শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হাদিসের আলোকে কথা কম বলার উপকার

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

হাদিসের আলোকে কথা কম বলার উপকার

অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ (বুখারি: ৬০১৮; মুসলিম: ১৮২) হজরত আবু মুসা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! সর্বোত্তম মুসলিম কে?’ তিনি বললেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে। (বুখারি: ১১, মুসলিম: ১৭২)

লাগামহীন কথাবার্তা ঝগড়াঝাটিসহ নানা বিপদ ও দুর্ভোগের কারণ। যত কম কথা বলা যায় ততই কল্যাণকর। ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘যে নীরবতা অবলম্বন করে সে মুক্তি পায়। (তিরমিজি: ২৪৮৫) মনে রাখতে হবে, মুখ দিয়ে বের হওয়া কথাটা সওয়াবের হবে, নতুবা গুনাহের। সুতরাং হয় ভালো কথা বলা, না হয় চুপ থাকাই উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লিপিবদ্ধ করার কাজে সচেতন পাহারাদার (ফেরেশতা) তার নিকটে রয়েছে।’ (সুরা কাহাফ: ১৮)


বিজ্ঞাপন


আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতের ওপর ঈমান আনে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতের ওপর ঈমান আনে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং আখিরাতের ওপর ঈমান আনে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরবতা অবলম্বন করে।’ (বুখারি: ৬১২০)

আরও পড়ুন: ভালো মানুষের সংস্পর্শে থাকার উপকার

মহানবী (স.)-এর অন্যতম গুণ হচ্ছে, প্রয়োজন ছাড়া তিনি কথা বলতেন না। দীর্ঘক্ষণ নীরব থাকতেন। একদা সিমাক (রহ.) জাবের ইবনে সামুরা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি রাসুল (স.)-এর সাহচর্যে ছিলেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ। রাসুল (স.) অধিকাংশ সময় নীরব থাকতেন। খুব কম হাসতেন..।’ (আহমদ: ৬৩০৮ )

আবু আবদুর রহমান বিলাল ইবনে হারেস মুজানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মানুষ আল্লাহ তাআলার সন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য সন্তুষ্টি লিখে দেন। পক্ষান্তরে মানুষ আল্লাহ তাআলার অসন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য অসন্তুষ্টি লিখে দেন। (মালিক: ২৬৫; আহমদ: ১৫৮৫২; তিরমিজি: ২৩১৯; ইবনে মাজাহ: ৩৯৬৯; ইবনে হিব্বান: ২৮০; সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৮৮৮)


বিজ্ঞাপন


সাহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (গুপ্তাঙ্গের হেফজত) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেবো।’ (বুখারি: ৬৪৭৪; (তিরমিজি: ২৪০৯)

আরও পড়ুন: সবসময় ইস্তেগফার করার উপকার

অন্যদিকে, জিহ্বার অপব্যবহারের ফলে অনেক অপরাধ ও গুনাহর দ্বার খুলে যায়। গালমন্দ, গিবত, পরনিন্দা ও মিথ্যা—সবই জিহ্বার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। হাদিস অনুযায়ী, এসব জাহান্নামের পথকে সুগম করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা রাসুল (স.)-কে প্রশ্ন করা হলো, ‘কোন কাজটি বেশি পরিমাণে মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, আল্লাহভীতি, ভালো আচরণ ও উত্তম চরিত্র। রাসুল (স.)-কে আবার প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজ বেশি পরিমাণে মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন মুখ ও লজ্জাস্থান।’ (তিরমিজি: ২০০৪)

শারীরিক, আর্থিক এবং শরীর-অর্থ উভয়টি মিলিয়ে ইবাদত করার নিয়ম। কিন্তু নীরবতাও যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, এটি অনেকেই উপলব্ধি করে না। অথচ, এই ইবাদতটি করতে কোনো পরিশ্রমেরও প্রয়োজন হয় না। এ বিষয়টির গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করা মুসলমানদের জন্য বাঞ্ছনীয়। দুনিয়াবি জীবনেও লজ্জাজনক পরিস্থিতির মোকাবেলায় চুপ থাকা একটি উত্তম প্রতিষেধক। এ বিষয়ে ওমর (রা.)-এর একটি প্রসিদ্ধ বাণী স্মরণীয়—‘চুপ থাকার কারণে আমি কখনো লজ্জায় পড়িনি। তবে কথা বলার কারণে আমি অনেকবার লজ্জিত হয়েছি।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নীরবে সওয়াব লাভের এই পন্থাটি সুন্নত অনুসরণের নিয়তে ব্যবহারের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর