পৃথিবীর সব জাতি ও সম্প্রদায় কোনো না কোনোভাবে আল্লাহর দরবারে প্রিয়বস্তু উৎসর্গ করত। উদ্দেশ্য একটাই- আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানির এক বিশেষ রীতি পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা ওই সব পশুর ওপর আল্লাহর নাম নিতে পারে, যা আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন।’ (সুরা হজ: ৩৪)
হজরত ইবরাহিম (আ.) প্রাণপ্রিয় শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)-ও আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিজে জবাই হওয়ার জন্য বাবার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে (ইসমাইল আ.) বলল, ‘পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা পালন করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’ (সুরা সাফফাত: ১০২)
বিজ্ঞাপন
আল্লাহর জন্য কোরবানি করা হলেও জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়াকে আল্লাহ তাআলা কারো জন্য অবৈধ করেননি। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোরবানিদাতা গোশত খেতে পারে না। এখানে সেরকম তিনটি ক্ষেত্র তুলে ধরা হলো। যেই অবস্থায় কোরবানির গোশত খাওয়া কোরবানিদাতা ও তার পরিবারের সদস্যদের জন্য বৈধ নয়, বরং সব গোশতই সদকা করে দিতে হবে।
১. কোরবানির জন্য ক্রয়কৃত পশু যথাসময়ের পরে জবাই করলে তথা নির্দিষ্ট তিনদিনের (জিলহজের ১০, ১১, ১২ তারিখের) পরে জবাই করলে সেই গোশত নিজে রেখে দিতে পারবে না। বরং সব গোশতই সদকা করে দিতে হবে। আর জবাই না করলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। একইভাবে কেউ অজ্ঞতা বা অবহেলাবশত ওয়াজিব কোরবানি না দিলে তার ওপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৪; ৪/২০২; ফতোয়ায়ে কাজিখান: ৩/৩৪৫; আদ্দুররুল মুখতার: ৬/৩২০-৩২১)
২. গরিবদের দান করার উদ্দেশ্যে মান্নতের কোরবানি করে থাকেন অনেকে। এই গোশতও কোরবানিদাতা খেতে পারবে না, বরং সব গোশত সদকা করে দেওয়া জরুরি। (আহসানুল ফতোয়া: ৭/৫২৫-৫২৮)
৩. মৃত ব্যক্তির ওসিয়ত পূরণে কোরবানি করলে এবং তার রেখে যাওয়া এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে কোরবানি করলে সেই গোশত নিজেরা খেতে পারবে না, বরং পুরোটাই সদকা করে দিতে হবে। (ফতোয়ায়ে খানিয়া: ৩/৩৫২; খুলাসাতুল ফতোয়া: ৪/৩২২; ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া, পৃ. ৯০; ফতোয়ায়ে বাজজাজিয়া: ৩/২৯৫; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৩৫)
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরবানির যাবতীয় মাসায়েল জানার ও মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

