বিয়ে আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। ইসলামি শরিয়তে গাইরে মুহরিম ছেলে ও মেয়ের সম্পর্ক গড়ার একমাত্র পদ্ধতি হলো বিয়ে। বিয়েবহির্ভূত প্রেম-ভালোবাসার স্থান ইসলামে নেই। তাই বয়স ও উপার্জনের দিক দিয়ে উপযুক্ত হলে বিয়ে করে নেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে নবীজির আদেশ হলো- يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ ‘হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যে ব্যক্তি তাতে অক্ষম, সে যেন রোজা রাখে, কেনা তা যৌন শক্তিকে হ্রাস করে।’ (বুখারি: ৫০৬৬; মুসলিম: ১৪০০, মেশকাত: ৩০৮০)
বিজ্ঞাপন
উক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায়, সামর্থ্যবান হলেই বিয়ে করে নেওয়া উচিত। ইসলাম বিয়ের বয়স নির্দিষ্ট করেনি। কারণ শক্তি সামর্থ্য সবার একইরকম হয় না। অনেকে অল্প বয়সেই সামর্থ্যবান হয়ে যায়, আবার অনেকের একটু সময় লাগে। যুক্তিও বলে- এর জন্য বয়স ঠিক না করা, বরং শক্তি-সামর্থ্যে উপযুক্ত হলেই বিয়ে করে নেওয়া।
আরও পড়ুন: কত বছর বয়সে বিয়ে করা সুন্নত
প্রশ্ন হলো- কাজি অফিসে ২জন সাক্ষীর সম্মুখে বিয়ে করলে জায়েজ হবে কি না? এর উত্তর হলো- হ্যাঁ জায়েজ হবে। কারণ ফতোয়ার কিতাবে এসেছে, দুইজন বুঝমান মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সাক্ষীর সামনে অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষীর সামনে পাত্র-পাত্রী যদি ইজাব ও কবুল (প্রস্তাব ও সম্মতি) করে থাকেন তাহলে বিয়ে সহিহ হয়ে যাবে। (দুরারুল হুককাম ফি শরহি গুরারিল আহকাম: ১/৩২৭; আদ্দুররুল মুখতার: ৩/১২; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৭০, ১/২৮০; আলবাহরুর রায়েক: ৩/১০৬; তাবয়িনুল হাকায়েক: ২/৪৮৫)
উল্লেখিত ফতোয়ায় দেখা যাচ্ছে, অভিভাবককে না জানিয়েও বিয়ে শুদ্ধ হয়। হ্যাঁ এভাবে বিয়ে করলেও বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যায়। তবে সুন্দর পদ্ধতি হলো- পিতা-মাতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপযুক্ত পাত্রীকে বিয়ে করা। পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অভিভাবকের অজান্তে বিয়ে করা একেবারেই অনুচিত। তাছাড়া অভিভাবকহীন বিয়ে বা গোপন বিয়ে অসামাজিক ও অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ কাজ। এজন্য বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ইসলাম পছন্দ করে না। তাই ইসলামের নির্দেশনা হলো, ‘বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪/৫)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: যেসব নারীকে বিয়ে করা ইসলামে নিষেধ
এতদসত্ত্বেও যদি কেউ অভিভাবকের গোপনে বিয়ে করে ফেলে, তা শুদ্ধ হবে এবং এই বন্ধন রক্ষাও করতে হবে। কেননা বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়, বরং এটি নারী-পুরুষের সারা জীবনের পবিত্র বন্ধন।
অবশ্য যদি ‘কুফু’ (সমতা) রক্ষা না হয় বা মারাত্মক কোনো সমস্যা দেখা যায়, তাহলে বাবা-মা সন্তানকে বিবাহবিচ্ছেদের কথা বলার অধিকার রাখেন। এক্ষেত্রে অভিভাবকের কথা যদি সঠিক ও যুক্তিসংগত হয় এবং তালাক ছাড়া আর কোনো পথ বাকি না থাকে, পাশাপাশি যদি তালাক দেওয়ার দ্বারা তার ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে মা-বাবার সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে। পক্ষান্তরে তালাকের কারণ যদি যৌক্তিক না হয়, তাহলে তালাক দেওয়া জায়েজ হবে না। (মুসনাদে আহমদ: ৪৭১২, আবু দাউদ: ৫১৩৮)
আরও পড়ুন: যেসব অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গেও সহবাস করা হারাম
সুতরাং আখেরাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করে গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে এবং অভিভাবকদের জানিয়ে তাদের পরামর্শক্রমেই বিয়ে করা উত্তম হবে। দায়িত্বহীনভাবে গোপনে বিয়ে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক বিবেচনাবোধ দান করুন। ইসলামের প্রত্যেকটি নির্দেশনার প্রতি অনুগত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

