মুসলমানদের জন্য জুমার দিন সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (স.) বলেন, ‘জুমার দিন সপ্তাহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত।’ (ইবনে মাজাহ: ১০৮৪) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।’ (ইবনে মাজাহ: ১০৯৮)
জুমার দিনের কিছু বিশেষ আমল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বিপুল সওয়াব দান করেন। এর মধ্যে সুরা কাহাফ ও দরুদ পাঠ বিশেষ দুটি আমল।
বিজ্ঞাপন
দরুদ পাঠ
জুমার দিন গুরুত্বপূর্ণ এক আমল হচ্ছে নবীজির ওপর দরুদ পাঠ করা। এই মর্মে রাসুল (স.) বলেন, ‘দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। এই দিনে সমস্ত সৃষ্টিকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ: ১০৪৭)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে নবী (স.) বলেন, ‘তোমরা জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ জিবরাইল (আ.) এইমাত্র আল্লাহ তাআলার বাণী নিয়ে হাজির হয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পৃথিবীতে যখন কোনো মুসলমান আপনার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আমি তার ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করি এবং আমার সব ফেরেশতা তার জন্য ১০ বার ইস্তেগফার করে।’ (তারগিব: ৩/২৯৯)
আরও পড়ুন: জুমা আদায়কারীর যে মর্যাদার কথা বলেছেন নবীজি
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘আমার ওপর জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ আমার উম্মতের দরুদ জুমার দিন আমার কাছে পৌঁছানো হয়। যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠাবে, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আমার নিকটতম হবে।’ (তারগিব: ১৫৭)
বিজ্ঞাপন
আলী (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নবী করিম (স.)-এর ওপর জুমার দিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করে, সে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নূরের জ্যোতি দেখে লোকরা বলাবলি করতে থাকবে এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল!’ (কানজুল উম্মাল: ১৭৪)
সুরা কাহাফ পাঠ
জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়ার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, তার (ঈমানের) নূর এই জুমা হতে আগামি জুমা পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। (মেশকাত: ২১৭৫)
হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। (সহিহ মুসলিম: ৮০৯; আবু দাউদ: ৪৩২৩)
আরও পড়ুন: দরুদ ও সালামের অবিশ্বাস্য ফজিলত
আরেক বর্ণনায় আছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের শেষ ১০ আয়াত পড়বে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৪৬/৬)
হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যেভাবে নাজিল করা হয়েছে, সেভাবে যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য সেটা নিজের স্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত আলো হবে এবং শেষ ১০ আয়াত পড়লে দাজ্জালের গণ্ডির বাইরে থাকবে আর দাজ্জাল তার ওপর কোনোরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। (সুনানে নাসায়ি: ১০৭২২)
জুমার দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে দোয়া করা। সালফে সালেহিনরা জুমার দিনে অযথা সময় কাটাতেন না। বরং নামাজ, দোয়া ও জিকিরে মগ্ন থাকতেন। কেননা হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে যে, তখন কোনো মুসলমান আল্লাহর নিকট যে দোয়া করবে, আল্লাহ তা কবুল করেন। (আবু দাউদ: ১০৪৮)
আরও পড়ুন: জুমার দিন দোয়া কবুলের সময়টি যেভাবে কাটাবেন
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন এবং এরপর রাসুল (স.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।’ (বুখারি: ৬৪০০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনে উপরোক্ত আমলগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। জুমার দিনের যাবতীয় কল্যাণ নসিব করুন। আমিন।

