সালাম ইসলামি অভিবাদন। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, মমত্ববোধ, দায়িত্ববোধ ও সহমর্মিতা জাগ্রত করে সালাম। দূর করে মানব-মনের অহংকার, হিংসা বিদ্বেষ। সালাম দেওয়া-নেওয়া নবী-রাসুলদের সুন্নত। কেউ সালাম দিলে উত্তর দেওয়া ওয়াজিব।
প্রশ্ন হলো- সালামের উত্তর কি শুনিয়ে দিতে হবে, নাকি মনে মনে দিলে ওয়াজিব আদায় হবে?
বিজ্ঞাপন
এর উত্তরে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, সালামের জবাব সালামদাতাকে শুনিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। শুধু মনে মনে উত্তর দেওয়া বা নিম্নস্বরে দেওয়া যথেষ্ট নয়। অবশ্য সালামদাতা যদি এতটা দূরে থাকে যে, তাকে উত্তর শুনিয়ে দেওয়া কষ্টসাধ্য হয় সেক্ষেত্রে শুনিয়ে দেওয়া জরুরি নয়। এক্ষেত্রে মৌখিক উত্তরের পাশাপাশি সম্ভব হলে হাত দ্বারা ইশারাও করবে। যেন সালামদাতা বুঝতে পারে যে, তার সালামের উত্তর নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: নারী সালাম দিলে উত্তর দেওয়া জরুরি?
সালাম দ্বারা বলা হয়- ‘আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’। তার উত্তর একটু বাড়িয়ে এভাবে দেওয়া উচিত যে, ‘আপনার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক’। অর্থাৎ, ‘কেউ আসসালামু আলাইকুম বললে, উত্তরে ওয়ালাইকুম আস ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলা উচিত।’ (ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত, খণ্ড ১২, ৯৩)
কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন- وَإِذَا حُيِّيْتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّواْ بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا ‘আর যদি কেউ তোমাদের জন্য দোয়া করে (সালাম দেয়), তাহলে তোমরাও তার জন্য দোয়া করো। তার চেয়ে উত্তম দোয়া অথবা তারই মতো ফিরিয়ে বলো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে হিসাব-নিকাশ গ্রহণকারী।’ (সুরা নিসা: ৮৬)
বিজ্ঞাপন
এ আয়াতে দেখা যাচ্ছে, সালামের উত্তর শুনিয়ে সুন্দরভাবে আরও বাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। সম্ভব না হলে অন্তত সালামের সমপরিমাণ উত্তর দেওয়া জরুরি। কিন্তু সালামের উত্তর মনে মনে দিলে সালামের আসল উদ্দেশ্য পূরণ হয় না।
আরও পড়ুন: উম্মতের সালাম নবীজির কাছে পৌঁছানো হয়
উল্লেখ্য, অনেকে অপছন্দের মানুষ সালাম দিলে উত্তর দেয় না। এটি সুন্নাহপরিপন্থী কাজ। অপছন্দনীয় ব্যক্তির সালামের উত্তর দেওয়াও ওয়াজিব। অনেক সময় কেউ কেউ সালামের উত্তর দিয়ে আবার সালাম দেন। এমনটা করাও উচিত নয়। কারণ, উত্তম হলো, ব্যক্তি আগে সালাম দেবে, কিন্তু কেউ যদি সালাম দিয়ে ফেলে তবে শুধু সালামের উত্তর দেওয়াই দায়িত্ব। পুনরায় সালাম দেওয়া অগ্রহণযোগ্য।
কখনও দুইজন ব্যক্তি একে অপরকে একসঙ্গে সালাম দিয়ে ফেললে প্রত্যেকের ওপর অপরের সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আর যদি আগে-পরে হয়ে যায় তা হলে পরে যে সালাম দেওয়া হয়েছে তা আগের সালামের জবাব হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে পরে সালাম দিলে কারও জন্যই পুনরায় জবাব দেওয়া আবশ্যক হবে না।
(ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ১৮/৭৮; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৩৫; রদ্দুল মুহতার: ৬/৪১৬, ৬/৪১৩; মিরকাতুল মাফাতিহ: ৮/৪৬৭; ফাতহুল বারি: ১১/২১; তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম: ৪/২৪৫; ইমদাদুল ফতোয়া: ৪/২৭৫)

