মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শাবানের শেষভাগে যেসব আমলের গুরুত্ব বেশি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২৬ পিএম

শেয়ার করুন:

শাবানের শেষভাগে যেসব আমলের গুরুত্ব বেশি

শাবানকে বলা হয় রমজানের প্রবেশদ্বার। তাই শাবান মাসের শুরু থেকেই নেক আমলের প্রতি মনোযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়। রাসুলুল্লাহ (স.) ও সাহাবিরা রজব মাস থেকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। এরপর শাবান এলে তা আরও বেগবান হতো। আসলে রমজান এমন একটি মাস, যার মর্যাদা ও ফজিলত বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। শুধু একটি রাতই আছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। তাই সলফে সালেহিনদের অনেকে ছয় মাস আগে থেকে রমজান প্রাপ্তির প্রহর গুণতেন। মুআল্লা ইবনুল ফদল (রহ.) বলেন, পূর্বসূরি আলেমরা ছয় মাস রমজান লাভের দোয়া  করতেন এবং ছয় মাস তা কবুলের দোয়া করতেন। (বুগয়াতুল ইনসান, পৃষ্ঠা-৮৯)

শাবান মাসের শেষ ভাগ মুমিনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ রমজান মাসকে আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টির দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র বানিয়েছেন। এতে কেউ সফল হয় আবার কেউ ব্যর্থ হয়।...(তোমরা যেন প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে সফল হতে পারো) তাই তোমাদের প্রতি আমার উপদেশ হলো- শাবানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে সুবর্ণ সুযোগ মনে করো। বিশেষত শাবানের অর্ধরাত ও তার পরবর্তী দিনগুলো। (বুগয়াতুল ইনসান, পৃষ্ঠা-৯১)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: শবে বরাতে নবীজি যে আমল করতেন

রোজা ও তেলাওয়াত
আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) শাবান মাসে পূর্বসূরি আলেমদের আমল সম্পর্কে লেখেন, ‘পূর্বসূরিদের কাছে শাবান মাস ছিল রমজানের ভূমিকাস্বরূপ। তারা শাবান মাসে সেসব আমল শুরু করে দিতেন, যা রমজানে করা হয়। যেমন—রোজা রাখা ও কোরআন তেলাওয়াত করা। যেন রমজান লাভের আগ্রহ তৈরি হয় এবং মন আল্লাহর আনুগত্যের জন্য প্রস্তুত হয়।’ (নিদাউর রাইয়ান, পৃষ্ঠা ৪৮০)

গুনাহ ত্যাগ করা
রমজান মাসের রোজা পালনের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য নিজেকে পাপমুক্ত করা। পাপ পরিহার না করলে ব্যক্তি রমজানের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। তাই মুমিন রমজানের আগেই গুনাহ ত্যাগ করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা নুর: ৩১)

দোয়া করা
মুমিন রমজান মাস লাভের জন্য বেশি বেশি দোয়া করবে। কেননা নবীজি (স.) রমজান লাভের দোয়া করতেন। তিনি রজব মাসের শুরু থেকে দোয়া করতেন—اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান ওয়াবাল্লিগনা রমাদান।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্যে রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করুন এবং রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের হায়াত বৃদ্ধি করুন।” (নাসায়ি: ৬৫৯; মুসনাদে আহমদ: ২৩৪৬, আলমুজামুল আওসাত: ৩৯৩৯; মেশকাত: ১৩৬৯)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: শবে বরাতে হিংসামুক্ত মানুষের জন্য সুসংবাদ

রমজানের বিধি-বিধান জেনে নেওয়া
শাবানের শেষদিকে রমজানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি হলো- রমজান ও রোজার বিধি-বিধান জানা। কেননা ফকিহরা এই বিষয়ে একমত যে, ফরজ ইবাদতের বিধি-বিধান জানাও ফরজ। রমজানের রোজা ফরজ তাই এর বিধান জানাও ফরজ। (ইসলাম ওয়েব ডটনেট, প্রশ্ন নম্বর ৬৬০৪৫)

দরিদ্রের রমজান প্রস্তুতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখা
সাহাবি আনাস বিন মালিক (রা.) বলতেন, ‘শাবান মাস এলে মুসলমানরা কোরআনকে আঁকড়ে ধরত এবং তা পাঠ করত। এছাড়াও তারা সম্পদের জাকাত প্রদান করত যেন দুর্বল ও অসহায় মানুষ রমজানের রোজা রাখতে সক্ষম হয়।’ (মিনারুল ইসলাম: ১৪/২১)

রমজানকে যথাযথ কাজে লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা
মুমিন রমজান মাসের ফল ও ফসল ঘরে তুলতে আগে থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কেননা সুষ্ঠু পরিকল্পনা ব্যক্তির সাফল্য লাভে সহায়ক। যেমন ঘরবাড়ির কাজ, বাজার-ঘাটের কাজ, অফিস ও ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাজ গুছিয়ে রাখা। 

শাবান মাসের ব্যাপারে মুমিনের উদাসীনতা নিন্দনীয়। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘...শাবান মাস রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী এমন একটি মাস, যে মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষ বেখবর, অথচ এ মাসে আমলনামাগুলো আল্লাহর কাছে উত্তোলন করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি, আমার আমলনামা আল্লাহর কাছে উত্তোলন করা হবে আমার রোজা পালনরত অবস্থায়। (সুনানে নাসায়ি: ২৩৫৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজান লাভের তাওফিক দিন। রমজানের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর