রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শবে বরাতে কি রিজিক বণ্টন হয়?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৫৯ পিএম

শেয়ার করুন:

শবে বরাতে কি রিজিক বণ্টন হয়?

শবে বরাত ইসলামে একটি মর্যাদাপূর্ণ রাত—এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই রাতের ফজিলত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে আল্লাহ তাআলা সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৯০; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)

শবে বরাতের বিশুদ্ধ আমলগুলোর মধ্যে রয়েছে তেলাওয়াত, দরুদ, জিকির, নফল নামাজ ইত্যাদি। এই রাতে লম্বা কেরাতে ও দীর্ঘ সেজদায় নামাজ পড়া প্রমাণিত আমল। মহিমান্বিত এই রাতকে ঘিরে এমন কিছু আমল ও ধারণা প্রচলিত রয়েছে যার সূত্র খুবই দুর্বল অথবা বানোয়াট। একটি প্রচলিত ধারণা হলো- শবে বরাতে রিজিক বণ্টন হওয়া বা ভাগ্য নির্ধারিত হওয়া।


বিজ্ঞাপন


অনেকে ভাবেন, এ রাতে ভাগ্য অনুলিপি করা হয় বা পরবর্তী বছরের জন্য হায়াত-মউত ও রিজিক ইত্যাদির অনুলিপি করা হয়। হাদিস বিশারদদের মতে, এ সম্পর্কিত হাদিসগুলো অত্যন্ত দুর্বল অথবা বানোয়াট। 

আরও পড়ুন: শবে বরাতে যেসব আমল বিদআত নয়

আলেমদের মতে, কোরআন কারিমের এক আয়াতের ভুল ব্যাখ্যার কারণে হয়ত এই বিশ্বাসের শুরু। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন- إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ‘আমি তো তা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রজনীতে এবং আমি তো সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সুরা দুখান: ৩-৪)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাবেঈ ইকরিমাহ বলেন, এখানে ‘মুবারক রজনী’ বলতে ‘মধ্য শাবানের রাতকে’ বুঝানো হয়েছে এবং এ রাতে গোটা বছরের সকল বিষয়ে ফয়সালা করা হয়। 


বিজ্ঞাপন


মুফাসসিরগণ ইকরিমার এ মত গ্রহণ করেননি। ইমাম তাবারি বিভিন্ন সনদে ইকরিমার এ ব্যাখ্যা উদ্ধৃত করার পরে প্রতিবাদ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ইকরিমার এ মত ভিত্তিহীন, বরং সঠিক মত হলো, এখানে ‘মুবারক রজনী’ বলতে ‘লাইলাতুল কদর’-কে বুঝানো হয়েছে, যে রাতে আল্লাহ কোরআন অবতীর্ণ করেছেন।

আরও পড়ুন: শবে বরাতের সঙ্গে হালুয়া-রুটির সম্পর্ক কী

সে রাতকে এক স্থানে লাইলাতুল কদর বা ‘তাকদিরের রাত’ বলে অভিহিত করেছেন। অন্য স্থানে ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ বা ‘বরকতময় রজনী’ বলে অভিহিত করেছেন। রাতটি নিঃসন্দেহে রমজান মাসের মধ্যে; কারণ অন্যত্র আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, তিনি রমজান মাসে কোরআন নাজিল করেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুবারক রজনী রমজান মাসে, শাবান মাসে নয়। (তাবারি, তাফসির ২৫/১০৭-১০৯)

পরবর্তী মুফাসসিরগণ ইমাম তাবারির সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তারা বলেছেন যে, ‘মুবারক রজনী’ বলতে এখানে ‘মহিমান্বিত রজনী’ বা ‘লাইলাতুল কদর’ বুঝানো হয়েছে। তাদের মতে, ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ এবং ‘লাইলাতুল কদর’ একই রাতের দুটি উপাধি।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর