ঐতিহাসিক অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী পবিত্র আশুরা। আরবি ‘আশারা’ থেকে আশুরা শব্দটি এসেছে। এর অর্থ দশম। মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। এই দিনকে ঘিরে অনেক কুসংস্কার, বিশ্বাস ও আমলের চর্চা রয়েছে মুসলিম সমাজে; যার অধিকাংশই ভিত্তিহীন। সুন্নাহর সমর্থন রয়েছে—এমন তিনটি আমল নিচে তুলে ধরা হলো, যেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন করলে অনেক সওয়াব লাভ হবে ইনশাআল্লাহ।
১. রোজা রাখা
আশুরার দিনে রোজা রাখা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তবে, আশুরার দিনের আগে-পরে মিলিয়ে দুইটি রোজা রাখা মোস্তাহাব। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (স.) আমাদের (রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে) আশুরার রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। আর এ বিষয়ে তিনি নিয়মিত আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজার ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না, নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না।’ (মুসলিম: ১১২৮)
বিজ্ঞাপন
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (স.) আশুরা ও রমজানের রোজা সম্পর্কে যেরূপ গুরুত্বারোপ করতেন, অন্য কোনো রোজা সম্পর্কে তাঁকে সেরূপ গুরুত্ব প্রদান করতে দেখিনি।’ (সহিহ বুখারি: ২০০৬, মুসলিম: ১১৩২)
আরও পড়ুন: আশুরার দিনে কেবল ২ ঘটনা প্রমাণিত
২. পরিবারের জন্য ভালো খাবারের আয়োজন
আশুরার দিনের আরেকটি আমল হলো, এই দিনে পরিবারবর্গের জন্য যথাসাধ্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা। হজরত আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (স.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি আশুরার দিনে পরিবারে প্রশস্ততা প্রদর্শন করবে, সে সারাবছর প্রশস্ততায় থাকবে।’ (তাবরানি, মুজামে কবির: ১০০০৭; বায়হাকি: ৩৭৯৫)
এ হাদিসের বর্ণনা সূত্রে দুর্বলতা আছে। তবে ইবনে হিব্বানের মতে, এটি ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের হাদিস। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর দাবি, রিজিকে প্রশস্ততার ব্যাপারে কোনো হাদিস নেই। এটি ধারণাপ্রসূত। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেছেন, এটি বিশুদ্ধ হাদিস নয়। তবে এ বিষয়ে একাধিক বর্ণনা থাকার কারণে ‘হাসান’ হওয়া অস্বীকার করা যাবে না। আর ‘হাসান লিগাইরিহি’ পর্যায়ের হাদিস দ্বারা আমল করা যায়। (আস-সওয়াইকুল মুহরিকা আলা আহলির রফজি ওয়াদ দালাল ওয়াজ জানদিকা: ২/৫৩৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: পবিত্র আশুরা ১৭ জুলাই
৩. নবী পরিবারের জন্য দোয়া
আশুরার দিন আরেকটি আমল যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত। আর তা হলো- আহলে বাইত তথা নবীর পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করা, দরুদ পড়া এবং তাঁদের কাছ থেকে সত্যের ওপর অটল থাকার শিক্ষা গ্রহণ করা।
এই তিনটি কাজ ছাড়া আশুরায় অন্যকোনো আমলে সুন্নাহর সমর্থন নেই। স্মরণ রাখতে হবে, কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনাই আশুরার একমাত্র ও আসল প্রেরণার উৎস নয়। বরং আশুরার দিনে কারবালার ঘটনাটি যুক্ত হয়েছে নবীজির ওফাতের ৫০ বছর পরে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, জাহেলি যুগে মক্কার কুরাইশ বংশের লোকেরা আশুরার রোজা রাখত এবং রাসুল (স.)-ও আশুরার রোজা রাখতেন। (সহিহ মুসলিম: ২৬৩২)
কাজেই আশুরার সুমহান ঐতিহ্যকে ‘কারবালা দিবসে’র ফ্রেমে বন্দি করা কখনোই উচিত নয়। আর কারবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদআতে লিপ্ত হওয়া মুসলিম উম্মাহর জন্য শোভনীয় নয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

