কোরবানি ইসলামি শরিয়তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে কারো কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। টাকাপয়সা, সোনা-রুপা, অলংকার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে লাগে না এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাব কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
স্বর্ণের নেসাব সাড়ে সাত তোলা; রুপার নেসাব সাড়ে ৫২ তোলা। টাকাপয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নেসাব হলো- সবকিছুর মূল্য সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। সুতরাং প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর একত্র মূল্যের পরিমাণ সাড়ে ৫২ ভরি রুপার মূল্যের সমান হলে কোরবানি ওয়াজিব হবে।
বিজ্ঞাপন
জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ সময়ে পরিবারের একাধিক সদস্য যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন, তাদের প্রত্যেকের ওপর আলাদাভাবে কোরবানি ওয়াজিব। স্বামীর কোরবানির মাধ্যমে স্ত্রীর ওয়াজিব কোরবানি আদায় হবে না। তাই স্ত্রীকেও আলাদা কোরবানি করতে হবে। (হেদায়া: ৪/৪৪৩; খুলাসাতুল ফতোয়া: ৪/৩০৯; বাহরুর রায়েক: ৯/৩১৮)
আরও পড়ুন: এ বছর কত টাকা থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হবে?
আপনার ফরজ নামাজ অন্যকেউ পড়লে যেমন আপনারটা আদায় হবে না, তদ্রূপ আপনার ওয়াজিব কোরবানি ততক্ষণ আদায় হবে না, যতক্ষণ নিজেও কোরবানি করছেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, কোনো ব্যক্তি কারও বোঝা নিজে বহন করবে না। (সুরা নাজম: ৩৮)
দুঃখজনকভাবে আমাদের সমাজের একটি চিত্র হলো- পরিবারের একাধিক সদস্য নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও শুধু কর্তার নামেই কোরবানি করা হয়। এটি ভুল পদ্ধতি। এতে সবার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হবে না।
বিজ্ঞাপন
হ্যাঁ, এমন হতে পারে যে, যৌথ পরিবারে যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তারা প্রত্যেকে মিলে একটি কোরবানির পশু কিনল এবং এতে সবাই অংশ নিল। তাতে বাহ্যিকভাবে গরু একটি হলেও যেহেতু প্রতিজনের ভাগেই অন্তত এক ভাগ পড়ছে, তাই সবার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হয়ে যাবে।
অথবা কোরবানির পশু কিনল একজন। আর বাকিদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে উক্ত কোরবানি বাকিদের পক্ষ থেকে কোরবানি করে দিলে সবার কোরবানি আদায় হবে। বাকিদের জানিয়ে তাদের অনুমতিক্রমে তাদের পক্ষ থেকে কোরবানির নিয়তে জবাই না করলে বাকিদের কোরবানি আদায় হবে না।
এভাবে শরিয়তের নিয়ম মেনে কোরবানি করা জরুরি। কোনোভাবেই যেন এমন না হয় যে, ওয়াজিব বিধান লঙ্ঘন করে বসে আছেন। নবীজি বলেছেন, যার কোরবানির সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৩৫১৯; আত তারগিব: ২/১৫৫)

