রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

শবে বরাতেও ক্ষমা পাবে না যারা

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

শবে বরাতেও ক্ষমা পাবে না যারা

শবে বরাত ফারসি শব্দ। ‘শব’ অর্থ রাত, ‘বরাত’ অর্থ নাজাত বা মুক্তি। এই দুই শব্দ মিলে অর্থ হয় মুক্তির রজনী। শবে বরাতে আল্লাহ তাআলা অনুগত বান্দাদের ক্ষমা করে দেন—তাই রাতটি মুক্তির রজনী নামে খ্যাত।

কিন্তু ক্ষমালাভের এমন বিশেষ সময়েও কিছু মানুষ আল্লাহর ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের পরিচয় সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, বিখ্যাত সাহাবি মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে তাঁর সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫৬৬৫)


বিজ্ঞাপন


হাদিসবিশারদদের মতে, হাদিসটির মান সহিহ তথা বিশুদ্ধ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান (রহ.) তাঁর প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাব ‘কিতাবুস সহিহ’-এ সেটি উল্লেখ করেছেন। হাদিসে দেখা যাচ্ছে, মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারীরা ক্ষমার রাতেও আল্লাহর ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হয়।

শিরক থেকে পুরোপুরি বাঁচার উপায় জানুন
তাওহিদের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকটি হচ্ছে শিরক। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো। তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না।’ (সুরা নিসা: ৩৬) এখানে ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো’- এ বাণীতে রয়েছে তাওহিদের নির্দেশনা। আর ‘তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না’- এ আদেশের মাঝে রয়েছে শিরকের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা। কোরআনের বহু স্থানে এভাবে তাওহিদের আদেশ ও শিরকের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। 

আরও পড়ুন: শবে বরাতে নবীজি যে আমল করতেন

তাই এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। ‘তাওহিদ ও শিরক’ ব্যাপক ও বিস্তৃত বিষয়। পৃথিবীতে যত নবী-রাসুল এসেছেন, তারা সবাই তাওহিদ ও শিরক শেখানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। মুসলিম বিদ্বানগণ তাওহিদকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। ১. তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ ২. তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ ৩. তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত। প্রত্যেকটি প্রকার একেকটি বিভাগের মতো দীর্ঘ। সবগুলো জানলেই শিরক থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত থাকা সম্ভব হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পড়ার সুযোগ বা রেওয়াজ না থাকায় মুসলিম সমাজে শিরক ছড়িয়ে পড়ছে। অতএব তাওহিদ ও শিরক সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য বিষয়ভিত্তিক বিশুদ্ধ কিতাব অধ্যয়ন করতে হবে, একইসঙ্গে মুহাক্কিক আলেমের শরণাপন্ন হতে হবে। বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন


বিজ্ঞাপন


হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বাঁচুন
মানবহৃদয়ে সবচেয়ে নোংরা ও ক্ষতিকর দিক হলো- হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, অমঙ্গল কামনা, পারস্পরিক শত্রুতা ইত্যাদি। হাদিসের আলোকে মুসলমান মুসলমানে হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতার দুটি ভয়ংকর পরিণতি হলো- 
১. আল্লাহর বিশেষ ক্ষমা লাভ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, প্রতি সপ্তাহে দুইবার—সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দাদের কর্ম (আল্লাহর দরবারে) পেশ করা হয়। তখন সব মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, শুধুমাত্র ওই ব্যক্তি ছাড়া, যার ও তার অন্য ভাইয়ের মধ্যে বিদ্বেষ ও শত্রুতা আছে। এদের বিষয়ে বলা হয়, এদের বিষয় স্থগিত রাখো, যতক্ষণ না এরা ফিরে আসে। (মুসলিম: ২৫৬৫)

আরও পড়ুন: শবে বরাতে যেসব আমল বিদআত নয়

২. নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। জুবাইর ইবনুল আউআম (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর ব্যাধি তোমাদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে: হিংসা ও বিদ্বেষ। এই বিদ্বেষ মুণ্ডন করে দেয়। আমি বলি না যে তা চুল মুণ্ডন করে, বরং তা দ্বীন বা ধর্মকে মুণ্ডন ও ধ্বংস করে দেয়। আমার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর শপথ করে বলছি, বিশ্বাসী না হলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর পরস্পরে একে অন্যকে ভালো না বাসলে তোমরা বিশ্বাসী বা মুমিন হতে পারবে না। এই ভালোবাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যম আমি শিখিয়ে দিচ্ছি, সর্বত্র ও সর্বদা পরস্পরে সালাম প্রদানের প্রথা প্রচলিত রাখবে। (তিরমিজি: ২৫১০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরক চিনতে সাহায্য করুন, হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত অন্তর দান করুন। শবে বরাতের মতো মর্যাদাপূর্ণ রাতে শিরক ও হিংসামুক্ত হৃদয় নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর