রোববার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নামাজ-দোয়া ছাড়া মসজিদে বসে থাকা যায়?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০১:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

নামাজ-দোয়া ছাড়া মসজিদে বসে থাকা যায়?

মসজিদ পবিত্রতম স্থান। সাধারণত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে সমবেত হন মুসল্লিরা। কিন্তু, মসজিদ শুধু নামাজের স্থান নয়। যারা মনে করেন- মসজিদে নামাজ-দোয়া ছাড়া অন্যকাজ করা যাবে না, তাদের ধারণা ভুল। ইসলামে মসজিদের বহুমাত্রিক ভূমিকা আছে। নবীজির সিরাতে দেখা যায়, রাসুলুল্লাহ (স.) দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া, বিচার-ফয়সালা-মীমাংসার কাজ মসজিদে বসে করেছেন। (সহিহ বুখারি: ৬৬, ৪৫৯)

মসজিদে অবস্থান করাও ইবাদত। মসজিদে ইবাদতের আগে ও পরে অবস্থান করার বিশেষ প্রতিদানের উল্লেখ রয়েছে হাদিসে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যতক্ষণ মসজিদে সালাত ও জিকিরে রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তাঁর প্রতি এতটা আনন্দিত হন, প্রবাসী ব্যক্তি তার পরিবারে ফিরে এলে তারা তাকে পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ৮০০)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: ১১ শ্রেণির মানুষের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন

হাদিসে আরও এসেছে, মসজিদে যারা পাঠ করে এবং একে অপরের সাথে মিলে (কোরআন) অধ্যয়নে লিপ্ত থাকে, তাদের উপর শান্তিধারা অবতীর্ণ হয়। রহমত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তাআলা তার নিকটবর্তীদের (ফেরেশতাগণের) মধ্যে তাদের কথা আলোচনা করেন। আর যে লোককে আমলে পিছনে সরিয়ে দিবে তার বংশ (মর্যাদা) তাকে অগ্রসর করে দিবে না। (মুসলিম: ২৬৯৯) হাদিস শরিফে আরও দেখা যায়, মসজিদে অবস্থান করলে নামাজের মতো সওয়াব লাভ হয়। (বুখারি: ৬৬১)

এ তো গেলো মসজিদে অবস্থানের কথা। মসজিদে খাওয়া-দাওয়া করাও নাজায়েজ নয়। এমনকি প্রয়োজনীয় কথাবার্তাও বলা যাবে। বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানোরও অনুমতি রয়েছে। (আবু দাউদ: ৩১০১, ১২৯৪; বুখারি: ৪৭৫, ৪৪০)

আরও পড়ুন: মসজিদে যেসব ভুল করা যাবে না


বিজ্ঞাপন


তবে এক্ষেত্রে মসজিদের পবিত্রতার আদবগুলো যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন- উঁচু আওয়াজ করে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটানো, দুর্গন্ধযুক্ত খাবার খেয়ে মসজিদে প্রবেশ করা, মসজিদে থুতু নিক্ষেপ করা ইত্যাদি কাজ নিষিদ্ধ। এছাড়াও কাউকে ডিঙিয়ে কাঁধের ওপর দিয়ে যাওয়া, রাজনৈতিক আলাপ ও মিটিং করা, অপরাধীর শাস্তি দেওয়া ইত্যাদি কাজ মসজিদে করা যাবে না। কেবলামুখী হয়ে না বসাও মসজিদের আদবের খেলাফ। (সহিহ বুখারি: ৪৭০; মুসলিম: ১১৩৫, ১১১৫; আবু দাউদ: ১১১৮; ফতোয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/১০৫; মেশকাত: ৬৭৯; সিলসিলাহ সহিহাহ: ২৬৪৫)

সবসময় মসজিদে যাওয়া-আসা করা, মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা, মসজিদের যাবতীয় কাজের সহযোগী হওয়া—এসব মূলত আল্লাহওয়ালাদের গুণ। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতিবেশী হিসেবে ভূষিত করবেন। রাসুল (স.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের ডেকে ডেকে বলবেন, ‘আমার প্রতিবেশীরা কোথায়? আমার প্রতিবেশীরা কোথায়?’ তখন ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করবেন,‘ আপনার প্রতিবেশী কারা?’ তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘যারা দুনিয়াতে আমার ঘরের সঙ্গে (মসজিদের সঙ্গে) সম্পর্ক রেখেছে এবং মসজিদ আবাদ করেছে।’ (হিলয়াতুল আউলিয়া: ১০/২১৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বাড়াবাড়ি থেকে হেফাজত করুন। মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার তাওফিক দান করুন। মসজিদের আদবগুলো রক্ষার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর