ঈমান ছাড়া কোনো আমলের মূল্য পরকালে নেই। জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রথম শর্ত হলোই ঈমান। সেই ঈমানের দৃঢ়তা অনেক বড় বিষয়। এর গুরুত্ব সবাই বুঝতে পারে না। যার ঈমান যত বিশুদ্ধ, মজবুত ও পরিপূর্ণ হবে ইবাদত-বন্দেগি, লেনদেন, চলাফেরা, আচার-ব্যবহার, স্বভাব-চরিত্র তত সুন্দর ও সমৃদ্ধ হবে।
দৃঢ় ঈমান মুমিনের সফলতার সোপান। মুমিন মাত্রই বিশ্বাসে, কথায় ও কর্মে দৃঢ়চেতা বা অবিচল হবেন। সুফিয়ান বিন আব্দুল্লাহ সাকাফি (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে এমন কথা বলে দিন, আপনার পরে আর কাউকে যেন জিজ্ঞেস করতে না হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘বলো- “আমি আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম”, অতঃপর এর ওপর দৃঢ় থাকো।’ (আহমদ: ১৫৪৫৪; মুসলিম: ৩৮, ঈমান অধ্যায়)
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তাঁর নবীকে নির্দেশ দেন, ‘অতএব তুমি যেভাবে আদিষ্ট হয়েছ, সেভাবে সুদৃঢ় থাকো এবং সেসব লোকেরাও যারা (কুফুরি হতে) তওবা করে তোমার সঙ্গে রয়েছে; আর সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় তিনি তোমাদের কার্যকলাপ সম্যকভাবে প্রত্যক্ষ করেন।’ (সুরা হুদ: ১১২)
আরও পড়ুন: ইসলামে যে তিন কাজ বৈধ কিন্তু নিন্দনীয়
সাহাবায়ে কেরাম দৃঢ় ঈমানের অধিকারী ছিলেন। তাঁদের অন্তরে ঈমান গেঁথে গিয়েছিল। ঈমান ও কুফর, তাওহিদ ও শিরক প্রশ্নে তাঁরা কখনো আপস করেননি। সর্বদা ঈমানকে বুকে আগলে রেখেছেন। ঈমানের জন্য জান-মাল বিসর্জন দিয়েছেন। সাহাবিদের ঈমান সম্পর্কে বিশিষ্ট সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, ‘তাঁদের অন্তরে ঈমান পাহাড়ের চেয়েও দৃঢ় ছিল।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক: ২০৬৭১)
আসলে সাহাবায়ে কেরাম ঈমানের স্বাদ পেয়েছিলেন। ঈমানের স্বাদ লাভের যাবতীয় উপকরণ তাঁদের মধ্যে বিরাজমান ছিল। আর ঈমানের স্বাদ অর্জিত হয়ে গেলে কোনো কষ্ট আর কষ্ট মনে হয় না। নবীজি (স.) বলেছেন, যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের স্বাদ পাবে- ১. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সবথেকে প্রিয় হওয়া। ২. কাউকে শুধু আল্লাহর জন্য মহব্বত করা। ৩. কুফরের দিকে প্রত্যাবর্তন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত ঘৃণ্য হওয়া। (সহিহ বুখারি: ১৬)
বিজ্ঞাপন
ফেরেশতারা দৃঢ় ঈমানদারদের বন্ধু হয়ে যান। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। অতঃপর তাতে অবিচল থাকে, তাদের প্রতি ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না ও চিন্তিত হয়ো না। আর তোমরা প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ করো’। ‘ইহকাল ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু। আর সেখানে তোমরা যা আকাঙ্ক্ষা করবে, তাই তোমাদের হবে, যা চাইবে তা-ই পাবে।’ (সুরা হা মিম সাজদাহ: ৩০-৩১)
আরও পড়ুন: ৮ গুরুতর হারাম কাজে মানুষের অবাধ বিচরণ
এর ব্যাখ্যা হলো- তুমি শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করো, অন্যকে শরিক করো না। আর আল্লাহর বিধানসমূহ মেনে চলার ব্যাপারে দৃঢ় থাকো। দুনিয়াবি স্বার্থের সঙ্গে আপস করো না। তাই আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘তবে কি তারা জাহেলিয়াতের বিচার-ফায়সালা কামনা করে? অথচ দৃঢ় বিশ্বাসীদের নিকট আল্লাহর চাইতে উত্তম ফায়সালাকারী আর কে আছে?’ (সুরা মায়েদা: ৫০)
দৃঢ়তা বা স্থিরতার আরবি প্রতিশব্দ হলো ইস্তেকামাত। দ্বীন ইসলামের দাবি হচ্ছে- এর ওপর দৃঢ় থাকা—এজন্যই আল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বীনকে মুস্তাকিম বলেছেন। যার অর্থ সরল ও সুদৃঢ় পথ। অর্থাৎ এই দ্বীন ভঙ্গুর নয়, পরিবর্তনশীল নয়, যা কারো অনুগামী নয়, বরং তার অনুসারী হতে হবে সবাইকে। যা যুগের হাওয়ায় পরিবর্তন হয় না। এই দ্বীনে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করার সুযোগ নেই। সুখে-দুখে সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর খুশি ও তাঁর ওপরই ভরসা করে তাঁরই আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর এটিই আমার সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করো। অন্যান্য পথের অনুসরণ করো না। তাহলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। এসব বিষয় তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা (ভ্রান্ত পথ থেকে) বেঁচে থাকতে পারো।’ (সুরা আনআম: ১৫৩)
অতএব, দ্বীনের ওপর দৃঢ়তা ছাড়া প্রকৃত সফলতা অর্জন হবে না। বিশ্বাসের মধ্যে ইখলাস না থাকলে, অবিচলতা না থাকলে কথা ও কাজ কোনোটাই আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। ফলে ওসব ব্যক্তি ইহকাল ও পরকালে ব্যর্থ হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানের ওপর, দ্বীনে ইসলামের ওপর দৃঢ় থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।