সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কথা ও কাজে অমিল মুনাফিকের স্বভাব

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

কথা ও কাজে অমিল মুনাফিকের স্বভাব

কথা-কাজে মিল থাকা ঈমানদারের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। একজন মুমিনকে এ ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকতে হয়। কথা ও কাজের অমিল সরাসরি মিথ্যা। ইসলামের দৃষ্টিতে মিথ্যা একটি কবিরা গুনাহ বা মারাত্মক অপরাধ। আর মিথ্যা মুনাফিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলামত। রাসুলুল্লাহ (স.) মুনাফিকের ৩টি লক্ষণের কথা বলেছেন- ১. যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, ২. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানতের খেয়ানত করে। (সহিহ বুখারি, কিতাবুল ঈমান: ১/৮৯, ৫/২৮৯, ৩৭৫, ১০/৫০৭, হাদিস: ৩৩, ২৬৮২, ২৭৪৯, ৬০৯৫; সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান: ১/৭৮, হাদিস: ৫৯)

সমাজে কারো চরিত্রে যদি মুনাফিকি থাকে তাহলে তার অর্জিত সাফল্য ধ্বংস হতে বাধ্য। তারা ভাবে তাদের কথা ও কাজের ভারসাম্যহীন এই আচরণ কেউ কখনও ধরতে পারবে না। এমন মানুষকে মন থেকে কেউ কখনও ভালোবাসে না কিংবা শ্রদ্ধা করে না। কোনোভাবে দুনিয়ার জীবনে পার পেলেও পরকালীন জীবনে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। 


বিজ্ঞাপন


মুনাফিক হয় মুসলমানদের মধ্য থেকে। তাই মুনাফিক সমাজের শত্রু, মুসলিম জাতির শত্রু। তাদের প্রতি আল্লাহর ক্রোধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা যা বলো তা নিজেরা করো না কেন? আল্লাহর নিকট অত্যন্ত ক্রোধ উদ্বেগকারী ব্যাপার এই যে, তোমরা যা বলো তা বাস্তবে করো না।’ (সুরা সফ: ২) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘ ইন্নাল মুনাফিকিনা হুমুল ফাসিকুন’ অর্থ: ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা ফাসিক তথা পাপাচারী’। (সুরা তাওবা: ৬৭) 

আরও পড়ুন: মুনাফিকের কাছে ভারী দুই নামাজ 

মুনাফিকের পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে। আর তারা কোনো সাহায্যকারীও খুঁজে পাবে না।’ (সুরা নিসা: ১৪৫)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘মুনাফিকরা অগ্নিগর্ভ সিন্দুকে থাকবে।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তাদের ঊর্ধ্বে ও নিম্নে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।’ (তাফসিরে মারেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির)


বিজ্ঞাপন


মুনাফিকদের চেনা কঠিন। কারণ তারা ভালো নসিহত করে, মানুষের সামনে ভালো কাজ করে, কিন্তু বাস্তবে তারা ওসব নসিহতের ধার ধারে না। হাদিসে এ শ্রেণির লোকদের ভয়াবহ শাস্তির কথা ওঠে এসেছে। মেরাজের সময় রাসুলুল্লাহ (স.) কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যাদের জিহ্বা ও ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছিল। জিব্রাইল (আ.) বলেন, এরা আপনার উম্মতের স্বার্থপূজারি উপদেশদাতা, যারা অন্যকে সৎ কাজের নির্দেশ দিত, কিন্তু নিজের খবর রাখত না। (মারেফুল কোরআন: ৩৭, মুসনাদে আহমদ: ১২২১১)

আরও পড়ুন: মুনাফিকি থেকে বাঁচার দোয়া ও আমল

ইবনে হারেসাহ (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!’ (বুখারি: ৩২৬৭, ৭০৯৮; মুসলিম: ২৯৮৯: আহমদ: ২১২৭৭)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে কথা ও কাজের মধ্যে যথাযথ মিল রেখে উপদেশ দেওয়ার পাশাপাশি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপদেশ মেনে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের সফলতা পাওয়ার মতো আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর