শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

রমজানে রোজা রাখবেন, নামাজও পড়বেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০২৪, ০৮:৩০ এএম

শেয়ার করুন:

রমজানে রোজা রাখবেন, নামাজও পড়বেন

রোজা ও নামাজ দুটোই ফরজ ইবাদত। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দুটি রুকন। নামাজ দ্বিতীয় রুকন আর রোজা তৃতীয়। শরিয়ত অনুমোদিত ওজর ছাড়া নামাজ-রোজা বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। ঈমানের পরই নামাজের স্থান। নামাজ ১২ মাস আদায় করতে হয়। আর রোজা শুধু রমজান মাসে। একজন মুসলমান বছরজুড়ে নামাজ আদায় করবেন—এটি স্বাভাবিক। এরপর যখন পবিত্র রমজান আসবে, তখন নামাজ আদায়ের পাশাপাশি রমজানের রোজাগুলোও রাখবেন। 

মুসলমান শুধু রোজা রাখবেন, নামাজ পড়বেন না—এটা ভাবা যায় না। নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে প্রচুর আলোচনা রয়েছে। নামাজ না পড়লে আমল নষ্ট হয় বলেও নবীজি (স.) উম্মতকে সতর্ক করেছেন। এক হাদিসে বুরাইদা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন— مَنْ تَرَكَ صَلاةَ الْعَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ ‘যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ত্যাগ করে তার আমল নিষ্ফল হয়ে যায়।’ (বুখারি: ৫২০)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: তারাবি না পড়লে রোজা মাকরুহ হবে?

ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ) এই হাদিসের মর্মার্থ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘বেনামাজি দুই ধরণের-১) পুরোপুরিভাবে ত্যাগ করা বা কোনো নামাজই না পড়া। এ ব্যক্তির সমস্ত আমল বিফলে যাবে। ২) বিশেষ কোনোদিন বিশেষ কোনো নামাজ ত্যাগ করা। এক্ষেত্রে তার বিশেষ দিনের আমল বিফলে যাবে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে নামাজ ত্যাগ করলে তার সার্বিক আমল বিফলে যাবে। আর বিশেষ নামাজ ত্যাগ করলে বিশেষ আমল বিফলে যাবে।’ (আস-সালাত পৃ-৬৫)

মূলত নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি নিদর্শন। এই ইবাদত যারা বাদ দিয়েছে, তাদের কাফের বলেছেন শীর্ষ আলেম ও সালাফরা। হজরত ওমর (র.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের’ (বায়হাকি: ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের’ (বায়হাকি: ৬২৯১)। হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে মুসলমান নয়।’ (বায়হাকি: ৬২৯১)

ইমাম আহমদ এর মতানুযায়ী, অলসতা করে নামাজ বর্জনকারী কাফের এবং এটাই অগ্রগণ্য মত। কোরআন, হাদিস, সলফে সালেহিনের বাণী ও সঠিক কিয়াসের দলিল এটাই প্রমাণ করে। (আল-শারহুল মুমতি আলা-জাদিল মুসতানকি: ২/২৬)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: নামাজ জামাতে পড়া জরুরি

এ বিষয়ে কোরআনেরও দলিল রয়েছে যে- ‘অতএব তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও জাকাত দেয়, তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।’ (সুরা তাওবা: ১১) এই দলিলের বিশ্লেষণ হচ্ছে- আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের মাঝে ও আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব সাব্যস্তের জন্য তিনটি শর্ত করেছেন- শিরক থেকে তওবা করা, নামাজ কায়েম করা ও জাকাত আদায় করা। যদি তারা শিরক থেকে তওবা করে কিন্তু নামাজ কায়েম না করে, জাকাত প্রদান না করে তাহলে তারা আমাদের ভাই নয়। আর যদি তারা নামাজও কায়েম করে কিন্তু জাকাত আদায় না করে, তাহলেও তারা আমাদের ভাই নয়। তাই অধিকাংশ আলেম মনে করেন, যেহেতু পাপের কারণে দ্বীনি ভাতৃত্ব নষ্ট হয় না, নামাজ না পড়া দ্বীন থেকে সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে যাওয়াই প্রমাণ করে। 

তবে, কোনো মুসলমান রোজা রেখে নামাজ না পড়লে রোজার সওয়াব লাভ হবে কি না—বিষয়টি নিয়ে মতবিরোধ দেখা যায়। অধিকাংশ আলেমের মতে, নামাজ যেভাবে ফরজ বিধান, তেমনি রোজাও ফরজ বিধান। কোনো মুসলমান যদি নামাজ না পড়ে, শুধু রোজা রাখে তাহলে তার রোজা আদায় হবে। আর নামাজ না পড়ার গুনাহ তাকে ভোগ করতে হবে। 

অতএব, নামাজ না পড়ে রোজা রাখলে রোজা আদায় হবে না; এমনটা বলা যাবে না। অনুরূপভাবে সে রোজার সাওয়াব পাচ্ছে; এটা বলাও কঠিন। এজন্য আমরা এমন ব্যক্তিকে বলবো, নামাজ পড়ুন, রোজাও রাখুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর