মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দান-সদকায় মেলে মানসিক প্রশান্তি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

দান-সদকায় মেলে মানসিক প্রশান্তি

দান-সদকা বড়ই ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এর অসংখ্য পুরস্কারের কথা বর্ণিত হয়েছে কোরআন-হাদিসে। দান-সদকায় সম্পদ পবিত্র হয়। দানশীলতা মানুষকে কৃপণতা থেকে বের করে আনে; সাম্য ও একতার ভিত রচনা করে। আত্মিক উৎকর্ষ সাধনে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে দান-সদকা। এর মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়। সর্বোপরি দানশীলতা মানুষকে পাপমুক্ত করে জান্নাতের পথে পরিচালিত করে। এক মর্মস্পর্শী ভঙ্গিতে আল্লাহ তাআলা দানশীলতাকে উৎসাহিত করেছেন এভাবে— ‘এবং আল্লাহকে ঋণ দাও, উত্তম ঋণ।’ (সুরা মুজাম্মিল: ২০)

পবিত্র কোরআনের আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! আমি তোমাদের যে রিজিক দান করেছি, তা থেকে তোমরা ব্যয় করো সেই দিন আসার আগে, যেদিন কোনো ক্রয়-বিক্রয় থাকবে না, কোনো বন্ধুত্ব কাজে আসবে না এবং সুপারিশও গ্রহণযোগ্য হবে না।’ (সুরা বাকারা: ২৫৪)


বিজ্ঞাপন


গুনাহগার ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় দান-সদকা করলে আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হয়ে যায় এবং ক্ষমা লাভের পথ সুগম হয়। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সদকা আল্লাহর ক্রোধকে প্রশমিত করে।’ (তিরমিজি: ৬৬৪; ইবনে হিব্বান: ৩৩০৯)

আরও পড়ুন: আল্লাহ বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন কেন?

দান-সদকার প্রতিফল শুধু আখেরাতের জন্য সীমাবদ্ধ নয়, দুনিয়াতেও রয়েছে এর নানাবিধ উপকার। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা অধিক হারে সদকা করো। কেননা বালা-মুসিবত সদকাকে অতিক্রম করতে পারে না।’ (বায়হাকি: ৮০৮৩)

দান-সদকা গোপনে ও প্রকাশ্যে দুভাবেই করা যায়। তবে গোপনে করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-সদকা করো, তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে করো এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য অধিকতর ভালো। তিনি তোমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর তোমরা যে আমল করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।’ (সুরা বাকারা: ২৭১)


বিজ্ঞাপন


অন্যকে সাহায্য সহযোগিতা করা, বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো মুমিনের বিশেষ গুণ। প্রকৃত মুমিন এটাকে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মনে করে এবং এর মধ্যেই প্রশান্তি খুঁজে পায়। নুমান ইবনু বাশির থেকে বর্ণিত হাদিসে ‘রাসুল (স.) বলেছেন, মুমিনদের উদাহরণ তাদের পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে একটি মানবদেহের ন্যায়, যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন তার সমস্ত দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’ (মুসলিম: ৬৪৮০)

আরও পড়ুন: মুমিনদের জন্যে আল্লাহর ২৫ প্রতিশ্রুতি

আর আল্লাহ তাআলাও ওসব পরোপকারী বান্দার দুনিয়া আখেরাত কল্যাণময় করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যতক্ষণ একজন মানুষ অন্য মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবে, আল্লাহ তাআলাও তার কল্যাণে রত থাকবেন।’ (মুসলিম: ৬৭৪৬) অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান!  তুমি ব্যয় করো, আমিও তোমার প্রতি ব্যয় করব।’ (বুখারি: ৫৩৫২)

রাসুলুল্লাহ (স.) বিভিন্নভাবে দান-সদকার প্রতি উৎসাহিত করেছেন, এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করো। (বুখারি: ৬০২৩)

সবচেয়ে বড় কথা হলো- দান-সদকা নববী আদর্শ। অসহায়-গরিবদের সাহায্য করা ছিল রাসুল (স.)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হজরত খাদিজা (রা.) রাসুল (স.)-এর গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।’ (বুখারি: ৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নববী আদর্শ ধারণ করার তাওফিক দান করুন। বেশি বেশি দান-সদকা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর