সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

গিবতের কাফফারা কী?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৪১ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

গিবত আরবি শব্দ। বাংলা প্রতিশব্দ পরনিন্দা, দোষচর্চা, কুৎসা রটনা, পেছনে সমালোচনা করা। ইসলামে গিবত ভয়াবহ পাপগুলোর একটি। এই পাপটি বান্দার অধিকার সংশ্লিষ্ট। তাই এর পরিণাম খুব কঠিন। অথচ বর্তমানে সাধারণ মানুষ দূরের কথা, অনেক দ্বীনদার-পরহেজগারও এ ব্যাধিতে আক্রান্ত। ‘গিবত হলো তোমার ভাই সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে।’ (মুসলিম: ৬৪৮৭)

ইসলামের দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি গিবত শোনে সেও গিবতের পাপের অংশীদার হয়ে যায়। তাই যেই আসরে গিবত হয়, সেই আসর বর্জন করতে বলেছেন নবীজি। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন কেউ আপনার সঙ্গে বসে অন্যের গিবত করে তখন তাকে থামতে বলুন, আল্লাহর হুকুমের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সাবধান করুন। আর তাতেও যদি কাজ না হয় তবে সেখান থেকে সরে আসুন। কোনোভাবেই গিবত শোনা যাবে না। আল্লাহ বলছেন, ‘সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা মায়েদা: ২)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ইসলামে সবচেয়ে জঘন্য ৭ গুনাহ

পবিত্র কোরআনে গিবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে যে কঠিন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে; অন্য কোনো গুনাহের ক্ষেত্রে ততটা রুক্ষভাষা ব্যবহার করা হয়নি। ইরশাদ হয়েছে ‘তোমরা গুপ্তচরবৃত্তি করো না, পরস্পর গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়াকে পছন্দ করো? অবশ্যই তোমরা তা পছন্দ করবে না।’ (সুরা হুজরাত: ১২) 

গিবতের কাফফারা
গিবতের পাপ থেকে মুক্তি পেতে আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইতে হয়, তারপর আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করতে হয়। ইমাম নববি (রহ.) বলেন, আল্লাহর অধিকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাপ থেকে তাওবা করার শর্ত তিনটি: ১. কৃত পাপকর্ম থেকে নিবৃত্ত হওয়া। ২. কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ৩. ভবিষ্যতে সেই গুনাহ না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা। আর বান্দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুনাহ থেকে তাওবা করার ক্ষেত্রে আরো একটি শর্ত যুক্ত হবে, সেটা হলো—৪. যার অধিকার নষ্ট করা হয়েছে তাকে তার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে দায়মুক্ত হয়ে যাওয়া। সুতরাং গিবতকারীকে উপরিউক্ত চারটি শর্ত মেনে তাওবা করা ওয়াজিব। কেননা গিবত বান্দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাপ। সে জন্য যার গিবত করা হয়েছে তার কাছ থেকেই দায়মুক্ত হওয়া আবশ্যক।’ (আল-আজকার, ইমাম নববি, পৃষ্ঠা-৩৪৬)

সুতরাং গিবতের কাফফারা বা এ পাপের গুনাহ থেকে ক্ষমা পাওয়ার উপায় হচ্ছে, যার গিবত করা হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চাওয়া। যেমন—আবু বকর ও ওমর (রা.) একবার নিজেদের মধ্যে তাদের এক খাদেমের অনুপস্থিতিতে তার বেশি ঘুমানোর ব্যাপারে আলোচনা করেন। সামান্য এই গিবতের কারণে রাসুল (স.) পরে তাদের বলেন যে আমি তোমাদের উভয়ের দাঁতের মধ্যে তার গোশত দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর তাঁরা রাসুল (স.)-এর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাঁদের তাদের খাদেমের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। (সিলসিলা সহিহাহ: ২৬০৮)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: যে দোয়া ১০ বার পড়লে গুনাহ করার ইচ্ছা জাগবে না

তবে সরাসরি ক্ষমা চাইতে গেলে যদি ফিতনা সৃষ্টি হয়, তাহলে নিজের জন্য ও তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং যে স্থানে তার কুৎসা রটনা করা হয়েছে সেখানে তার প্রশংসা করতে হবে। (আল-ওয়াবিলুস সাইয়েব, ইবনুল কাইয়িম, পৃষ্ঠা-১৪১) এ প্রসঙ্গে ইবনে তাইমিয়া ও ইমাম নববি (রহ)-এর মতো প্রসিদ্ধ আলেমদের পরামর্শ হলো—যেই মজলিসে গিবত করা হয়েছে ওই মজলিসেই একই ব্যক্তির গুণকীর্তন করা উচিত, যাতে গিবতের গুনাহের অনেকটা ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, اِنَّ الۡحَسَنٰتِ یُذۡهِبۡنَ السَّیِّاٰتِ ‘নিশ্চয়ই ভালো কাজ খারাপ কাজের ক্ষতিপূরণ হয়।’ (সুরা হুদ: ১১৪)

অতএব, পরনিন্দাকারীকে গিবতের কাফফারা হিসেবে এই চারটি কাজ করতে হবে—১. তাওবা-ইস্তেগফার করা ২. সম্ভব হলে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া ৩. ওই ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ৪. মজলিসে ওই ব্যক্তির প্রশংসা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের ভয়ঙ্কর পাপ গিবত থেকে হেফাজত করুন। গিবত সংঘটিত হলে উল্লেখিত চারটি কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন