মানুষের মন কলুষিত হওয়ার যত ব্যাধি আছে তার মধ্যে মুনাফিকি অন্যতম। মানুষ স্বেচ্ছায় মুনাফিক হয় না, বরং অজান্তেই এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এ ব্যাধি মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে ঠেলে দেয়। এর ক্ষতিকর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। বস্তুত ‘মুনাফিকি’ বা কপটতা মানুষের সারা জীবনের আমলকে ধ্বংস করে দেয়।
এই ঘৃণিত চরিত্র সম্পর্কে কোরআনে কারিমের এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা আল্লাহ ও মুমিনদের ধোঁকা দিতে চায়, আসলে তারা নিজেদের সঙ্গেই প্রতারণা করছে; কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারছে না।’ (সুরা বাকারা: ৯)
বিজ্ঞাপন
তাই মুমিনের দায়িত্ব হলো— এ ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। আর দয়াময় আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০)
তাবেয়ি জুবাইর ইবনে নুফাইর (রহ.) বলেন, ‘আবু দারদা (রা.) হিমসে থাকা অবস্থায় একবার আমি তার বাড়িতে প্রবেশ করলাম। তিনি তখন মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন। তিনি যখন বৈঠকে বসলেন, তখন তাশাহুদের পর আল্লাহর কাছে মুনাফিকি থেকে বেঁচে থাকার দোয়া করতে লাগলেন। নামাজ শেষ করার পর আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার সঙ্গে মুনাফিকির তো কোনো সম্পর্ক নেই, আপনি এই দোয়া করছেন কেন? তখন তিনি আল্লাহর কাছে তিনবার ক্ষমা চেয়ে বলেন, কে এই বিপদ থেকে মুক্ত আছে? আল্লাহর কসম একজন মানুষ যেকোনো সময় ফিতনায় পড়ে দীন থেকে বঞ্চিত হয়ে যেতে পারে। (শুআবুল ঈমান: ৮৩১)
তাই তো নবীজি (স.) দীনের ওপর অটল থাকতে এই দোয়া বেশি পাঠ করতেন- يَا مُقَلِّبَ القُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ ‘ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুবি ছাব্বিত ক্বলবি আলা দীনিক।’ অর্থ: হে মনের পরিবর্তনকারী, আমার মনকে দীনের ওপর স্থির রাখুন। (তিরমিজি: ৩৫২২)
দোয়া ছাড়াও মুনাফিকি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হাদিসে সুন্দর এক আমলের বর্ণনা পাওয়া যায়। ওই আমলে জাহান্নাম থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা দিয়েছেন নবীজি (স.)। সুন্দর আমলটি হলো- ৪০ দিন জামাতে নামাজ আদায় করা। তবে, হাদিস অনুযায়ী নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আমলটি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে ৪০ দিন তাকবিরে উলার (ইমামের প্রথম তাকবির) সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে, তাকে দুটি নাজাতের ছাড়পত্র দেওয়া হবে। ১. জাহান্নাম থেকে মুক্তি ২. মুনাফিকি থেকে মুক্তি।’ (তিরমিজি: ২৪১)
বিজ্ঞাপন
অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যখন ইখলাসের সঙ্গে আল্লাহর মহব্বতে টানা ৪০ দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ইমামের প্রথম তাকবির বলার সঙ্গে আদায় করে, সে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্ত এবং মুনাফেকি থেকেও মুক্ত। (সুবহানাল্লাহ!) আমাদের পূর্বসূরিরা তাকবিরে উলাকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। তাবেয়ি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) একাধারে ৫০ বছর তাকবিরে উলার সঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন। (হিলইয়াতুল আওলিয়া: ৪/২১৫)
মুনাফিকি থেকে বাঁচতে আরেকটি করণীয় হলো- কোরআন ও হাদিসে মুনাফিকির যে ক্ষতির দিকগুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা বারবার স্মরণ করা। পরকালে এ শ্রেণির মানুষকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে পতিত করা হবে। তাই অন্তরে কপটতার প্রভাব অনুভূত হলে এর শাস্তি ও ভয়াবহতার কথা কল্পনা করা। কারণ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনো তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী পাবে না।’ (সুরা নিসা: ১৪৫)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কপটতা থেকে মুক্ত থাকতে হাদিসে বর্ণিত দোয়া ও আমল যথাযথ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

