দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুলের মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো; আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’ (সুরা মুমিন: ৬০) সালমান (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, দোয়া ব্যতীত কোনোকিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং সৎকাজ ব্যতীত কোনো কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না। (তিরমিজি: ২১৩৯)
তাই আমরা দোয়া থেকে বিমুখ হতে পারি না। সকল প্রয়োজনে একমাত্র আল্লাহরই সাহায্য চাইব। আর যে বান্দা একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চায়, তাকে আল্লাহ তাআলা না দিয়ে পারেন না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মহান প্রভু চিরঞ্জীব ও অতি দয়ালু। যখন তাঁর কোনো বান্দা তাঁর প্রতি হাত উঠায়, তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৩২০)
বিজ্ঞাপন
দোয়া কবুলের আদব ও উত্তম পদ্ধতি হলো— প্রথমে অজু করা, এরপর দু’রাকাত নামাজ পড়া। অতঃপর হামদ ও দরুদ পড়া। এরপর নিজের প্রয়োজন আল্লাহর কাছে তুলে ধরা। এ প্রসঙ্গে নবীজি (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তোমাদের কারো আল্লাহর কাছে বা কোনো আদম সন্তানের কাছে কোনো কিছুর প্রয়োজন হয়, সে যেন ভালো করে অজু করে এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর রাসুলের প্রতি দরুদ পাঠশেষে এই দোয়া পড়ে। (সুনানে তিরমিজি: ৪৭৯, ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)
আরও পড়ুন: মা-বাবার জন্য যে দোয়া করলে ১৯০ কোটি নেকি লাভ হবে
সুতরাং নিম্নবর্ণিত আমলগুলোর পর দোয়া করলে তা কবুলের উপযুক্ত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমলগুলোর গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিচে তুলে ধরা হলো।
অজু ও দু’রাকাত নামাজ
পরিপূর্ণ অজু ও দু’রাকাত নফল নামাজ এমনিতেই অনেক মর্যাদাপূর্ণ আমল। হজরত বেলাল (রা.) এই আমলের কারণেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) জান্নাতে বেলাল (রা.)-এর জুতার আওয়াজ শুনে এর রহস্য জানার জন্য একদিন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তুমি বিশেষ কী আমল করো, যার কারণে জান্নাতে তোমার পায়চারির শব্দ শুনলাম? জবাবে বেলাল (রা.) বলেছিলেন, আমার তো আশা করার মতো তেমন কোনো আমল নেই ইয়া রাসুলুল্লাহ (স.), তবে যখনই আমি অজু করেছি, সাধ্যমতো সে অজু দিয়ে (তাহিয়্যাতুল অজুর) নামাজ পড়েছি। আরেক হাদিসে এসেছে, ‘যে সুন্দর করে অজু করে এবং অজুর পর মনোযোগ দিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে; তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম: ২৩৪)
বিজ্ঞাপন
সুতরাং দোয়ার আগে এমন মর্যাদাপূর্ণ আমলের কারণে যেকোনো দোয়া কবুলের উপযোগী হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনেও বিপদ-মসিবত, অসুস্থতাসহ যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে নামাজ ও সবরের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছন- ‘হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সুরা বাকারা: ১৫৩)
আরও পড়ুন: রাতে ঘুম ভেঙে গেলে সেই মুহূর্তে যে দোয়া পড়লে কবুল হবেই
আল্লাহ তাআলার প্রশংসা
আমরা আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করি, কারণ তিনি প্রশংসার যোগ্য। তিনি রাজাদের রাজা, তিনি আমাদের পালনকর্তা, রক্ষাকারী, নিরাময়দাতা, দয়ালু, রিজিকদাতা, মুক্তিদাতাসহও অনেক কিছু। তাই বান্দাদের জন্য আল্লাহর প্রশংসা আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ। আর আল্লাহ তাআলা অনুগতদের জন্য ক্ষমাপরায়ণ ও সহনশীল। ইরশাদ হয়েছে, ‘সাত আসমান ও জমিন এবং এগুলোর অন্তর্বর্তী সবকিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্ৰশংস পবিত্ৰতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা বুঝতে পার না; নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৪৪)
দরুদ পাঠ
দোয়া কবুলের জন্য দোয়ার আগে দরুদ পড়তে বলেছেন প্রিয়নবী (স.)। ফাজালা ইবনে উবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) এক লোককে নামাজে প্রার্থনা করতে শুনলেন। সে কিন্তু তাতে আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী কারিম (স.)-এর ওপর দরুদও পড়েনি। এটা দেখে রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘লোকটি তাড়াহুড়ো করল। অতঃপর তিনি তাকে ডাকলেন ও তাকে অথবা অন্য কাউকে বললেন, যখন কেউ দোয়া করবে, তখন সে যেন তার পবিত্র প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনাযোগে ও আমার প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করে দোয়া আরম্ভ করে, তারপর যা ইচ্ছা (যথারীতি) প্রার্থনা করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৮১; তিরমিজি: ৩৪৭৬)
দোয়ার ভেতরে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
দোয়ার আগে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথ সম্পাদন করা দোয়া কবুলে সহায়ক। এছাড়াও দোয়া করার সময় কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন- আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস রেখে দোয়া করা, অনুনয়-বিনয়ের মাধ্যমে দোয়া করা, শব্দ না করে গোপনে দোয়া করা, তাড়াহুড়ো না করে দোয়া করা ইত্যাদি দোয়া কবুলের মাসনুন উপায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সব আদব মেনে একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

