অফিস আদালত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয়, আঞ্চলিক, বৈদেশিক প্রতিটি বিভাগে যোগ্যতার ভিত্তিতে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দেয় ইসলাম। কারণ, অযোগ্য ব্যক্তির ভুল নেতৃত্বে সবাইকে ভুগতে হয়, সমাজে অন্ধকার নেমে আসে। অযোগ্য ব্যক্তির দায়িত্ব গ্রহণকে কেয়ামতের আলামত বলে অভিহিত করেছেন মহানবী (স.)।
এক হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদিন নবীজি (স.) কিছু লোকের এক মজলিসে হাদিস বয়ান করছিলেন, এমন সময় এক বেদুঈন এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করল, কেয়ামত কখন হবে? আল্লাহর রাসুল (স.) বয়ান করতেই থাকলেন। বয়ান শেষ করে তিনি বললেন, কেয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি বলল, এই যে আমি, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি (রাসুল স.) বললেন, যখন আমানত নষ্ট করা হবে, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করো। লোকটি বলল, আমানত কীভাবে নষ্ট হবে? তিনি (নবীজি) বললেন, যখন কোনো অযোগ্য লোকের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে, তখন কেয়ামতের অপেক্ষা করো। (বুখারি: ৬৪৯৬)
বিজ্ঞাপন
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, অচিরেই লোকদের ওপর প্রতারণা ও ধোঁকাবাজির যুগ আসবে। তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী গণ্য করা হবে, আমানতের খেয়ানতকারীকে আমানতদার, আমানতদারকে খেয়ানতকারী গণ্য করা হবে এবং রুওয়াইবিয়া হবে বক্তা। জিজ্ঞাসা করা হলো, রুওয়াইবিয়া কী? তিনি বলেন, নীচ প্রকৃতির লোক, সে জনগণের হর্তাকর্তা হবে। (ইবনে মাজাহ: ৪০৩৬)
আরও পড়ুন: ষড়যন্ত্রকারীদের কেমন শাস্তি দিতে বলে ইসলাম
তাই দায়িত্ব দিতে হবে যোগ্যতার ভিত্তিতে। নবীজির হাদিস অনুযায়ী, নেতৃত্বের যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য বিশেষ কিছু গুণ থাকা জরুরি। যেমন- সচ্চরিত্রবান হওয়া, সত্যবাদী হওয়া, জনদরদি হওয়া, ন্যায়পরায়ণ হওয়া, জ্ঞানী ও শিক্ষিত হওয়া, স্বেচ্ছাচারী না হওয়া, সুবিচার করার যোগ্যতা রাখা ও প্রতিশোধপরায়ণ না হওয়া।
ইসলামের দৃষ্টিতে কেউ নিজ থেকে দায়িত্ব চাইলেই সে অযোগ্য বিবেচিত হবে। তাই তাকে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, দুই ব্যক্তি রাসুল (স.)-এর কাছে দায়িত্ব চাইলে তিনি তাদের বললেন, আল্লাহর কসম, আমরা এমন কাউকে কর্মকর্তা নিযুক্ত করব না, যে দায়িত্ব চায় এবং এমন ব্যক্তিকেও নয়, যে দায়িত্ব লাভের আকাঙ্ক্ষা করে।’ (বুখারি: ৬৬২২)
বিজ্ঞাপন
হজরত আবদুর রহমান ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, প্রিয়নবী (স.) আমাকে বলেছেন, ‘হে আবদুর রহমান, দায়িত্ব ও ক্ষমতা চেয়ে নিয়ো না। কারণ যদি তোমার চাওয়ার কারণে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে তো তোমাকে নিঃসঙ্গ ছেড়ে দেওয়া হবে (তুমি আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবে)। পক্ষান্তরে যদি না চাইতেই দায়িত্ব ও ক্ষমতা তোমার ওপর অর্পিত হয়, তাহলে তুমি ওই বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে।’ (বুখারি: ৬৬২২)
আরও পড়ুন: ৬ ক্ষেত্রে গিবত জায়েজ
মূলত দায়িত্ব হলো আমানত। এই আমনতে রক্ষা করা অযোগ্য ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা সে জানেই না, আমানত কী এবং কোন আমানতের হকদার কে। অথচ মহান আল্লাহর নির্দেশ- ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতগুলো প্রাপকদের কাছে পৌঁছে দাও।’ (সুরা নিসা: ৫৮) নবীজি (স.) বলেন, ‘যে আমানত রক্ষা করে না তার ঈমানের দাবি যথাযথ নয় এবং যে অঙ্গীকার পূরণ করে না তার দ্বীন যথাযথ নয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৩১৯৯)
তাই দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষমতা যাদের রয়েছে, তারা দেখে শুনে যাচাই করে পদ অনুযায়ী যোগ্য লোককে দায়িত্ব দেবেন—এটাই কাম্য। অন্যথায় আল্লাহ তাআলার এই ঘোষণা মনে রাখতে হবে- ‘আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই এবং কর্মবিধানে আল্লাহই যথেষ্ট। হে মানুষ! তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের অপসারিত করতে এবং অপরকে আনতে পারেন, আল্লাহ এটা করতে পুরোপুরি সক্ষম।’ (সুরা নিসা: ১৩২-১৩৩)

