রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০২৩, ১২:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম

মানুষের জীবনের প্রত্যেকটি বিষয়ে ইসলামিক নিয়ম-কানুন রয়েছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে কোনোকিছুই ঠিকমতো আদায় হয় না। ফরজ গোসলেরও পদ্ধতি রয়েছে। সঠিক নিয়মে গোসল না করলে পবিত্রতা অর্জন হয় না। ফলে নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আদায় হয় না।

সুতরাং সঠিকভাবে গোসল করতে হবে। ইসলামে পবিত্রতা অর্জন অনেক বড় বিষয়। কারণ আল্লাহ নিজেই পবিত্র, বান্দাদেরও পবিত্রতা পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন— ‘তোমরা যদি অপবিত্র অবস্থায় থাকো, তবে নিজেদের শরীর (গোসলের মাধ্যমে) ভালোভাবে পবিত্র করে নাও।’ (সুরা মায়েদা: ৬) ফরজ গোসলের নিয়ম, ফরজ গোসলের পদ্ধতি


বিজ্ঞাপন


আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে’ (সূরা বাকারা: ২২২)। মালিক আশয়ারী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অংশ। (মুসলিম: ২২৩)।

ফরজ গোসলের নিয়ম ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
আমরা জানি, গোসলের ফরজ তিনটি। ১) কুলি করা (বুখারি: ২৫৭) ২) নাকে পানি দেওয়া (বুখারি: ২৬৫) ৩) পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো (আবু দাউদ: ২১৭)

এর একটি বাদ গেলেও পবিত্রতা অর্জন হবে না। অর্থাৎ অপবিত্র রয়ে যাবেন। অথচ দেখা যায়, অনেকে নাকে পানি দিচ্ছে না। কুলিও করছে না। আবার অসতর্কতার কারণে পুরো শরীরও ভিজছে না। এমন গোসল করার পর যেসব ইবাদতে পবিত্রতা শর্ত, সেসব ইবাদত তো কবুল হবেই না, বরং গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। না জেনে করে থাকলে সেটি আল্লাহ হয়ত ক্ষমা করবেন। জেনেশুনে ফরজ বিষয়ে অবহেলা করা জায়েজ নেই। 

সুন্দরভাবে গোসল করার জন্য নিন্মোক্ত পন্থাগুলো অবলম্বন করা উচিত— ফরজ গোসলের সঠিক পদ্ধতি


বিজ্ঞাপন


-প্রথমে প্রস্রাব করবেন। এতে বীর্য ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে বের হওয়া সহজ হয়।

-তারপর গোপন জায়গা ভেতরে-বাইরে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেবেন।

-দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেবেন। সাবান বা এজাতীয় কিছু দিয়ে ধুতে পারলে ভালো; না হলেও অসুবিধা নেই।

-ভালোভাবে গড়গড়ার সাথে কুলি করবেন।

-নাকের ছিদ্রের ভেতর বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে ভালো করে পানি পৌঁছাবেন।

-হাত ভিজিয়ে কানের ছিদ্র মুছবেন।

-নাভির ভেতর পরিষ্কার করে পানি দেবেন।

-নারীদের ফরজ গোসলে কান ও নাকফুল নাড়িয়ে ছিদ্রে পানি পৌঁছানো জরুরি। (আল মুহিতুল বুরহানি: ১/৮০)

-পুরষদের যেন দাড়ি, চুল, গোফের গোড়াসমূহ ভালোভাবে পানিতে ভিজে। কারো হাতে যদি ঘড়ি বা আংটি থাকে, তা নেড়ে ভেতরে পানি পৌঁছাতে হবে।

-নারীদের চুল বাঁধা থাকলে খোলা ছাড়া যদি চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে না খুলে শুধু গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। আর যদি চুল খোলা থাকে তাহলে পুরুষের মতো সম্পূর্ণ চুল ধৌত করা ফরজ। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/৩৪, রদ্দুল মুহতার: ১/১৪২)

-নেইলপলিশ, রং বা সুপার গ্লু ইত্যাদি যা শরীরে পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়, তা উঠিয়ে নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি, অন্যথায় গোসল শুদ্ধ হবে না। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৩) (রদ্দুল মুখতার: ১/১৪২)

-এরপর পানি দিয়ে মাথা ভিজিয়ে নেবেন।

-তারপর নামাজের অজুর মতো করে পূর্ণাঙ্গ অজু করা উত্তম।

-এরপর প্রথমে শরীরের ডান অংশে এবং পরে বাম অংশে পানি ঢালবেন। তারপর সারা দেহে পানি ঢালবেন। মনে রাখবেন, বাহ্যিক অঙ্গের চুল পরিমাণ জায়গাও শুকনা থাকলে ফরজ গোসল শুদ্ধ হবে না। (শরহে মুখতাসারুত তাহাভি: ১/৫১০)

-বিভিন্ন রোগের কারণে অনেকের দাঁতে এমনভাবে ক্যাপ লাগানো হয়ে থাকে, যার দরুন কুলি করলে নিচে পানি পৌঁছে না এবং তা খুললেও ক্ষতির আশঙ্কা হয়, তাহলে গোসলের সময় তা খোলা জরুরি নয়, আর যদি এমন কিছু লাগানো থাকে, যা সহজে খোলা যায়, তাহলে খুলে তার নিচে পানি পৌঁছানো জরুরি। (রদ্দুল মুহতার: ১/১৫৪, আহসানুল ফতোয়া: ২/৩২)

রাসুলুল্লাহ (স.) যেভাবে গোসল করতেন
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মায়মুনা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (স.)-এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম। তা দিয়ে তিনি জানাবাতের (অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার) গোসল করেন। আল্লাহর নবী (স.) পাত্র হাতে নিয়ে নিজের ডান হাতের ওপর কাত করে তা দুই বা তিনবার ধৌত করেন। অতঃপর তিনি তাঁর লজ্জাস্থানের ওপর পানি ঢেলে— বাম হাত দিয়ে ধৌত করেন।

পরে তিনি মাটির ওপর হাত ঘষে (দুর্গন্ধমুক্ত হওয়ার জন্য) তা পানি দিয়ে ধৌত করেন। অতঃপর তিনি কুলি করেন এবং নাক পরিষ্কার করেন। অতঃপর মুখমণ্ডল ও দুই হাত ধৌত করেন। এরপর তিনি নিজের মাথা ও সর্বাঙ্গে পানি ঢালেন। পরে তিনি সেই স্থান থেকে অল্প দূরে সরে গিয়ে উভয় পা ধৌত করেন। (আবু দাউদ: ২৪৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ উপায়ে পবিত্রতা অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর