ইসলাম সহজাত, জীবনঘনিষ্ঠ ও স্বভাবজাত ধর্ম। অসুস্থের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে ইসলাম। শরিয়তের অনুমোদনসাপেক্ষে চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করা যায়। তবে এর রয়েছে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন। নিয়মের বাইরে গিয়ে ইচ্ছামতো চেয়ারে বসে নামাজ পড়লে হবে না। নিচে এ সংক্রান্ত জরুরি বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।
১. দাঁড়াতে ও সেজদা করতে সক্ষম ব্যক্তির জন্য নামাজে দাঁড়ানো ফরজ। দাঁড়াতে বা সেজদা আদায়ে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও যদি কেউ ফরজ-ওয়াজিব নামাজ বসে আদায় করে, নামাজের ফরজ ছেড়ে দেওয়ার কারণে তার নামাজ হবে না। নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। (দুররুল মুখতার, জাকারিয়া বুক ডিপো: ২/১৩২)
বিজ্ঞাপন
২. সেজদা করতে সক্ষম ব্যক্তি যদি নামাজের কিছু অংশে দাঁড়াতে সক্ষম হয় এবং পুরো সময় দাঁড়িয়ে থাকতে অপারগ থাকে, তবে যেটুকু সময় দাঁড়াতে পারবে, তা লাঠি বা দেয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে হলেও সেটুকু দাঁড়ানো ফরজ। এ অবস্থায় যদি না দাঁড়ায় এবং কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে দাঁড়ানোর পরিবর্তে বসেই নামাজ আদায় করে, তাহলে নামাজ হবে না। (দুররুল মুখতার: ২/২৬৭)
৩. কেউ যদি দাঁড়াতে সক্ষম থাকে, কিন্তু রুকু-সেজদা কিংবা শুধু সেজদা করতে সক্ষম না হয়, তার জন্য বসে নামাজ আদায় করা জায়েজ। সে ইশারার মাধ্যমে রুকু-সেজদা করবে। এক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে ইশারার মাধ্যমে নামাজ আদায় করার চেয়ে বসে ইশারায় নামাজ আদায় করা উত্তম। (দুররুল মুখতার: ২/৫৬৭, ফতোয়ায়ে আলমগিরি: ১/১৩৬)
আরও পড়ুন: সেজদায় জমিন থেকে পা উঠে গেলে নামাজ হবে কি?
৪. কিছু অক্ষমতা এমন, যে কারণে দাঁড়ানোর আবশ্যকতা রহিত হয়ে যায়। তা সাধারণত দুই প্রকার: ১) হাকিকি বা মৌলিক অর্থাৎ এমন অক্ষম, যে দাঁড়াতে পারে না। ২) হুকমি বা বিধানগত অর্থাৎ সে এমন অক্ষম নয় যে দাঁড়াতে পারে না, কিন্তু দাঁড়াতে গেলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে—এমন দুর্বলতা শরিয়তের দৃষ্টিতে অক্ষমতা বলে বিবেচিত। যেমন- কিছু অসুস্থতার ব্যাপারে অভিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তাররা পরামর্শ দেন যে, দাঁড়ালে রোগ বৃদ্ধি পাবে অথবা সুস্থতা ফিরে আসতে বিলম্ব হবে কিংবা অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হবে—এসব অবস্থায় বসে নামাজ আদায় করা জায়েজ। (দুররুল মুখতার মাআ রদ্দুল মুহতার: ২/৫৬৫)
বিজ্ঞাপন
যেক্ষেত্রে চেয়ারে বসে ইশারার মাধ্যমে নামাজ আদায় করার অনুমতি রয়েছে, সেক্ষেত্রে সেজদার সময় ইশারার ওপরই ক্ষান্ত হওয়া উচিত। উল্লিখিত দীর্ঘ আলোচনার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ:
এক. যে ব্যক্তি দাঁড়াতে সক্ষম নয়, কিন্তু যেকোনোভাবে মাটিতে বসে রুকু-সেজদা করে নামাজ আদায় করতে পারে, তাকে মাটিতে বসেই রুকু-সেজদা করতে হবে। তার জন্য জায়েজ হবে না চেয়ার ইত্যাদিতে বসে ইশারায় রুকু-সেজদা করে নামাজ আদায় করা।
আরও পড়ুন: বিতিরে দোয়া কুনুত না পড়লে নামাজ হবে?
দুই. আর কেউ যদি দাঁড়াতে পারে, কিন্তু কোমর বা হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ায় সেজদা করার শক্তি না রাখে অথবা সে মাটিতে বসতে পারে, কিন্তু রুকু-সেজদার শক্তি রাখে না, এমন লোক মাটিতে বসে নামাজ আদায় করবে। চেয়ার ইত্যাদির ব্যবহার তাদের জন্য উচিত নয়। হ্যাঁ, যদি কোনোভাবেই মাটিতে বসা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে, তখন চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করা যেতে পারে। এ অবস্থায় চেয়ার ব্যবহার করলেও সাদামাটা চেয়ার ব্যবহার করবে। আসলে অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থাভেদে চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ের হুকুম বিভিন্নরকম হয়।
লক্ষণীয় যে, বর্তমানে সামান্য অসুস্থতা, সামান্য দুর্বলতা, হালকা ব্যথা-বেদনার অজুহাতে চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। তারা উপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ করে দেখুন, নামাজ হচ্ছে কি না। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে সর্বোচ্চ সতর্ক ও যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। অসুস্থতাজনিত মাসায়েল জানা, বুঝা ও আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

