সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা গুরুতর অপরাধ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা গুরুতর অপরাধ

রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা প্রত্যেক মুমিনের ঈমানি দায়িত্ব। কেননা এটি পবিত্র আমানত। রাষ্ট্রীয় সম্পদে দেশের সব মানুষের হক আছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) কসম করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই (রাষ্ট্রীয়) সম্পদে কেউ কারো চেয়ে বেশি হকদার নয়। আমিও কারো চেয়ে বেশি হকদার নই। এই সম্পদে সব মুসলমানের অধিকার আছে, তবে মালিকানাধীন দাস ছাড়া।’ (আল ফাতহুর রব্বানি, পৃষ্ঠা-৮৭)

তাই রাষ্ট্রীয় সম্পদ গ্রাস করা মানে দেশের সব মানুষের হক মেরে দেওয়া। আর মানুষের হক খাওয়া কঠিন গুনাহের কাজ। বরং যার যার হক যথাযথ পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমানতগুলো হকদারদের কাছে পৌছে দিতে।’ (সুরা নিসা: ৫৮)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার আহ্বান সমন্বয়কদের

পরকালে আত্মসাৎকারীর পরিণতি হবে খুবই ভয়াবহ। যে যা আত্মসাৎ করবে, তা-ই নিয়ে কেয়ামতের ময়দানে উপস্থিত হতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো নবীর জন্য শোভনীয় নয় যে তিনি খেয়ানত করবেন। আর যে ব্যক্তি খেয়ানত করবে সে কেয়ামতের দিন সেই খেয়ানত করা বস্তু নিয়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর প্রত্যেকেই পরিপূর্ণভাবে পাবে যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৬১)

রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যয়ের দায়িত্বে দক্ষ ও সৎ প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর বর্ণনা থেকে এর একটি ধারণা লাভ করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমি কি তোমাকে আমার ও এদের দৃষ্টান্ত সম্পর্কে বলব? আমাদের দৃষ্টান্ত হলো এমন একটি যাত্রীদলের মতো, যারা তাদের সম্পদ একত্র করে এবং তাদের একজনের হাতে অর্পণ করে যে প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করবে। এখন সেই ব্যক্তির জন্য কি বৈধ হবে কাউকে অগ্রাধিকার দেওয়া?’ (মানাকিবু আমিরিল মুমিনিনা ওমর ইবনুল খাত্তাব, পৃষ্ঠা-১০২)

আরও পড়ুন: ‘হাদিয়া’ নিয়ে জাহান্নামে যাচ্ছেন না তো?


বিজ্ঞাপন


কোনো ব্যক্তি তার সামাজিক বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সামান্য সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করলেও তা ইসলামি আইনে অপরাধ বলে গণ্য হবে। কেননা, এর ফলে রাষ্ট্র যেমন যোগ্য কর্মী ও প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে, তেমনি একজন যোগ্য ব্যক্তি তার প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এক্ষেত্রে নবীযুগের একটি ঘটনা দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করা যেতে পারে— আবু হুমায়দ সাঈদ (রা.) বলেন, নবী (স.) আজদ গোত্রের ইবনে উতবিয়া নামের এক ব্যক্তিকে সদকা সংগ্রহের কাজে নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, এগুলো আপনাদের, আর এগুলো আমাকে হাদিয়া দেওয়া হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (স.) (এ কথা শুনে) বলেন, সে তার বাবার ঘরে কিংবা তার মায়ের ঘরে বসে থাকল না কেন। তখন সে দেখতে পেত, তাকে কেউ হাদিয়া দেয় কি না। যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার কসম, সদকার মাল থেকে স্বল্প পরিমাণও যে আত্মসাৎ করবে, সে তা কাঁধে করে কেয়ামতের দিন উপস্থিত হবে। সেটা উট হলে তার আওয়াজ করবে, আর গাভি হলে হাম্বা হাম্বা করবে আর বকরি হলে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতে থাকবে। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর দুই হাত এই পরিমাণ ওঠালেন যে আমরা তাঁর দুই বগলের শুভ্রতা দেখতে পেলাম। তিনি তিনবার বলেন, হে আল্লাহ, আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ, আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? (বুখারি: ২৫৯৭)

আরও পড়ুন: মুসলিম হয়েও জান্নাতে যাবেন না যারা

উল্লিখিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার কারণেই কোনো ব্যক্তিকে উপহার দেওয়া হলে, তা প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক। 

অন্যথায় পরিণতি হবে খুব খারাপ। হাদিসের বর্ণনানুযায়ী, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারীদের চূড়ান্ত পরিণতি জাহান্নাম। মহানবী (স.) বলেন, ‘কিছু মানুষ আল্লাহর দেওয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, কেয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।’ (সহিহ বুখারি: ৩১১৮) অন্য হাদিসে এসেছে, মাকিল ইবনু ইয়াসার (রা.) বলেন, আমি নবী কারিম (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যার প্রতি আল্লাহ কোনো দায়িত্ব অর্পণ করেন, অতঃপর সে সুষ্ঠুভাবে তা পালন করে না, সে জান্নাতের গন্ধ পাবে না।’ (বুখারি: ৭১৫০)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর