শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

দারিদ্র্য নিয়ে দুশ্চিন্তা, পবিত্র কোরআনের উপদেশ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৫৫ পিএম

শেয়ার করুন:

দারিদ্র্য নিয়ে দুশ্চিন্তা, পবিত্র কোরআনের উপদেশ

অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি—সব মিলিয়ে আমরা অনেকসময় বিচলিত হয়ে পড়ি। এই আশঙ্কা করি যে আর বুঝি খেয়েপরে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে না। অথচ এক যুগ আগেও মানুষ একই আশঙ্কাই করত। এমনকি কয়েক শতক আগেও অনেকের মধ্যে এ নিয়ে ভয় কাজ করত। 

তবে আল্লাহর প্রকৃত বান্দারা কখনও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করেননি, এখনও করেন না। কেননা দয়াবান আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রিত তাঁর সকল সৃষ্টি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন—‘নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা বাকারা: ১৪৩)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-‘আমার দয়া তো প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে রয়েছে।’ (সুরা আরাফ: ১৫৬)


বিজ্ঞাপন


তিনি সবার জন্য, সকল প্রাণীর জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। যে আল্লাহকে ভয় করে, তাকওয়া অর্জন করে, আল্লাহ তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দান করেন যে সে টেরও পায় না। এটা আল্লাহর অঙ্গীকার। আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য। ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেন।’ (সুরা তালাক: ২-৩)

আমরা মনে করি, মানুষ হিসেবে আমরা সবকিছু জানি। ভবিষ্যতে কী সমস্যা হবে, তা তো অনুমান করাই যায়। আসলে আমরা তেমন কিছুই জানি না। আমরা যখন শিশু ছিলাম তখন কি জানতাম যৌবনে আমাদের অবস্থান কেমন হবে? আমাদের সেরা বন্ধু কারা হবে, পড়ালেখা কীভাবে শেষ হবে, কী ধরণের চাকরি হবে, কী ধরণের বাড়িতে থাকব, কাকে বিয়ে করব, সবমিলিয়ে কী ধরণের ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে—কিছুই জানতাম না বা জানি না। তদ্রূপ, আগামী দিনগুলো কীভাবে অতিবাহিত হবে তা-ও জানি না। অজানা ভবিষ্যতের ভয়ে অনেকে অশ্রু বিসর্জনও করে। 

অথচ পবিত্র কোরআন বলছে, এসব নিয়ে তোমার চিন্তা করার দরকার নেই। তুমি শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করো আর চেষ্টা করে যাও। ইরশাদ হয়েছে—‘যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন তবে তোমাদের উপর বিজয়ী কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমাদেরকে লাঞ্ছিত করেন তবে কে এমন আছে যে, তোমাদেরকে এরপরে সাহায্য করবে? আর আল্লাহর ওপরই যেন মুমিনগণ তাওয়াককুল করে’ (সুরা ইমরান: ১৬০)। আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘..আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন যারা তাঁর ওপর ভরসা করে।’ (সুরা ইমরান: ১৫৯)

এই আয়াত দুটির মর্মকথা এটাই যে, আল্লাহর চেয়ে উত্তম সাহায্যকারী কিংবা বন্ধু কেউ নেই। তাঁর ওপর ভরসা রাখতে বলছেন তিনি। তাহলে তিনি ভালোবাসবেন। দেখুন, যখন সহায়তার নিশ্চয়তা দেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা, তখন আর দুশ্চিন্তা কীসের? 


বিজ্ঞাপন


সুতরাং মুমিন কখনও ভবিষ্যতের ব্যাপারে দিশাহারা হতে পারে না। অশুভ চিন্তা বা উৎকণ্ঠায় থাকতে পারে না। বরং সবসময় সকল কাজে আল্লাহকেই যথেষ্ট মনে করতে হবে। তাঁর ওপরই আস্থা রাখতে হবে। এই কথা মনের গভীর থেকে উচ্চারণ করতে হবে যে—‘...আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমি তাঁর ওপর ভরসা করেছি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি।’ (সুরা তাওবা: ১২৯)

পবিত্র কোরআনের উল্লেখিত আয়াতগুলো উপলব্ধি করলে শরীরে ঝাঁকুনি দেবে, ভবিষ্যৎ নিয়ে অস্বস্তি দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। কেননা এসব কথাগুলো মহামহিম আল্লাহরই কালাম। আত্মায় প্রশান্তি আসার মতো আরেকটি আয়াত হলো—‘এবং তিনি তাকে (উৎস) থেকে সরবরাহ করবেন যা সে কল্পনাও করতে পারেনি। আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূরণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর জন্য একটি পরিমাপ নির্ধারণ করে রেখেছেন।’ (সুরা তলাক: ০৩)

এছাড়াও হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করো, আমি তোমার অন্তর ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করব না। (তিরমিজি: ২৪৬৬)

দেখুন, আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি কতটা দয়াময়। তিনি বান্দাকে শিখিয়ে দিচ্ছেন কী করতে হবে। বর্তমান সময় নিয়ে যারা অস্থিরতা-উৎকণ্ঠায় আছেন, তারা মহান আল্লাহর এই ঘোষণাটিও একবার মনোযোগ দিয়ে পড়ুন— ‘..যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেবো...।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলছেন, যা আছে তা নিয়ে শুকরিয়া আদায় করো। তাহলে অবশ্যই আমি আরও বেশি দেবো। সুতরাং আমরা শুকরিয়া করলেই সব ঝামেলা শেষ, সকল দুশ্চিন্তার অবসান আল্লাহই করে দেবেন। 

আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে- ইস্তেগফার করা সমৃদ্ধ জীবন-যাপনের অন্যতম হাতিয়ার। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বিধৃত হয়েছে— ‘আর আমি তো বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা সমৃদ্ধ করবেন।’ (সুরা নুহ: ১০-১২)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইস্তেগফারের মাধ্যমে যেমন আখেরাতের মুক্তি পাওয়া যায়, তেমনি দুনিয়াতেও এর সুফল অপরিসীম। তাই তো মহানবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য ‘ইস্তেগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) আবশ্যক করে নেবে, আল্লাহ তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, সব সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা তার চিন্তার বাইরে।’ (সুনানে নাসায়ি: ৩৮১৯)

বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার দয়া প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘মা তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তদাপেক্ষা অধিক দয়ালু।’ (সহিহ বুখারি: ৭/৭৫, কিতাবুল আদাব, হাদিস: ৫৯৯৯; সহিহ মুসলিম, ৪/২১০৯, কিতাবুত তাওবা, হাদিস: ২৭৫৪)

অতএব, ভবিষ্যৎ নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। আমাদের জন্য যা উচিত তা হলো—তাওয়াক্কুল করা আর চেষ্টা করে যাওয়া। বাকিটা আল্লাহ সহায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ভবিষ্যতের ভয় ছেড়ে আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল করার তাওফিক দান করুন। খোদাভীতির গুণ অর্জনের তাওফিক দান করুন। সবসময় ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর