প্রিয়নবী (স.)-এর দোয়ায় শামিল হতে পারা সৌভাগ্যের ব্যাপার। তিনি উম্মতের জন্য বিভিন্ন দোয়া করেছেন এবং তাঁর দোয়া লাভের কিছু উপায়ও বলে দিয়েছেন। সেসব উপায় অবলম্বন করে কেয়ামত পর্যন্ত যে কেউ মহানবী (স.)-এর দোয়ায় শামিল হতে পারেন। নিচে তেমন কিছু আমল তুলে ধরা হলো—
প্রথম বা দ্বিতীয় কাতারে নামাজ পড়া
যারা জামাতে প্রথম বা দ্বিতীয় কাতারে সালাত আদায় করে, রাসুলুল্লাহ (স.) তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) প্রথম কাতারের মুসল্লিদের জন্য তিনবার এবং দ্বিতীয় কাতারের মুসল্লিদের জন্য একবার ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।’ (ইবনু মাজাহ: ৯৯৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার ফজিলত
আজান দেওয়া ও ইমামতি করা
ইমামদের জন্য রাসুলুল্লাহ (স.) হেদায়াতের দোয়া করেছেন এবং মুয়াজ্জিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘ইমাম হচ্ছে জামিনদার এবং মুয়াজ্জিন আমানতদার। হে আল্লাহ, তুমি ইমামদের সৎ পথে পরিচালিত করো এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করো।’ (আবু দাউদ: ৫১৭; তিরমিজি: ২০৭)
তাহাজ্জুদ আদায়ে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সহযোগিতা
কোনো দম্পতি যদি তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে এবং পরস্পরকে সেই ইবাদতে উৎসাহিত করে, তাহলে সেই স্বামী-স্ত্রী রাসুলুল্লাহ (স.)-এর রহমতের দোয়া লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির ওপর অনুগ্রহ করুন, যে রাত জেগে সালাত আদায় করে; অতঃপর সে তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে জাগ্রত করে। আর যদি সে ঘুম থেকে উঠতে না চায়, তাহলে সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয় (নিদ্রাভঙ্গের জন্য)। আর আল্লাহ ওই নারীর ওপরও অনুগ্রহ করুন, যে রাতে উঠে সালাত আদায় করে এবং নিজের স্বামীকে জাগ্রত করে। যদি সে ঘুম থেকে উঠতে অস্বীকার করে, তখন সে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।’ (আবু দাউদ: ১৩০৮; ইবনু মাজাহ: ১৩৩৬)
আছরের ফরজের আগে চার রাকাত নফল নামাজ আদায়
রাসুল (স.)-এর দোয়া লাভের অন্যতম একটি উপায় হলো- আছরের ফরজ সালাতের আগে চার রাকাত নফল সালাত আদায় করা। ইবনু ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ সেই ব্যক্তির ওপর রহমত বর্ষণ করেন, যে আছরের সালাতের আগে চার রাকাত (নফল) সালাত আদায় করে।’ (আবু দাউদ: ১২৭১; তিরমিজি: ৪৩০)
রাসুল (স.) দুই সালামে তথা দুই দুই রাকাত করে এই সালাত আদায় করতেন। (তিরমিজি: ৪২৯)
বিজ্ঞাপন
তবে আছরের আগের এই চার রাকাত সালাত আদায় করা মোস্তাহাব, যা নিয়মিত পড়া জরুরি নয়।
আরও পড়ুন: জোহরের ৮ রাকাত সুন্নত পড়লে জাহান্নাম হারাম
পাওনা আদায়ে ও ক্রয়-বিক্রয়ে সহনশীল হওয়া
জীবনের পথ চলায় লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয়, দেনা-পাওনা আদায়ে যারা সহনশীলতা ও কোমলতা প্রদর্শন করে, রাসুল (স.) তাদের জন্য রহমত ও জান্নাত লাভের দোয়া করেছেন। জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যে বান্দা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় উদারচিত্ত হয় এবং (ঋণের) পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে সহনশীল হয়।’ (ইবনু মাজাহ: ২২০৩)
অধীনস্থ লোকের প্রতি কোমল হওয়া
অধীনস্থ ব্যক্তির ওপর কোমলতা ও নম্রতা প্রদর্শনের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর দোয়া লাভ করা যায়। প্রিয়নবী (স.) উম্মতের কোমলতা প্রদর্শনকারী ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করে বলেন, ‘হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে এবং তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ করে, তুমি তার প্রতি কঠোর হও। আর যে আমার উম্মতের ওপর কোনোরূপ কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি কোমল আচরণ করে, তুমিও তার প্রতি কোমল ও সদয় হও।’ (মুসলিম: ১৮২৮)
সকালের সময়কে কাজে লাগানো
সকাল বেলায় সম্পাদিত যাবতীয় কাজে বরকত নাজিল হয়। রাসুল (স.) প্রভাতকালে বরকত নাজিলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের ভোর বেলার মধ্যে তাদের বরকত দান করুন।’ যখন রাসুলুল্লাহ (স.) কোথাও কোনো ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিতেন, তখন সকাল বেলায়ই পাঠাতেন। (তিরমিজি: ১২১২)
আরও পড়ুন: উপার্জনে বরকত লাভের দোয়া ও আমল
হাদিস মুখস্থ ও প্রচার করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া লাভের সৌভাগ্য হাসিলের উল্লেখযোগ্য উপায় হলো- হাদিস মুখস্থ করা এবং তা মানুষের মধ্যে প্রচার করা। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে মর্যাদামণ্ডিত করেন, যে আমার কথা শুনেছে, তা মুখস্থ করেছে, সংরক্ষণ করেছে এবং অন্যের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছে। (তিরমিজি: ২৬৫৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত আমলগুলো করার মাধ্যমে প্রিয়নবী (স.) এর দোয়ায় শামিল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।