মহিমান্বিত রমজান মাস শেষ হতে আর অল্প ক’দিন বাকি। বরকতময় মাসের বিদায়লগ্নে মুমিনের প্রধান লক্ষ্য থাকবে—অবশিষ্ট সময়ের একটি মুহূর্তও যেন নষ্ট না হয়। সুতরাং এই সময়ে ইবাদত-বন্দেগিতে লেগে থাকতে হবে। একইসঙ্গে সগিরা গুনাহগুলো থেকেও দূরে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও কিছু দোয়া বেশি বেশি করা উচিত। সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
১. গুনাহ মাফের দোয়া
পবিত্র রমজানে হয়ে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে এই দোয়া করা—رَبَّنَا اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَوۡمَ یَقُوۡمُ الۡحِسَابُ উচ্চারণ ‘রব্বানাগফির লী ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়ালিল মু’মিনীনা ইয়াওমা ইয়াকূমুল হিসাব।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব! আমাকে, আমার মাতা-পিতাকে এবং সব ঈমানদারকে আপনি সেই দিন ক্ষমা করে দিন, যেদিন হিসাব কায়েম করা হবে।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১) অথবা এই দোয়া করা—اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি: ৩৫১৩)
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও কোরআন-হাদিসে বর্ণিত ক্ষমা প্রার্থনার সব দোয়া করা যাবে। বিশেষ করে শেষরাতের দোয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেষরাতে আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের ফরিয়াদ শোনেন। হাদিসে এসেছে— ‘আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব! আর কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব!’ (সহিহ বুখারি: ১১৪৫, মুসলিম: ৭৫৮)
২. সফল হওয়ার দোয়া
পার্থিব ও পরকালীন জীবনের সাফল্য বান্দার প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করে না; বরং আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের ওপর নির্ভর করে। তাই মুমিন রমজানের শেষভাগে প্রার্থনা করবে যেন কল্যাণের পথে তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকে। সে দোয়া করবে—رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ هَدَیۡتَنَا وَ هَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡوَهَّابُ ‘হে আমাদের প্রতিপালক, সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবে না এবং তোমার কাছ থেকে আমাদের করুণা দান করো। নিশ্চয়ই তুমি মহাদাতা।’ (সুরা আলে ইমরান: ৮)
আল্লার অনুগ্রহ চেয়ে এই দোয়াও পড়া যাবে— رَبِّ أَوْزِعْنِىٓ أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِىٓ أَنْعَمْتَ عَلَىَّ وَعَلٰى وٰلِدَىَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صٰلِحًا تَرْضٰىهُ وَأَدْخِلْنِى بِرَحْمَتِكَ فِى عِبَادِكَ الصّٰلِحِينَ উচ্চারণ: ‘রাব্বি আওঝি’নি আন আশকুরা নি’মাতাকাল্লাতি আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়ালিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সালেহান তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফী ইবাদিকাস সালিহিন।’ অর্থ: ‘হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য আমাকে তোমার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দাও। আর আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো’। (সুরা নামল: ১৯)
বিজ্ঞাপন
৩. তাকওয়া অবলম্বনের দোয়া
রমজানের শেষভাগে মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির জীবন যাপনের অঙ্গীকার করবে এবং দোয়া করবে। কেননা তাকওয়া অর্জন রোজা পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩) তাকওয়া অর্জনে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে এই দোয়া করবে—اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকাল হুদা ওয়াত-তুকা ওয়াল আফা-ফা ওয়াল গিনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, সুস্থতা ও সম্পদ প্রার্থনা করছি।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৪৮৯)
৪. চারিত্রিক উন্নয়নের দোয়া
চারিত্রিক উন্নয়ন ও নৈতিক জীবন লাভ রমজানের রোজা পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই ব্যক্তি রমজানের শেষভাগে নৈতিক ও সংযত জীবন যাপনের দোয়া করা করবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি: ১৯০৩)
রমজানের বিদায়লগ্নে মুমিন চারিত্রিক উন্নতির জন্য এই দোয়া করবে— اللهم اهدني لاحسن الاعمال وأحسن الاخلاق لا يهدي لاحسنها إلا أنت وقني سئ الاعمال وسئ الاخلاق لا يقي سيئها إلا أنت অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সৎকাজ ও উত্তম চরিত্রের দিকে হেদায়াত দান করো। তুমি ছাড়া কেউ এমন নেই যে, সৎকাজ ও উত্তম চরিত্রের দিকে হেদায়াত দান করবে। তুমি আমাকে অসৎ চরিত্র ও বদ আমল হতে বাঁচিয়ে রাখো। তুমি ছাড়া অসৎ চরিত্র ও বদ আমল হতে বাঁচিয়ে রাখার কেউ। (সুনানুল কুবরা: ১/৩১২)।
৫. গুনাহমুক্ত জীবন লাভের দোয়া
রমজানের শেষপ্রান্তে এসে বান্দা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার এই দোয়া করবে— اللَّهُمَّ اغْسِلْ قَلْبِي بِمَاءِ الثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّ قَلْبِي مِنَ الْخَطَايَا، كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَبَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমার অন্তরকে বরফ ও শীতল পানি দিয়ে ধৌত করুন। আর আমার অন্তর গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দিন, যেভাবে আপনি শুভ্র বস্ত্রের ময়লা পরিষ্কার করে থাকেন এবং আমাকে আমার গুনাহ থেকে এতটা দূরে সরিয়ে রাখুন, পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তকে পশ্চিম প্রান্ত থেকে যত দূরে রেখেছেন।’ (বুখারি : ৬৩৭৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদের রোজাগুলো কবুল করুন। রমজানের সকল নেক আমল কবুল করুন। আমাদের গুনাহ মাফ করে দিন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজান থেকে শিক্ষা নিয়ে বাকি জীবন সুন্দরভাবে পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

