মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫, ঢাকা

পরকীয়ার শাস্তি কী?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২৩, ০২:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

পরকীয়ার শাস্তি কী?

জেনা বা নারী-পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছে ইসলাম। ইসলামে শুধু অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের চূড়ান্ত রূপটাই জেনা নয়। বরং যেসব কাজ জেনার প্ররোচনা দেয় সেগুলোও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং তাও জেনা বলে গণ্য। এক হাদিসে আছে- চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, কানের ব্যভিচার শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার বলা, হাতের ব্যভিচার ধরা, পায়ের ব্যভিচার হাঁটা, মন কামনা করে আর লজ্জাস্থান তা সত্য বা মিথ্যায় পরিণত করে। (সহিহ মুসলিম: ২৬৫৭)

একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়। সুরা আহজাবের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা নারীদের পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করে। যদিও এ আয়াতটি নবীর স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে নাজিল হয়েছিল, তবে তা সব মুমিনের বেলায় প্রযোজ্য।


বিজ্ঞাপন


শুধু নারীদেরই নয়, বরং সুরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তাআলা পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ৩১ নম্বর আয়াতে মহিলাদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি তাদের গোপন শোভা অনাবৃত করতে নিষেধ করা হয়েছে। পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৩২)

অবিবাহিত নারী-পুরুষের ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শ ঘা করে বেত্রাঘাত কর।’ (সুরা নুর: ২)

আর পরকীয়া তথা বিবাহিত নারী-পুরুষের অশ্লীল কাজের শাস্তি হিসেবে পাথর মেরে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে শরিয়ত। উবাদা ইবন সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.) বলেন, ‘তোমরা আমার নিকট থেকে বিধানটি সংগ্রহ করে নাও। তোমরা আমার নিকট থেকে বিধানটি সংগ্রহ করে নাও। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য একটি ব্যবস্থা দিয়েছেন তথা বিধান অবতীর্ণ করেছেন। অবিবাহিত যুবক-যুবতীর শাস্তি হচ্ছে, একশটি বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ ও মহিলার শাস্তি হচ্ছে, একশটি বেত্রাঘাত ও রজম তথা পাথর মেরে হত্যা।’ (সহিহ মুসলিম: ১৬৯০; আবু দাউদ: ৪৪১৫, ৪৪১৬; তিরমিজি: ১৪৩৪; ইবন মাজাহ: ২৫৯৮)

ব্যভিচারী নারী-পুরুষের মধ্যে একজন বিবাহিত ও অন্যজন অবিবাহিত হলে বিবাহিতের  রজম তথা প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতে হবে এবং অবিবাহিতকে ১০০টি বেত্রাঘাত করতে হবে।


বিজ্ঞাপন


সেই শাস্তি কার্যকর করার দায়িত্ব ইসলামি হুকুমতের। যদি ইসলামি হুকুমত (শাসন ব্যবস্থা) কায়েম না থাকে, তাহলে দুনিয়াতে হয়ত এই শাস্তি কার্যকর হবে না; কিন্তু আখেরাতে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।

তবে আখেরাতের আজাব থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য খালেস অন্তরে তাওবা করতে হবে। আল্লাহ পাকের রহমতে আশা করা যায় যে, তিনি মাফ করে দিবেন। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন- التائب من الذنب كمن لا ذنب له ‘গুনাহ থেকে তাওবাকারীর অবস্থা এমন, যেন তার কোন গুনাহ নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪২৫০; শুআবুল ঈমান: ৭১৯৬, সহিহুত তারগিব: ৩১৪৫)

এছাড়াও যারা লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে, তাদের বিশেষ পুরষ্কার ঘোষণা করেছেন নবীজি (স.)। এ সম্পর্কে হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হব।’ (বুখারি: ৭৬৫৮)

সামাজিক সম্পর্ক বা পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা করতে গিয়ে যেন গাইরে মাহরামের সঙ্গে অধিক মেলামেশা না হয়, সে ব্যাপারে রয়েছে বিধি-নিষেধ। কারণ একটাই, যেন অযথা কথা বলার সুযোগ না থাকে এবং পরকীয়ার সম্পর্ক সৃষ্টি না হয়। কখনো দেখা যায় দেবরের সাথে জমে ওঠে পরকীয়া। ইসলাম দেবরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা কঠিন গুনাহের কাজ। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না।’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবীজি (স.) বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (মুসলিম: ২৪৪৫)

হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ) ফতহুল বারিতে লিখেছেন, ‘এখানে মৃত্যুর সমতুল্যর অর্থ হলো হারাম।’ আর ইসলামে এসবের শাস্তি ভয়াবহ। এসবের শাস্তি হিসেবে রজম ও দোররার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। যাতে কোনো নারী ও পুরুষ এধরনের ভয়াবহ কর্মে লিপ্ত না হয়।

অন্যদিকে কোনো কারণে ব্যভিচারকারীর শাস্তি আরোপিত না হলে দুনিয়ায়ই কোনো না কোনোভাবে এর শাস্তি এসে যেতে পারে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘ব্যভিচারের মন্দ পরিণাম ছয়টি। তিনটি দুনিয়ায় আর তিনটি আখেরাতে। দুনিয়ার তিনটি হলো—১. চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া, ২. দরিদ্রতা, ৩. অকালমৃত্যু । আর আখিরাতের তিনটি হলো—১. আল্লাহর অসন্তুষ্টি, ২. হিসাব-নিকাশের কঠোরতা ও ৩. জাহান্নামের কঠিন শাস্তি। (ইসলামের দৃষ্টিতে অপরাধ, ই.ফা. পৃ-১০৯)

ব্যভিচারে অভ্যস্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে ঈমান ও আমল থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কোনো মানুষ যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেরিয়ে যায় এবং এটি তার মাথার ওপর মেঘখণ্ডের মতো ভাসতে থাকে। অতঃপর সে যখন তাওবা করে, তখন ঈমান আবার তার কাছে ফিরে আসে।’ (আবু দাউদ: ৪৬৯০)

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর