শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

কোরআন-হাদিসে বর্ণিত বিশেষ কিছু দোয়া

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ০১:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

কোরআন-হাদিসে বর্ণিত বিশেষ কিছু দোয়া

দোয়া একটি মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯)। ভাগ্য পরিবর্তনে দোয়া অসামান্য ভূমিকা পালন করে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তাকদিরের বিরুদ্ধে সতর্কতা কোনো কাজেই আসবে না। যা ঘটেছে ও যা ঘটতে পারে—তা থেকে শুধু দোয়াই পারে নিষ্কৃতি দিতে। কোনো কোনো দুর্দশার সঙ্গে মোকাবেলা করে বিচার দিন পর্যন্ত লড়াই করতে থাকে দোয়া।’ (তাবরানি আউসাত: ১৫১৯)

অহংকারবশত যারা এই ইবাদত ছেড়ে দেয় তাদের উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। অহংকারবশত যারা আল্লাহর ইবাদত করে না, তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা মুমিন: ৬০)


বিজ্ঞাপন


নিচে পাঠকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া কোরআন-হাদিসের আলোকে তুলে ধরা হলো।

১. ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعَتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী, লা- ইলা-হা ইল্লা- আংতা খলাকতানী, ওয়া আনা- ’আবদুকা, ওয়া আনা- ’আলা- ’আহদিকা, ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্ব’তু, আ’ঊযুবিকা মিন শাররি মা- সনা’তু, আবূউলাকা বিনি’মাতিকা ’আলাইয়্যা, ওয়া আবূউ বিযামবী ফাগফিরলী, ফাইন্নাহূ লা- ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা- আংতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার দাস। আমি তোমার কাছে কৃত অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির ওপর সাধ্যমতো দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মগুলোর অনিষ্টকারিতা থেকে তোমার আশ্রয় চাচ্ছি। আমার ওপর তোমার অনুগ্রহ স্বীকার করছি এবং আমি আমার পাপগুলো স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করো। কেননা তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।’ রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এই দোয়া পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতবাসী হবে। (বুখারি, মেশকাত: ২৩৩৫)

২. ঋণমুক্তির দোয়া
اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে স্বচ্ছলতা দান করো।’ আলী (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (স.) এই দোয়া শিখিয়েছেন। আলী (রা.) বলেন, এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহই ঋণমুক্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নেবেন, যদি ঋণ পর্বতসমানও হয়।’ (তিরমিজি: ৩৫৬৩; মুসনাদ আহমদ: ১৩২১)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে জান্নাত ওয়াজিব


বিজ্ঞাপন


৩. সংকটকালের দোয়া/দোয়া ইউনুস
لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বলিমিন।’ অর্থ: ‘তুমি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৭)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, মাছের পেটে ইউনুস (আ.) এই দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকেছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে এই দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।’ (আহমদ, তিরমিজি, মেশকাত: ২২৯২)

৪. তাওবার দোয়া
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ ‘আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাজি লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আর আমি তাঁর দিকেই ফিরে যাচ্ছি (তাওবা করছি)।’ ফজিলত:  রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো। কেননা আমি তাঁর কাছে দৈনিক ১০০ বার করে তাওবা করি। (মুসলিম, মেশকাত: ২৩২৫)

৫. জান্নাত প্রার্থনা ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়াআউজুবিকা মিনান্না-র।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই’ (আবু দাউদ: ৭৯৩)। আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহর কাছে জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে, ‘হে আল্লাহ! এই ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যাক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে, জাহান্নাম বলে, ‘হে আল্লাহ এই ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।’ (তিরমিজি: ২৫৭২ তাহকিককৃত, জান্নাতের বিবরণ অধ্যায়)

আরও পড়ুন: দোয়া ২ কারণে তাৎক্ষণিক কবুল হয় না 

৬. রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
اللَّهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহু লাতীফুম্ বি-ইবাদিহি ইয়ারজুকু মাইয়্যাশায়ু, ওয়া হুয়াল কাভিয়্যুল আজিজ।’ অর্থ: আল্লাহ নিজের বান্দাদের প্রতি মেহেরবান। তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি প্রবল, পরাক্রমশালী।’ (সুরা শুরা: ১৯) আলেমরা অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে, একনিষ্ঠতার সঙ্গে ৭০ বার এ আয়াত পড়বে, সে সর্বদা রিজিকের সঙ্কট থেকে হেফাজতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।

৭. উত্তম জীবন যাপনের দোয়া
اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়াত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা তাকওয়া কামনা করি এবং আপনার কাছে সতীত্ব তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য বা সচ্ছলতা কামনা করি।’ রাসুলুল্লাহ (স.) এই দোয়াটি করতেন, যেখানে মানুষের জীবনের সকল চাওয়াই নিহিত রয়েছে। (মুসলিম: ২৭২১; তিরমিজি: ৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ: ৩৮৩২; মুসনাদে আহমদ: ৩৬৮৪, ৩৮৯৪)

আরও পড়ুন: মনের আশা পূরণের দোয়া

৮. সুসন্তান লাভের দোয়া
رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء ‘রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুরিরয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দুআ’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা আলে ইমরান: ৩৮)

৯. আদর্শ পরিবার গঠনের দোয়া
رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةَ لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْم উচ্চারণ: ‘রব্বানা ওয়াজআলনা মুসলিমাইনি লাকা ওয়ামিন জুররিয়্যাতিনা উম্মাতান মুসলিমাতাল্লাকা ওয়া আরিনা মানাসিকানা ওয়াতুব আলাইনা ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহীম।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব। আর আমাদের উভয়কে আপনার একান্ত অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর হতে আপনার এক অনুগত জাতি উত্থিত করুন। আর আমাদেরকে ইবাদতের নিয়ম পদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং আমাদের তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনিই বেশি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ১২৮)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর