পবিত্র কোরআনের ৯৬ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা। যার ব্যতিক্রমী এক উপকার হলো- ওই সুরাটি নিয়মিত পাঠ করলে কখনো উপবাস থাকতে হবে না। কখনও দারিদ্র্য স্পর্শ করবে না। সুরাটি কী? সুরাটির নাম হলো- সুরা ওয়াকেয়া। এটি কোরআনের ৫৬তম সুরা। মাগরিবের নামাজ নিয়মিত শেষে সুরা ওয়াকেয়া তেলাওয়াত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে হাদিসে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সুরা ওয়াকেয়া তেলাওয়াত করবে, তাকে কখনো দারিদ্র্য স্পর্শ করবে না।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ২৪৯৮)
বিশিষ্ট সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জীবনের শেষ বয়সে অসুখে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন। ওই সময় আমিরুল মুমিনিন হজরত ওসমান (রা.) তাঁকে দেখতে যান। তাদের মুখোমুখি কথাবার্তা ছিল এমন—
—হজরত ওসমান (রা.): مَا تَشْتَكِي؟ আপনার অসুখটা কি?
বিজ্ঞাপন
—হজরত ইবনে মাসউদ (রা.): ذُنُوبِي আমার পাপসমূহই আমার অসুখ।
—ওসমান (রা.): فَمَا تَشْتَهِي؟ আপনার বাসনা কি?
—ইবনে মাসউদ (রা.): رَحْمَةَ رَبِّي আমার পালনকর্তার রহমত কামনা করি।
—ওসমান (রা.): أَلَا آمُرُ لَكَ بِطَبِيبٍ؟ আমি আপনার জন্যে কোন চিকিৎসক ডাকব কি?
বিজ্ঞাপন
—ইবনে মাসউদ (রা.): الطَّبِيبُ أَمْرَضَنِي চিকিৎসকই আমাকে রোগাক্রান্ত করেছেন।
—ওসমান (রা.): أَلَا آمُرُ لَكَ بِعَطَاءٍ؟ আমি আপনার জন্যে সরকারী বায়তুল মাল থেকে কোন উপঢৌকন পাঠিয়ে দেব কি?
—ইবনে মাসউদ (রা.): لَا حَاجَةَ لِي فِيهِ এর কোনো প্রয়োজন নেই।
—ওসমান (রা.):يَكُونُ لِبَنَاتِكَ مِنْ بَعْدِكَ؟ উপঢৌকন গ্রহণ করুন৷ তা আপনার পর আপনার কন্যাদের উপকারে আসবে।
—ইবনে মাসউদ (রা.): أَتَخْشَى عَلَى بَنَاتِي الْفَقْرَ؟ إِنِّي أَمَرْتُ بَنَاتِي يَقْرَأْنَ كُلَّ لَيْلَةٍ سُورَةَ الْوَاقِعَةِ আপনি চিন্তা করছেন যে, আমার কন্যারা দারিদ্র ও উপবাসে পতিত হবে। আমি তো আমার কন্যাদেরকে নির্দেশ দিয়ে রেখেছি যে, তারা যেন প্রতিরাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে। এরপর তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি- مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْوَاقِعَةِ كُلَّ لَيْلَةٍ ، لَمْ تُصِبْهُ فَاقَةٌ أَبَدًا ‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে, সে কখনও উপবাস করবে না৷ (তাফসিরে মারেফুল কোরআন: ৮/১০৬; ইবনে কাসির: ৪/২৮১ তারিখে দামিশক: ৩৬/৪৪৪ বায়হাকি: ৪/১১৯)
এই আমলকে বলা হয় রিজিকবৃদ্ধির সর্বোৎকৃষ্ট আমল। দেশের প্রতিটি আবাসিক মাদরাসা, পীর-মাশায়েখদের দরবার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতই মাগরিব নামাজ শেষে সুরায়ে ওয়াকেয়া তেলাওয়াত হয়। আলেমরা বলেন, এর সুফল কোরআন নাজিলের পর থেকে সবসময় পরীক্ষিত। ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর মেয়েদেরকে প্রতি রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ২৪৯৮)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত সুরা ওয়াকেয়া পড়ার তাওফিক দান করুন। উভয়জাহানে এই সুরা পাঠের উপকার দান করুন। আমিন।

