সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কোরআন না বুঝলে প্রকৃত জ্ঞান লাভ হয় না

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০৭:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

কোরআনের মর্ম বোঝা ছাড়া প্রকৃত জ্ঞান অর্জন অসম্ভব

পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর কালাম। এই কালাম নাজিলের একটি উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর নিদর্শনাবলী নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনার কাছে নাজিল করা আমার এই বরকতময় কিতাব এজন্য যে, যেন তারা ভাবনা-চিন্তা করে এবং জ্ঞানীরা এখান থেকে উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা সোয়াদ: ২৯) 

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন, তাতে পাহাড় ও নদ-নদী সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে প্রত্যেক প্রকার ফল জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। তিনি দিনকে রাতের চাদরে আবৃত করেন। নিশ্চয়ই এসব বিষয়ের মধ্যে সেসব লোকের জন্য নিদর্শন আছে, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সুরা রাদ: ৩)


বিজ্ঞাপন


বোঝাই যাচ্ছে, যারা পবিত্র কোরআন থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করে না, তারা প্রকৃত জ্ঞানী নয়। মহানবী (স.) পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জ্ঞানী। তিনি কোরআনের প্রত্যেকটা আয়াত নিয়ে চিন্তা করতেন। একটি আয়াতের পেছনে সারারাতও কাটিয়ে দিয়েছেন। আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) ভোর পর্যন্ত একটি আয়াত দিয়েই নামাজ আদায় করলেন। আর সে আয়াতখানা হলো, অর্থ: ‘আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই বান্দা। আর আপনি যদি তাদের ক্ষমা করেন তবে আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা মায়েদা: ১১৮; সুনানে নাসায়ি: ১০১০)

আরও পড়ুন: প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত

মর্ম নিয়ে চিন্তা করা কোরআন তেলাওয়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব। এজন্যই ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞরা ধীরেধীরে কোরআন তেলাওয়াতের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিন দিনের কম সময়ে কোরআন খতম করা অনুচিত। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তিন দিনের কম সময়ে যে কোরআন খতম করবে, সে কোরআন বুঝবে না।’ (আবু দাউদ: ১৩৯৬)

জায়েদ বিন সাবেত (রা.)-কে একজন জিজ্ঞেস করলেন, সাত দিনে কোরআন খতম করাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন? তিনি বলেন, এটা ভালো। অবশ্য আমি এটাকে ১৫ দিনে বা ১০ দিনে খতম করাই পছন্দ করি। আমাকে জিজ্ঞেস করো, তা কেন? তিনি বলেন, আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি। জায়েদ বলেন, যাতে আমি তার স্থানে স্থানে চিন্তা করতে পারি এবং থামতে পারি।’ (মুয়াত্তা মালেক: ৪৭২)


বিজ্ঞাপন


মানুষ যখন আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করবে তখন তার মাঝে আল্লাহর বড়ত্ব ও আল্লাহর অসীম ক্ষমতা নিয়ে বুঝ তৈরি হবে। কোরআনের বহুমুখী আলো বান্দার হৃদয়জগতে বিকশিত হবে। মনোজগৎ হবে দীপ্তিমান। ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী!) তাদের বলুন, লক্ষ করে দেখ, আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে কী কী জিনিস আছে? কিন্তু যেসব লোক ঈমান আনার নয়, (আসমান ও জমিনে বিরাজমান) নিদর্শনাবলী ও সতর্ককারী (নবী) তাদের কোনো কাজে আসে না।’ (সুরা ইউনুস: ১০১)

আরও পড়ুন: নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পড়ার পুরস্কার

ইসলামের মৌলিক বিষয়, যেগুলো না বুঝলেই নয়, যেমন তাওহিদ, রিসালত ও আখেরাত ইত্যাদি অত্যন্ত সহজ ও বোধগম্য ভাষায় আল্লাহ তাআলা উপস্থাপন করেছেন। যাতে বান্দা আল্লাহকে চিনতে পারে, মহান আল্লাহর ভয় হৃদয়ে ধারণ করে সুপথে চলতে পারে। কোরআন না বুঝলে আল্লাহকে চেনা যাবে না, আল্লাহর ভয়ও তৈরি হবে না। তাই তো প্রকৃত জ্ঞানীরা আল্লাহর ভয় নিয়ে জীবন পরিচালনা করে। 

ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারাই কেবল তাকে ভয় করে; নিশ্চয় আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (সুরা ফাতির: ২৮) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘আমি এই কোরআনকে উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করেছি। আছে কি কোনো শিক্ষা গ্রহণকারী?’ (সুরা কামার: ২২)

যারা কোরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না তাদের জন্য ভর্ত্সনা, তিরস্কার, নিন্দা ও ধমক এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি কোরআন সম্পর্কে চিন্তা করে না, নাকি অন্তরে লেগে আছে তার (সংশ্লিষ্ট) তালা? (সুরা মুহাম্মাদ: ২৪)

তবে, আল্লাহর সত্তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা নিষেধ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর নিয়ামতরাজি নিয়ে চিন্তা-গবেষণা কর, তবে আল্লাহ তাআলার সত্তাকে নিয়ে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করো না।’ (তাবারানি: ৬৩১৯) মানুষ যদি আল্লাহ তালাকে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে তাহলে মানুষ এর কূলকিনারা খুঁজে পাবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা মানুষের চিন্তা-ভাবনা থেকে বহু গুণে অনেক অনেক ঊর্ধ্বে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর (আল্লাহর) মতো কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা এবং তিনি সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা আশ-শুরা: ১১)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর