রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

আলহামদুলিল্লাহ কেন সর্বোত্তম দোয়া

প্রকাশিত: ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০২:০৭ পিএম

শেয়ার করুন:

আলহামদুলিল্লাহ কেন সর্বোত্তম দোয়া

আলহামদুলিল্লাহ অর্থ সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। পবিত্র কোরআনের শুরু হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ শব্দ দিয়ে। আল্লাহ তাআলার মাহাত্ম্য বর্ণনা ও প্রশংসার জন্য আলহামদুলিল্লাহর চেয়ে উত্তম বাক্য আর নেই। ইসলামে আলহামদুলিল্লাহ হলো সর্বোত্তম দোয়া। (তিরমিজি: ৩৩৮৩)

আলহামদুলিল্লাহর ফজিলত বর্ণনায় নবীজি (স.) বলেছেন, ‘..যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল (সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে) এই দুই সময়ে ১০০ বার ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলল সে যেন আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ১০০টি ঘোড়ার পিঠে মুজাহিদ প্রেরণ করলো, অথবা আল্লাহর রাস্তায় ১০০টি গাজওয়া বা অভিযানে শরিক হলো..।’ (তিরমিজি: ৫/৫১৩, নং ৩৪৭১; নাসায়ি, সুনানুল কুবরা: ৬/২০৫; সহিহুত তারগিব: ১/৩৪৩)


বিজ্ঞাপন


হাদিসে আরও এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যদি আমার কোনো উম্মতকে পুরো দুনিয়া দিয়ে দেওয়া হয় আর সে আলহামদুলিল্লাহ বলে তাহলে এই শব্দ পুরো দুনিয়া থেকে উত্তম। অর্থাৎ, পুরো পৃথিবী পেয়ে যাওয়া এত বড় নেয়ামত নয়, যা আলহামদুলিল্লাহ বলার মধ্যে রয়েছে। কারণ এই পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু আলহামদুলিল্লাহর সওয়াব থেকে যাবে। (ইবনে মাজা) হাদিসে আরও এসেছে, আল্লাহ তাআলার কাছে প্রিয় বাক্য চারটি— সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবর...(সহিহ মুসলিম: ২১৩৭; ইবনে মাজাহ: ৩৮১১; আবু দাউদ: ৪৯৫৮; মেশকাত: ২২৯৪)

আরও পড়ুন: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কি শুধুই জিকির?

এক হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি নিজের প্রশংসা পছন্দ করেন, এজন্য তিনি নিজের প্রশংসা করেছেন এবং আমাদেরও তাঁর প্রশংসার নির্দেশ দিয়েছেন। (বুখারি: ২/১৮১৭) 

নবীজি (স.) আরো বলেছেন, আলহামদুলিল্লাহ মিজানকে পূর্ণ করে দেয়। আর সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ শব্দ দুটি আসমান ও জমিনের খালি জায়গা পূর্ণ করে দেয়। (সহিহ মুসলিম: ২২৩)


বিজ্ঞাপন


একজন মানুষ আল্লাহ তাআলার কী পরিমাণ নেয়ামত ভোগ করে তা কল্পনারও বাইরে। সুস্থ দেহ, সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, সুস্থ মন, সুস্থ পরিবেশ- সবকিছুই তাঁর নেয়ামত। সামান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হলেই বুঝে আসে এ নেয়ামতের মর্ম। উঠতে-বসতে, নিদ্রা-জাগরণে, ঘরে-বাইরে সর্বত্রই আমরা তাঁর নেয়ামতের সাগরে ডুবে আছি সর্বক্ষণ। এ নেয়ামত গণনার সাধ্য নেই কারও। আল্লাহ পাক তো বলেই দিয়েছেন- وَإِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَتَ اللهِ لا َتُحْصُوْهَا  তোমরা যদি আল্লাহর নেয়ামত গুনতে চাও তাহলে তা গুনে শেষ করতে পারবে না। (সুরা ইবরাহিম: ৩৪)

তাই প্রতিদিনকার প্রতিটি পদক্ষেপে রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন আল্লাহর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা সম্বলিত বিভিন্ন দোয়া। ভোরে ঘুম থেকে জাগার মধ্য দিয়ে যখন সূচনা হয় আমাদের দোয়াটি এমন-اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ অর্থাৎ ‘সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে মৃত্যু দেয়ার পর আবার জীবন দান করলেন আর তাঁর কাছেই তো আমাদের একত্রিত করা হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৩১১২)

আরও পড়ুন: ১০টি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া 

খাওয়ার পরের দোয়া হলো- اَلْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا، وَجَعَلَنَا مِنَ  الْمُسْلِمِيْنَ অর্থাৎ সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ তাআলার, যিনি আমাদের পানাহার করিয়েছেন এবং আমাদেরকে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (জামে তিরমিজি: ৩৪৫৭; আবু দাউদ: ৩৮৫০)

এভাবে আলহামদুলিল্লাহ শব্দের আগে পরে বিভিন্ন শব্দ সমন্বয়ে আল্লাহর শুকরিয়ার বিভিন্ন দোয়া রয়েছে হাদিসে। যার মর্মার্থ হলো- সবকিছুতে আল্লাহর শুকরিয়া করা বান্দার উচিত এবং এতেই আল্লাহ তাআলা খুশি হন। 

এমনকি দুখের সময়ও আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করার বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন নবীজি (স.)। এক হাদিসে মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনো বান্দার সন্তান মারা যায়, তখন মহান আল্লাহ (জান কবজকারী) ফেরেশতাদের বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ হরণ করেছ কি? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তোমরা তার হৃদয়ের ফলকে হনন করেছ? তারা বলেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বলেন, ‘সেসময় আমার বান্দা কী বলেছে?’ তারা বলেন, ‘সে আপনার হামদ (প্রশংসা) করেছে ও ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রা-জিউন পাঠ করেছে।’ মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার (সন্তানহারা) বান্দার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ করো, আর তার নাম রাখো ‘বায়তুল হামদ’ (প্রশংসাভবন)।’ (তিরমিজি: ১০২১)

অসুস্থ ব্যক্তির আলহামদুলিল্লাহ বলা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমি আমার মুমিন বান্দাকে রোগাক্রান্ত করি, আর বান্দা সে অবস্থায় আমার প্রশংসা করে আলহামদুলিল্লাহ বলে; তবে সে বিছানা থেকে এমনভাবে ওঠে দাঁড়ায়; যেন তার মা তাকে ভূমিষ্টকালে যেমন জন্মদান করেছিল।’ (হাদিসে কুদসি) 

আরও পড়ুন: ৪ আলামতে বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসেন

মূলত কৃতজ্ঞ বান্দাকেই আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন এবং তিনি চান বান্দা শোকরগুজার হোক। প্রিয়নবী (স.) রাত জেগে জেগে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নফল নামাজ পড়তে গিয়ে কখনো তাঁর পা ফুলে যেত। আয়েশা (রা.) একদিন জানতে চাইলেন- আপনি এত কষ্ট করেন কেন, আল্লাহ কি আপনার আগে-পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেননি? রাসুলুল্লাহ (স.) উত্তরে বললেন- أَفَلاَ أُحِبُّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا অর্থাৎ আমি কি একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হতে চাই না? (সহিহ বুখারি: ৪৮৩৭)

এ কৃতজ্ঞতা মুমিনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। পরকালীন সমৃদ্ধির পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনেও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আরও অধিক পরিমাণ নেয়ামত লাভের মাধ্যম এ কৃতজ্ঞতা। আর আখেরাতের অসীম পুরস্কারের ঘোষণা তো আছেই। 

শেষ কথা হলো- মুসলিম উম্মাহকে সবকিছুতে সর্বাবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। সুখের সময় আলহামদুলিল্লাহ পড়লে যেমন সওয়াব, দুঃখের সময় পড়লেও সওয়াব। তাছাড়া এটি হাদিসের বর্ণনায় সর্বোত্তম দোয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুখে-দুঃখে আলহামদুলিল্লাহ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর