পৃথিবীর বয়স বাড়ছে। একে একে প্রকাশিত হচ্ছে কেয়ামতের নানা আলামত। ইলমহীন বক্তা বেড়ে যাওয়াও একটি আলামত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা বর্তমানে এমন একটা যুগে আছ, যখন আলেমদের সংখ্যা বেশি এবং বক্তাদের সংখ্যা কম। এই যুগে যে ব্যক্তি তার জানা বিষয়ের এক-দশমাংশ ত্যাগ করবে, সে ধ্বংস হবে। পরে এমন একটা যুগ আসবে যখন বক্তাদের সংখ্যা বেশি হবে এবং আলেমদের সংখ্যা কমে যাবে। তখন যে ব্যক্তি তার জানা বিষয়ের এক-দশমাংশ আঁকড়ে ধরবে, সে নাজাত পাবে।’ (তিরমিজি: ২২৬৭)
হাদিসে নবীজি এমন এক যুগের কথা বলেছেন, যখন ইসলামের মূল চেতনা থেকে মানুষ দূরে সরে পড়বে। ফিতনা-ফ্যাসাদ বেড়ে যাবে এবং মূর্খতা বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ যা খুশি বলে বেড়াবে। এমন অবস্থায় দ্বীন পালন কঠিন হয়ে যাবে। তাই রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অসিয়ত হলো— অন্তত দ্বীনের জানা বিষয়গুলোর ১০ ভাগের এক ভাগ আঁকড়ে ধরা। তাহলে নাজাত পাওয়া যাবে।
বিজ্ঞাপন
ইলম উঠে যাওয়া সম্পর্কে হাদিসে আরও এসেছে, ‘যখন (প্রকৃত) আলেমদের মৃত্যু হবে তখন ইলম উঠে যাবে এবং মূর্খতা ধেয়ে আসবে। আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হলো ১. ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, ২. মূর্খতা বেড়ে যাবে, ৩. মদ্যপান করা হবে এবং ৪. ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।’ ( বুখারি: ৮০; মুসলিম: ২৬৭১)
আরও পড়ুন: কেয়ামতের যেসব আলামত সৌদি আরবে প্রকাশ পাবে
কেয়ামতের উল্লেখিত সবগুলো আলামতই বর্তমানে দৃশ্যমান। একইসঙ্গে বক্তাদের সংখ্যাও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় বক্তার আলোচনাই ইলমশূন্য। শুধু অযথা কথার ফুলঝুরি। কোনো ধরনের ইলম ও হিকমত নেই আলোচনায়। যদিও সত্যিকার ইলমের ধারকরাও মেহনত করে যাচ্ছেন। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। এভাবেই ইলমের প্রকৃত ধারকরা হারিয়ে যাচ্ছেন। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নিবেন না। বরং আলেমদেরকে উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নিবেন। অবশেষে যখন একজন আলেমকেও তিনি জীবিত রাখবেন না, তখন লোকেরা মূর্খ নেতাদের গ্রহণ করবে। অতঃপর তারা জিজ্ঞাসিত হবে। তখন না জেনেই ফতোয়া দিবে। এভাবে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে।’ (সহিহ বুখারি: ১০০; মুসলিম: ২৬৭৩; মেশকাত: ২০৬)
বিজ্ঞাপন
ইমাম মালেক (রহ)-এর মুয়াত্তার এক হাদিসে এসেছে, একবার আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জনৈক ব্যক্তিকে বলেন, ‘তুমি এখন এমন এক যুগে বাস করছ, যে যুগে প্রাজ্ঞ আলেমের সংখ্যা বেশি এবং কারির (সাধারণ আলেমের) সংখ্যা কম। এ যুগে কোরআনের সীমারেখা সংরক্ষণ করা হয় (অর্থাৎ কোরআনের বিধি-নিষেধ পালন করা হয়), শব্দের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয় কম। এ যুগে প্রার্থীর সংখ্যা কম এবং দাতার সংখ্যা বেশি। এ যুগের লোকেরা নামাজ দীর্ঘ করে এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করে। তারা প্রবৃত্তির অনুসরণের আগেই আমলের দিকে এগিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার দোয়া
কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এমন এক যুগ আসবে, যখন বিজ্ঞ আলেমদের সংখ্যা কম হবে এবং কারি বা সাধারণ আলেমদের সংখ্যা বেশি হবে। তখন কোরআনের শব্দসমূহকে হেফাজত করা হবে (হাফেজের সংখ্যা বেড়ে যাবে) এবং কোরআনের সীমারেখা বিনষ্ট হবে। প্রার্থী বেশি হবে এবং দাতা কম হবে। তখন লোকেরা খুতবা দীর্ঘায়িত করবে এবং নামাজ সংক্ষিপ্ত করবে। আর তারা আমলের আগে নিজেদের খেয়ালখুশির দিকে এগিয়ে যাবে।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক: ৫৯৭)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন। দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়গুলো আঁকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন। আমিন।

