয়ের দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করা জায়েজ। বিয়ের মতো কল্যাণময় কাজ বিলম্ব না করে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি করাই উচিত। যখনই সুযোগ আসবে তখনই। সেই সুযোগ যদি শীতকালে আসে, শীতকালে করাই বাঞ্ছনীয়। আসলে সামর্থ্য হওয়ার পর দ্রুত বিয়ে করাই উম্মতের প্রতি নবীজির নির্দেশ।

অনর্থক দেরি করে গুনাহের দরজা খোলা রাখা যুক্তিও সমর্থন করে না। ইসলামি শরিয়ত বলে, যেকোনো নেক আমলের ক্ষেত্রে দেরি করা অনুচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তাদের নির্ধারিত (মৃত্যুর) সময় উপস্থিত হয় তখন তারা আর এক মুহূর্তও বিলম্ব করতে পারে না এবং এর চেয়ে একটু এগিয়েও আসতে পারে না।’ (সূরা ইউনুস: ৪৯) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা এবং এমন জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও, যার প্রশস্থতা হবে আকাশসমূহ ও জমিনসম। তা মুত্তাকিদের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৩)

আরও পড়ুন: কত বছর বয়সে বিয়ে করা ‍সুন্নত

ইসলামে অবিলম্বে বিয়ের এত গুরুত্ব থাকার পরও অনেকে অর্থ-সংকটের কথিত অজুহাতে কিংবা ক্যারিয়ারের চিন্তায় বিয়ে করতে গড়িমসি করেন। অথচ এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা শরিয়তের আলোকে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা মানুষের আয়-রোজগার স্থায়ী বিষয় নয়।


বিজ্ঞাপন


হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে, ‘তিন প্রকারের মানুষকে সাহায্য করা আল্লাহ তাআলা নিজের কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ১. আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদকারী। ২. মুকাতাব গোলাম- যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে। ৩. বিয়ে করতে আগ্রহী, যে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়। (ইবনে মাজাহ: ২৫১৮)

স্বয়ং আল্লাহ তাআলার ঘোষণা- বিয়ে করলে তিনি সচ্ছল করে দেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিয়ে করিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি অভাবগ্রস্ত হয়, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সুরা নুর: ৩২)

আরও পড়ুন: যেসব অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গেও সহবাস করা হারাম

আর্থিক সামর্থ্য থাকার পরও কোনো কারণে বিয়ে করতে বিলম্ব হলে গুনাহ হবে না। তবে হ্যাঁ, যতটা সম্ভব দ্রুত বিয়ে করার চেষ্টা থাকা উচিত। কেননা বিয়ের কারণে চরিত্রকে হেফাজত করার পাশাপাশি দ্বীন-ঈমানেও পরিপক্কতা আসে। রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু: ৬১৪৮; তাবরানি: ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম: ২৭২৮)

বিয়ে সাধারণত সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কিন্তু কোনোসময় তা জরুরি হয়ে যায়। আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘বিয়ে সুন্নত না ফরজ?’ তখন তারা উত্তর দিয়েছিল- ‘বিয়ে সুন্নত, সামর্থ্যবানকে এর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে...। কিছু লোকের ক্ষেত্রে বিয়েটা ফরজ হয়ে যায়; যদি খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার ভয় করে এবং বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে। (ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা লিল বুহুসিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা, ফতোয়া নং: ৯৬২৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর যুবক-যুবতীদের যথাসময়ে বিয়ে করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর