রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

রহস্যময় সৃষ্টি আকাশ, জ্ঞানীদের চিন্তার খোরাক 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২২, ০১:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

রহস্যময় সৃষ্টি আকাশ, জ্ঞানীদের চিন্তার খোরাক 

মহান আল্লাহর অজস্র সৃষ্টির মধ্যে এক রহস্যময় সৃষ্টির নাম আকাশ। সুনিপুণ আকাশের দিকে তাকালে, একটু চিন্তা করলে মনের গহিনে প্রশ্ন উঁকি দেয়, কে সেই কারিগর? যে এ খুঁটিহীন বিশাল আকাশকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন? আল্লাহ তাআলা সে বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন এভাবে—

‘আর আমি নির্মাণ করেছি তোমাদের উপরে সুদৃঢ় সাত আকাশ। আর সৃষ্টি করেছি প্রোজ্জ্বল প্রদীপ। বর্ষণ করেছি পানিপূর্ণ মেঘমালা হতে প্রচুর পানি, যা দিয়ে উদগত করি শস্য, উদ্ভিদ এবং ঘন সন্নিবিষ্ট উদ্যানসমূহ। (সুরা নাবা: ১২-১৬)

আকাশের রহস্যের শেষ কোথায় তা আল্লাহই ভালো জানেন। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এ সপ্তস্তর বা সাত আকাশের পুরুত্ব ও দূরত্ব নিয়ে কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের ধারণা, এ সপ্তাকাশের প্রথম স্তরের পুরুত্ব আনুমানিক ৬.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। দ্বিতীয় আকাশের ব্যাস ১৩০ হাজার আলোকবর্ষ, তৃতীয় স্তরের বিস্তার ২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। চতুর্থ স্তরের ব্যাস ১০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। পঞ্চম স্তরটি ১ বিলিয়ন আলোকবর্ষের দূরত্বে, ষষ্ঠ স্তরটি অবস্থিত ২০ বিলিয়ন আলোকবর্ষের আর সপ্তম স্তরটি বিস্তৃত হয়ে আছে অসীম দূরত্ব পর্যন্ত। 

কত সময় অযথা নষ্ট হয়, অথচ একটু সময় করে আল্লাহ তাআলার এ সুনিপুণ আকাশ নিয়ে ভাবে না বান্দা। তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে?’ (সুরা আল গাশিয়াহ: ১৮)। ‘আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি, অথচ তারা আমার আকাশের নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।’ (সুরা আম্বিয়া: ৩২)। 

জ্ঞানীদের উচিত আকাশের নান্দনিকতা, সুনিপুণ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এবং এর সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। যা মহান রবের পরিচয় জানতে, সৃষ্টির উদ্দেশ্য জানতে, সর্বোপরি মহান রবের অনুগত বান্দা হতে সাহায্য করবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্যে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোজখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।”(সুরা আল ইমরান: ১৯০-১৯১)

শুধু রহস্য নয়, আকাশের অনন্য সৌন্দর্যেও মুগ্ধ হতে হয়। সেই সৌন্দর্যের বিমুগ্ধতায় প্রশান্ত হয় চিত্ত। আকাশের রূপ-রহস্য আর সৌন্দর্য অসীম। দিনে এক রকম, রাতে রূপ পাল্টিয়ে আরেক রকম সৌন্দর্য। এর পরতে পরতে যে রয়েছে কোনো এক মহান কারিগরের অসংখ্য নিদর্শন। 


বিজ্ঞাপন


আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা কি দেখে না তাদের মাথার উপরে আকাশের দিকে, কিভাবে তাকে নির্মাণ করেছি এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছি এবং তাতে নেই কোনো ফাটল’ (সুরা ক্বাফ: ৫০/৬)

সারা পৃথিবীতে পানি বিতরণ করার এক অসাধারণ ব্যবস্থা হচ্ছে মেঘ। মেঘের মাধ্যমে সমুদ্র থেকে কোটি কোটি টন পানি হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বন, জঙ্গল, মরুভূমি, শস্য ক্ষেতে পানি চলে যায়। মেঘের স্তর পৃথিবী থেকে মহাকাশে তাপ হারিয়ে যাওয়া আটকে রাখে, পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী আরামদায়ক তাপমাত্রায় রাখে। একইসঙ্গে মেঘের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা উষ্ণ থাকে। আবার মেঘের স্তর সূর্যের প্রখর আলো থেকে রক্ষা করে, মাটি অতি উত্তপ্ত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। মেঘ আছে দেখেই সারা পৃথিবী এখনো সূর্যের তাপে শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যায়নি। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তুমি যদি তাদেরকে প্রশ্ন করো, ‘কে আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা জমিনকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করেন? তবে তারা অবশ্যই বলবে- ‘আল্লাহ’। (হে রাসুল! আপনি) বলুন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য’। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বুঝে না।’ (সুরা আনকাবুত: ৬৩)

‘তবে কি তারা লক্ষ্য করে না উটের প্রতি, কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আকাশের প্রতি, কীভাবে তাকে উঁচু করা হয়েছে এবং পাহাড়সমূহের প্রতি, কীভাবে তাকে প্রথিত করা হয়েছে এবং ভূমির প্রতি, কীভাবে তা বিছানো হয়েছে’ (সুরা গাশিয়া ১৭-২০)। এভাবেই আল কোরআনে গবেষণা ও চিন্তার চর্চার কথা বলা হয়েছে। ভাবনা, উপলব্ধি ও ইন্দ্রিয়শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সৃষ্টির রহস্য উদঘাটনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

তাই রহস্যময় সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা এবং সেই মহান রবের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা আমাদের উচিত। আসুন, যে আকাশে মহান আল্লাহ প্রত্যেক রাতের শেষভাগে হাজির হয়ে বান্দাকে ডাকেন, সেই আকাশের মালিকের ডাকে সাড়া দিই। আল্লাহ হেদায়েত দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর