পবিত্র রমজানের ২৩তম দিন শেষ হলো আজ। রাতে এশার নামাজের পর পড়া হবে ২৪তম তারাবি। রমজান মাসের অন্যতম আমল হলো কোরআনুল কারিম খতমের মাধ্যমে তারাবি নামাজ আদায়। ইসলামি ফাউন্ডেশন নির্ধারিত ২৪তম তারাবিতে দেশের প্রায় সব মসজিদে আজ পড়া হবে সুরা জারিয়াত ৩১ আয়াত থেকে সুরা হাদিদ ২৯ আয়াত পর্যন্ত। পারা হিসেবে আজ পড়া হবে ২৭তম পারা।
চলুন একনজরে দেখে নিই- আজকের খতম তারাবিতে কী তেলাওয়াত করা হবে।
বিজ্ঞাপন
সুরা জারিয়াত, আয়াত ৩১-৬০
ফেরাউন সম্প্রদায়, আদ ও সামুদ জাতি এবং হজরত নুহ ও লুত (আ.) এর সম্প্রদায়ের কী পরিণতি হয়েছিল তা তুলে ধরা হয়েছে। এরপর আসমান-জমিন সৃষ্টির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। তারপর জ্বিন ও মানবজাতি সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যক্ত করতে গিয়ে বলা হয়েছে, তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদত করার জন্য। প্রত্যেকের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলার ওপর। তবে যারা কুফর ও শিরকে লিপ্ত হবে, অচিরেই তাদের ওপর অবধারিত আজাব নেমে আসবে।
সুরা তুর, আয়াত ১-৪৯
জাহান্নামের ভয়াবহতা এবং জান্নাতে মুত্তাকিদের পুরস্কার সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। রাসুল (স.)-এর দাওয়াতের বিপরীতে মুশরিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের এসব আচরণে দমে না গিয়ে রাসুল (স.)-কে দাওয়াতের কাজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২৩তম তারাবিতে যা পড়া হবে
সুরা নাজম, আয়াত ১-৬২
রাসুল (স.) এর সত্যবাদিতা এবং মেরাজের বিবরণ রয়েছে। তারপর যারা মূর্তিপূজা করে, ফেরেশতাদের আল্লাহর কন্যা সাব্যস্ত করে তাদের নিন্দা করা হয়েছে। এরপর কেয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে সব কিছুর চূড়ান্ত ফায়সালা হবে। তারপর বলা হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকেই নিজ কৃতকর্মের জিম্মাদার। কারো গুনাহের বোঝা অপরের কাঁধে চাপানো হবে না। সবশেষে আল্লাহর তাআলার কুদরত সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সুরা কামার, আয়াত ১-৫৫
বলা হয়েছে কেয়ামত অতি সন্নিকটে। তারপর রাসূল (সা.) এর বিশেষ মুজেজা অর্থাৎ হাতের ইশারায় চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এরপর আল্লাহর আজাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিভিন্ন জাতির আলোচনার পর বারবার প্রশ্ন করা হয়েছে ‘বল, কেমন ছিল আমার সাজা-শাস্তি!’ এ প্রশ্ন করার পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘উপদেশ গ্রহণ করার জন্য আমি কোরআন শরিফ সহজ করে দিয়েছি, সুতরাং আছে কি কোনো উপদেশগ্রহীতা?’ মুত্তাকিদের উত্তম পরিণতি, আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্তি এবং সম্মানজনক আবাসস্থল লাভের সুসংবাদ শোনানো হয়েছে।
সুরা আর-রহমান, আয়াত ১-৭৮
পুরো সুরায় দুনিয়া-আখেরাতের বিভিন্ন নেয়ামতের বিবরণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচয়ে বড় নেয়ামত হলো পবিত্র কোরআন। জাগতিক কোনো নেয়ামতের সঙ্গে এর তুলনা হতে পারে না। দুনিয়া-আখেরাতের নেয়ামতরাজির বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা মোট ৩১ বার প্রশ্ন করেছেন, ‘অতএব তোমরা তোমাদের রবের কোন কোন নেয়ামত আস্বীকার করবে?’ আরো বলা হয়েছে তোমার প্রতিপালকের নাম খুবই বরকতময়, তিনি মহান এবং মহিমাময়। আহলে ইলম এবং জ্ঞানীজনরা বলেন, এখানে ‘নাম’ দ্বারা সূরার সূচনায় উল্লেখিত ‘রহমান’ নামটিই উদ্দেশ্য।
আরও পড়ুন: ২২তম তারাবিতে যা পড়া হবে
সুরা ওয়াকেয়া, আয়াত ১-৭৪
কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময়ের বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। জান্নাতের বিভিন্ন নেয়ামত সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে। এরপর আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ববাদ এবং পূর্ণ কুদরত ও ক্ষমতার প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে এবং পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। তারপর পবিত্র কোরআনের মাহাত্ম্যের বিবরণ রয়েছে।
সুরা ওয়াকেয়া, আয়াত ৭৫-৯৬
বিশেষ নৈকট্যপ্রাপ্ত জান্নাতি, সাধারণ জান্নাতি এবং কাফের কেয়ামতের দিনের এই তিন শ্রেণির মানুষের অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। শেষের দিকে ডানদিকের মানুষের ব্যাপারে বলা হয়েছে- তাকে বলা হবে তোমাকে সালাম যেহেতু তুমি ডান দিকের একজন। কিন্তু সে যদি হয় মিথ্যারোপকারী বিভ্রান্তদের একজন, তার আপ্যায়ন হবে অতি উষ্ণ পানি এবং দহন জাহান্নামের।
সুরা হাদিদ, আয়াত ১-২৯
বলা হয়েছে মহাবিশ্বে যা কিছু আছে সব কিছু আল্লাহর। তিনি সবকিছুর স্রষ্টা ও মালিক। সৃষ্টির সবকিছুই তার প্রশংসা করে। এরপর হাশরের মাঠে মুনাফিকদের কী করুণ পরিণতি হবে সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এরপর আল্লাহ তাআলা মানুষের সামনে দুনিয়ার হকিকত তুলে ধরেছেন, যেন মানুষ দুনিয়ার বাহ্যিক মোহ ও সৌন্দর্য দেখে ধোঁকায় না পড়ে। তারপর যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং রাসুলের প্রতি ঈমান রাখে তাদের জন্য দ্বিগুণ প্রতিদান এবং পথচলার নুর ও আলোর সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।