রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ভোরে ঘুম থেকে উঠার নির্দেশনা দেয় ইসলাম। ভোরে ঘুম থেকে উঠার অনেক বরকতের ঘোষণা রয়েছে হাদিসে। তাই ইশার নামাজ আদায়ের পর কোনো কাজ না করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে এবং ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকেও রাত করে ঘুমানো সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইশার নামাজের আগে ঘুমাননি এবং তারপর নৈশ আলাপ করেননি। (ইবনে মাজাহ: ৭০২)। অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ইশার নামাজের আগে ঘুমানো এবং ইশার পর কথাবার্তা বলা পছন্দ করতেন না। (বুখারি: ৭৩৭, মুসলিম: ১৪৯৪)
ভোরে ঘুম থেকে উঠা এবং পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করা মুসলমানের অভ্যাস হওয়া উচিত। এতে প্রফুল্লচিত্তে এবং পবিত্র মনে সকাল শুরু হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন ঘুমায়, তখন শয়তান তার মাথার শেষভাগে তিনটি গিরা দেয়। প্রতিটি গিরার সময় সে এ কথা বলে কুমন্ত্রণা দেয় যে, এখনো রাত অনেক রয়ে গেছে, শুয়ে থাকো। অতঃপর সে ব্যক্তি যদি জেগে ওঠে এবং আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন একটি গিরা খুলে যায়। অতঃপর যদি সে অজু করে, তবে দ্বিতীয় গিরা খুলে যায়। আর যদি সে নামাজ আদায় করে, তাহলে সব গিরাই খুলে যায়। ফলে প্রফুল্লতার সঙ্গে পবিত্র মনে তার সকাল হয়, অন্যথায় আলস্যের সঙ্গে অপবিত্র মনে তার সকাল হয়।’ (বুখারি: ৩০৯৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ফজরের কাজা কখন পড়বেন, সুন্নত পড়তে হবে কি?
ভোরে ঘুম থেকে উঠলে রিজিকের বরকত লাভ হয়। বিপরীতে সকালের ঘুম জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে দেয়। দিনের শুরুটা ঘুমে কেটে যাওয়ার ফলে দিন সংকীর্ণ হয়ে যায়। কাজের সময় ও পরিধি কমে যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) ভোরকে বরকতময় করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। সাখর আল-গামিদী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে ভোরের বরকত দান করুন।’ তিনি কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই প্রেরণ করতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রা.) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তাঁর পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে পাঠানোর ফলে অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। (আবু দাউদ: ২৬০৮)
রাসুল (স.) বলেন, ‘সকালবেলায় রিজিকের অন্বেষণ করো! কারণ, সকালবেলা বরকতপূর্ণ ও সফলতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত সময়।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ৬২২০)
রাসুল (স.)-এর আদুরে কন্যা ফাতেমা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (স.) ভোরবেলা আমার ঘরে এসে আমাকে ঘুমে দেখতে পেলেন, তখন তিনি আমাকে পা দিয়ে নাড়া দিয়ে বললেন, হে প্রিয় কন্যা! উঠো! তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ করো! অলসদের দলভুক্ত হয়ো না। কেননা আল্লাহ তাআলা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের মাঝে রিজিক বণ্টন করে থাকেন। (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব: ২৬১৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ইশরাক ও চাশতের নামাজ কখন পড়তে হয়, ফজিলত কী?
পূর্ববর্তী আলেমরা ফজরের পর ঘুমানোকে মাকরুহ মনে করতেন। হজরত উরওয়া ইবনে জুবাইর (রহ.) বলেন, জুবাইর (রা.) তার সন্তানদের ভোরবেলা ঘুমানোর ব্যাপারে নিষেধ করতেন। হজরত উরওয়া (রহ.) বলেন, ‘আমি যখন কারও সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫/২২২)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) তার এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন, ‘ওঠো! তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ (জাদুল মায়াদ: ৪/২৪১)
অতএব, ইশার নামাজের পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ভোরে উঠে যেতে হবে। ফজরের নামাজ, কোরআন তেলাওয়াতের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দিনের কর্মকাণ্ড শুরু করতে পারলে দিন বরকতময় ও কর্মময় হয়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বরকতময় সকালকে কাজে লাগানোর তাওফিক আমাদের সবাইকে দান করুন। আমিন।