শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

ফজরের জামাত চলাকালীন সুন্নত পড়ার বিধান

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ফজরের জামাত চলাকালীন সুন্নত পড়ার বিধান

ফরজ নামাজ চলা অবস্থায় সাধারণত জামাতে শরিক হওয়াই নিয়ম। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ صَلاَةَ إِلاَّ الْمَكْتُوبَةُ ‘সালাতের ইকামত দেওয়া হলে ফরজ সালাত ছাড়া অন্যকোনো সালাতের নিয়ত করা যাবে না। (সহিহ মুসলিম: ১৫২৯; সুনানে তিরমিজি: ৪২১) 

তবে, ফজরের নামাজের ক্ষেত্রে এ নিয়মটি ব্যতিক্রম। ফজরের জামাতের ইকামত শুরু হলেও সুন্নত নামাজের নিয়ত করা যাবে। সুন্নতশেষে জামাতে শরিক হওয়া যাবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- لا تدعوا ركعتي الفجر وإن طردتكم الخيل ‘তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দিও না, যদিও সৈন্যবাহিনী তোমাদের তাড়া দেয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ৯২৫৩) 


বিজ্ঞাপন


বিখ্যাত সাহাবিরা ফজরের এই সুন্নত ছেড়ে দিতেন না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আবু দারদা (রা.)-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবিরা ফজরের জামাত শুরু হলেও ফজরের সুন্নত পড়ে নিতেন। যেমন আবু দারদা (রা.)-এর বিষয়ে বলা হয়েছে, ফজরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে লোকজনকে ফজরের জামাতে কাতারবদ্ধ পেলে মসজিদের এক কোণে (ফজরের) সুন্নত পড়তেন। অতপর মানুষের সাথে জামাতে শরিক হতেন। (শরহু মাআনিল আছার, তহাবি: ১/২৫৬) 

সুতরাং ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সাথে দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায় তাহলে সুন্নত পড়ে নেবেন। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বেন না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবেন এবং সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে নেবেন। কোনো কোনো ফকিহ ইমামকে তাশাহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আগে সুন্নত পড়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ফকিহর অভিমত হলো- দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সুন্নত পড়বেন।

আরও পড়ুন: ‘আমিন’ মনে মনে বলা জায়েজ?

আবু মিজলায (রহ.) বলেন আমি ফজর নামাজে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদে এমন সময় প্রবেশ করলাম যে ইমাম নামাজ পড়াচ্ছিলেন, তখন ইবনে আব্বাস (রা.) দু’রাকাত সুন্নত পড়ে ইমামের সঙ্গে শরিক হলেন। আর ইবনে ওমর (রা.) ইমামের সঙ্গে নামাজে শরিক হয়ে গেলেন। ইমাম সালাম ফেরানোর পর তিনি সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকলেন অতপর উঠে দুরাকাত নামাজ আদায় করলেন। (শরহু মাআনিল আসার, ১/২৫৫)


বিজ্ঞাপন


ফরজ নামাজের মতো ফজরের সুন্নতও কাজা পড়তে বলেছেন নবীজি
ফজরের সুন্নত নামাজ সুন্নতে মোয়াক্কাদা। সকল সুন্নতের চেয়ে এর গুরুত্ব বেশি হওয়ায় ফজরের নামাজ কাজা হলে তা সুন্নতসহ পড়ার তাগিদ দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ (স.)। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) পড়তে পারে না, সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর পড়ে নেয়।’ (তিরমিজি: ৪২৩) আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা কিছু রয়েছে, তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম: ৭২৫)

ফজরের সুন্নত নামাজের কাজা আদায়ের নিয়ম
ফিকহের কিতাবে রয়েছে, ছুটে যাওয়া ফজরের নামাজ যদি ওইদিন জোহরের ওয়াক্ত শুর হওয়ার পূর্বেই কাজা করা হয়, তাহলে দুই রাকাত দুই রাকাত করে মোট চার রাকাত পড়তে হবে। আর যদি জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাওয়ার পর কাজা করা হয়, তাহলে শুধু দুই রাকাত ফরজ পড়তে হবে; সুন্নত পড়ার দরকার নেই। (সূত্র: সুনানে তিরমিজি: ৪২৩; আল-মাবসুত, সারাখসি: ১/১৬১)

আরও পড়ুন: স্যান্ডো গেঞ্জি পরে নামাজ শুদ্ধ হবে?

সূর্যোদয়ের আগে ফজরের সুন্নত পড়া যাবে না
ফজরের জামাতে শরিক হওয়ার কারণে সুন্নত মিস হলে তা সূর্য ওঠার আগে পড়া মাকরুহে তাহরিমি। হাদিসে এ সময় নফল বা সুন্নত পড়তে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত আছে যে- نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَنْ صَلاَتَيْنِ: بَعْدَ الفَجْرِ حَتَّى تَطْلُعَ الشّمْسُ، وَبَعْدَ العَصْرِ حَتّى تَغْرُبَ الشّمْسُ ‘রাসুলুল্লাহ (স.) দুই সময় নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন। ফজরের পর সূর্য ওঠা পর্যন্ত এবং আছরের পর সূর্য ডোবা পর্যন্ত। (সহিহ বুখারি: ৫৮৮; সহিহ মুসলিম: ৮২৫)

অন্য হাদিসে নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন, مَنْ لَمْ يُصَلِّ رَكْعَتَيِ الفَجْرِ فَلْيُصَلِّهِمَا بَعْدَ مَا تَطْلُعُ الشّمْسُ ‘যে ব্যক্তি ফজরের দুই রাকাত সুন্নত (সময়মতো) পড়েনি সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নেয়। (জামে তিরমিজি: ৪২৩; মুসতাদরাকে হাকেম: ১০৫৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের ব্যাপারে বিশেষ করে ফজরের ব্যাপারে আরও বেশি সজাগ ও সচেতন হওয়ার তাওফিক দান করুন। সহিহ সুন্নাহ অনুযায়ী নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর