পবিত্র রমজান মাসের শেষ জুমার দিনটি আমাদের সমাজে জুমাতুল বিদা বা শেষ জুমা নামে পরিচিত। যদিও পরিভাষাটি কোরআন বা হাদিসের নয়। এই দিনের বিশেষ ফজিলতের বর্ণনাও কোরআন-হাদিসের কোথাও পাওয়া যায় না। তবে দুটি কারণে এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তা হলো— ১. মাহে রমজানের বরকতের কারণে ২. জুমার দিনের বিশেষ ফজিলতের কারণে।
মাহে রমজানের মাহাত্ম্য
মাহে রমজান মহিমান্বিত এক মাস। এই মাস সীমাহীন ফজিলতের। এটি উম্মতে মোহাম্মদির জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ উপহার স্বরূপ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রব বলেছেন, বনি আদমের প্রত্যেকটি নেক-আমলের সওয়াব দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত দেওয়া হয় শুধু রোজা ছাড়া। কেননা রোজা শুধুই আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো। আর নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বারের চেয়েও বেশি প্রিয়। তোমাদের কারো রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ তার সঙ্গে জাহেলের মতো আচরণ করে তাহলে সে বলে দেবে, আমি একজন রোজাদার। (সহিহ বুখারি: ৫৯২৭; সহিহ মুসলিম: ১১৫১, মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা: ৮৮৯৪; মুসনাদে আহমাদ: ৯৭১৪)
বিজ্ঞাপন
জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব
সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমাবার। জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সূর্যদয়ের মাধ্যমে যে দিনগুলো হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। আর এদিনের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান নামাজরত অবস্থায় দোয়া করলে অবশ্যই তার দোয়া কবুল করা হয়। (সুনানে তিরমিজি: ৪৯১)
আরও পড়ুন: রমজানের বিদায়লগ্নে অধিকহারে পড়ুন এই ৫ দোয়া
রমজান মাসে রোজা অবস্থায় জুমার দিনের নিশ্চিত দোয়া কবুলের শেষ সুযোগ হিসেবে জুমাতুল বিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জুমার দিনে দোয়া কবুল সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্ত তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো।’ (আবু দাউদ: ১০৪৮)
রমজানের শেষ জুমায় করণীয়
জুমার দিনের আদব ও সুন্নতের রক্ষণাবেক্ষণই হলো এই দিনের করণীয়। যেমন- ১. ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া ২. উত্তম পোশাক পরা ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা ৪. হেঁটে মসজিদে যাওয়া ৫. আগেভাগে মসজিদে প্রবেশ করা ৬. কাউকে কষ্ট না দেওয়া ৭. ইমামের পাশাপাশি বসার চেষ্টা করা ৮. মনোযোগসহ খুতব শোনা ৯. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা ১০. সুরা কাহাফ পাঠ করা ১১. অনর্থক কাজ ও কথা থেকে বিরত থাকা।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: কেয়ামতের দিন জুমা আদায়কারীর বিশেষ সম্মান
হজরত আওস ইবনে আওস আস-সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিনে ভালো করে গোসল করবে এবং আগে আগে পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং ইমামের কাছাকাছি বসে খুৎবা মনোযোগ সহকারে শুনবে আর কোনো রকম অনর্থক কাজ করবে না তাকে তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে লাগাতার এক বছর নামাজ ও রোজার সওয়াব দান করা হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১০৮৭, সুনানে আবু দাউদ: ৩৪৫, সুনানুল কুবরা: ১৭০৩, সুনানে নাসায়ি: ১৩৮৪, মুসনাদে আহমদ: ১৬১৭৬, সহিহ ইবনে হিব্বান: ২৭৮১)
সালমান ফারসি (রা.) বর্ণিত হাদিসে মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে ভালোরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, নিজের ঘরের তেল, সুগন্ধি ব্যবহার করে বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁকা জায়গা না রেখে তার নির্ধারিত নামাজ আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেয়ার সময় চুপ থাকে তাহলে তার জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৮৩৯)

