ঈদ বিশ্বমুসলিমের জন্য আনন্দের দিন। এই দিনের জন্য কেনাকাটার অজুহাতে অনেকে রমজানের শেষ দশকের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়টির অপব্যবহার করেন। বেহুদা খরচের বন্যা বইয়ে দেন। ইবাদতে গাফেল হয়ে পড়েন। পাশাপাশি পর্দার বিধান লঙ্ঘন করেন। অথচ ঈদকে কেন্দ্র করে এমনসব আচরণের সঙ্গে দ্বীন ও শরিয়তের কোনো সম্পর্ক নেই।
ঈদের দিনের চাহিদাই হলো- উত্তমরূপে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া, উত্তম পোশাক পরিধান করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা ইত্যাদি। মূলত এসবই সুন্নত। এর বাইরে অন্যকিছুর প্রয়োজন নেই। কিন্তু দেখা যায়, আর্থিক সচ্ছলতা থাকুক বা না থাকুক, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য নিত্যনতুন ডিজাইন ও ফ্যাশনেবল পরিধেয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করতে যেকোনো উপায় গ্রহণ করছে মানুষ।
বিজ্ঞাপন
এসবের পেছনে প্রথমত নষ্ট হচ্ছে রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো। শপিংয়ের ব্যস্ততায় নামাজ কাজা করে ফেলছেন অনেকে। যা কবিরা গুনাহ। অথচ ফরজ নামাজ কাজা করা তো দূরের কথা, রমজানের শেষ দশকে প্রকৃত মুমিনের নফল ইবাদতে ঝঁপিয়ে পড়ার কথা। হাদিসে এসেছে, ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, নবী কারিম (স.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি : ১০৫৩)
আরও পড়ুন: রমজানের শেষ দশকের ১০টি মাসনুন আমল
ঈদ প্রস্তুতির পেছনে মানুষ জড়িয়ে পড়ছে বেহুদা খরচের মতো আরেকটি বড় গুনাহে। এটি খুবই নিন্দনীয় কাজ। এই কাজকে শয়তানের কাজ বলে সতর্ক করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের অর্থ-সম্পদ অপ্রয়োজনীয় কাজে খরচ করবে না। জেনে রেখো, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান নিজ প্রতিপালকের ঘোর অকৃতজ্ঞ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ২৬, ২৭)
ঈদ প্রস্তুতিতে বাড়াবাড়ির সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হলো—আল্লাহর নৈকট্যলাভের শ্রেষ্ঠতম সময়ে রাস্তা-ঘাটে, বাজারে, শপিংমলে অনেকে পর্দার বিধান লঙ্ঘনের গুনাহে জড়িয়ে পড়ছেন। অথচ পবিত্রতা ও সতীত্ব রক্ষার হাতিয়ার হিসেবেই আল্লাহ তাআলা পর্দার বিধান দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ (সূরা আহজাব: ৩৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ে যে দোয়া পড়া সুন্নত
যদি আমাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর প্রদর্শিত পথ, শিক্ষাদীক্ষা ও তাঁর আদর্শের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা এবং অনুরাগ থাকে, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর শাফায়াত লাভের তপ্ত বাসনা অন্তরে জাগ্রত থাকে, তাহলে আমাদের এসব অনর্থক কাজ থেকে খাঁটি মনে তাওবা করা উচিত। এই অঙ্গীকার করা উচিত যে এই পবিত্র মাসে সব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকব, একনিষ্ঠ মনে আল্লাহর দিকে ফিরে আসব। রমজানের এই অতিমূল্যবান সময়গুলো যেন অবহেলায় না কাটে, ঈমানদারদের এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের রমজানের পবিত্রতা রক্ষার তাওফিক দান করুন। ঈদের আনন্দময় দিনটিকে ঘিরে গুনাহের কাজ থেকে হেফাজতে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।