সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পরিণাম

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৫:১৩ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পরিণাম

প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা রক্ষা একটি মর্যাদাপূর্ণ আমল। কোরআন ও হাদিসে এর অনেক গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। প্রতিশ্রুতি রক্ষার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সমাজে অসাধারণ মানুষে পরিণত হয়। নানারকম অকল্যাণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় সমাজ। অন্যদিকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তি পর্যায়ে অকল্যাণ নেমে আসে। পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি হয়। আল্লাহ তাআলা মানুষকে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা আমার নেয়ামতকে স্মরণ কর, যে নেয়ামত আমি তোমাদের প্রদান করেছি এবং তোমরা আমার অঙ্গীকার পূর্ণ কর, তাহলে আমি তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করব। আর কেবল আমাকেই ভয় কর।’ (সুরা বাকারা: ৪০)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘অঙ্গীকার পূর্ণ করো। অবশ্যই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৪) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়েদা: ১) আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,  ‘তোমরা আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সেই অঙ্গীকার পূর্ণ কর। তোমরা পাকাপোক্ত অঙ্গীকার করার পর তা ভঙ্গ কর না এবং প্রকৃতপক্ষে তোমরা তো নিজেদের জন্য আল্লাহকে জিম্মাদার বানিয়েছ। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন, যা তোমরা কর।’ (সুরা নাহল: ৯১)


বিজ্ঞাপন


অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা মুমিনের অন্যতম গুণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরা এমন) যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করে না।’ (সুরা রাদ: ২০)

আরও পড়ুন: মানুষের সম্মান রক্ষার ফজিলত

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং কাউকে কথা দিয়ে কথা না রাখা বিবেকবহির্ভূত আচরণ। ইসলামি শরিয়তে ওয়াদা ভঙ্গ করা একটি মারাত্মক অন্যায় ও গুনাহের কাজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা কেন এমন কথা বলো! যা কাজে পরিণত করো না, এটা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণিত কাজ যে তোমরা বলবে এমন কথা যা করবে না।’ (সুরা সফ: ২-৩) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা নিজেদের সন্ধিচুক্তি পালন করো।’ (সুরা সফ: ০১)

দুনিয়ার স্বার্থে যারা ওয়াদা ভঙ্গ করে, মহান আল্লাহ তাদের নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছেন। দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের জন্য ওয়াদা ভঙ্গ করলে এর ক্ষতিও মারাত্মক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে লোক নিজ (ওয়াদা) প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবে এবং পরহেজগার হবে, অবশ্যই আল্লাহ পরহেজগারদেরকে ভালবাসেন। যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য বিনিময়ে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কোনো অংশ নেই। আর তাদের সঙ্গে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদের পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুত তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’ (সুরা ইমরান: ৭৬-৭৭)


বিজ্ঞাপন


হাদিস শরিফে এসেছে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা মুনাফিকের আলামত। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ বলেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি ১. কথা বললে মিথ্যা বলা ২. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করা ৩. তার কাছে আমানত রাখা হলে সে খেয়ানত করে।’ (বুখারি: ১/৩৩)

আরও পড়ুন: মুনাফিকি থেকে বাঁচার দোয়া ও আমল

কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীর ওপর রাগান্বিত থাকবেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য অথবা তার ভাইয়ের সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম করবে, আল্লাহর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ এমন অবস্থায় ঘটবে যে, আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন। এ কথার সত্যতার জন্য আল্লাহ তাআলা অবতীর্ণ করেন, নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছমূল্যে বিক্রি করে, তারা আখেরাতের নেয়ামতের কোনো অংশই পাবে না।’ (বুখারি: ৬৬৫৯)

উল্লেখিত দলিল থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, অঙ্গীকার ও পরস্পরের সঙ্গে করা চুক্তির শর্তাবলী পালন করা অবশ্য কর্তব্য আর তা লঙ্ঘন করা হারাম। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন- অঙ্গীকার ভঙ্গকারীদেরকে নির্ধারিত শাস্তিপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বে এই শাস্তি দেয়া হবে যে, হাশরের ময়দানে যখন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমগ্র মানবজাতি সমবেত হবে, তখন অঙ্গীকার ভঙ্গকারীদের পেছনে নিদর্শনস্বরূপ একটি পতাকা উত্তোলন করে দেওয়া হবে এবং যত বড় অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে, পতাকাও তত উঁচু ও বড় হবে। (সহিহ মুসলিম: ১৭৩৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যাপারে সচেতনতা দান করুন। কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর