রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ইবাদত কবুল হলো কি না বুঝবেন যেভাবে 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৩, ০১:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

ইবাদত কবুল হলো কি না বুঝবেন যেভাবে 

মুমিন মাত্রই কম-বেশি ইবাদত করে। কিন্তু সবাই ইবাদত কবুলের ব্যাপারে চিন্তা করে না। আবার অনেকে ইবাদত বিশুদ্ধ হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে সচেতন থাকেন একইসঙ্গে আল্লাহর কাছে ইবাদত কবুলের প্রত্যাশাও করেন। এখানে আমরা দেখে নেব-ইবাদত কবুল হলো কি না বোঝার মানদণ্ড, যা সালফে সালেহিন ঠিক করেছেন।

১. আমল কবুল না হওয়ার ভয় করা
যেকোনো ইবাদতের পর অন্তরে কবুল না হওয়ার ভয় সৃষ্টি হওয়া ইবাদত কবুলের অন্যতম মানদণ্ড। তাই মহান আল্লাহর ইবাদত করতে হবে যত্নসহকারে খুশুখুজুর সঙ্গে। আর পরিপূর্ণ খুশুখুজু আনতে হলে অবশ্যই ইবাদতটি সঠিক হচ্ছে কি না, তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে কি না, এ ভয় অন্তরে থাকতে হবে। আয়েশা (রা.) একবার নবীজি (স.)-কে পবিত্র কোরআনের আয়াত—‘আর যারা দান করে এবং তাদের অন্তর ভীত কম্পিত।’ এর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে বলেন, এরা কি তারা, যারা মদ পান করে এবং চুরি করে? নবীজি (স.) বলেন, ‘না হে সিদ্দিক তনয়া, বরং এরা হলো ওই সব লোক, যারা সিয়াম পালন করে, সালাত (নামাজ) আদায় করে, সদকা দেয়। অথচ তাদের পক্ষ থেকে এসব কবুল না হওয়ার আশঙ্কা করে। এরাই তারা, যারা কল্যাণের দিকে দ্রুত ধাবমান এবং তার দিকে অগ্রগামী।’ (তিরমিজি: ৩১৭৫)


বিজ্ঞাপন


২. নিজের আমলকে ছোট করে দেখা
নিজের আমলকে ছোট করে দেখার অর্থ হলো- নিজের আমলে নিজেই উচ্ছ্বসিত না হওয়া কিংবা আমল করে তার ওপর অহংকার না করা। মহান আল্লাহ শুধুমাত্র মানুষের শরীরেই যতগুলো নেয়ামত দিয়ে রেখেছেন, সারাজীবন আমল করেও সেগুলোর যথাযথ হক আদায় করা সম্ভব নয়। তাছাড়া আমল নিয়ে অহংকার করলে আমলের সওয়াব বিনষ্ট হয় এবং এর কারণে নেক আমলে অলসতা চলে আসে। তাছাড়া হাদিসের ভাষ্যমতে আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া শুধু নিজের আমল দিয়ে নাজাত পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ইবাদত করার পর বেশিকিছু করে ফেলেছি—এমনটা মনে করা যাবে না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে নিজের আমল নাজাত দেবে না।’ তাঁরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনাকেও না? তিনি বলেন, ‘আমাকেও না।’ তবে আল্লাহ তাআলা আমাকে রহমত দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। তোমরা যথারীতি আমল করে নৈকট্য লাভ করো। তোমরা সকালে, বিকেলে এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর ইবাদত করো। মধ্যপন্থা অবলম্বন করো। মধ্যপন্থা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাবে।’ (বুখারি: ৬৪৬৩)

৩. নেক আমলের সুযোগ পাওয়া
মহান আল্লাহ যাদের প্রতি দয়া করেন, তারাই বেশি বেশি নেক-আমলে আত্মনিয়োগের সুযোগ পান। অতএব ইবাদতের পর ইবাদত করার সুযোগ পেলে বুঝতে হবে- আমলগুলো আল্লাহর কাছে কবুল হচ্ছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টা বিভিন্ন প্রকারের। সুতরাং যে দান করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা সুগম করে দেব। আর যে কার্পণ্য করেছে এবং নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করেছে, আর উত্তমকে মিথ্যা বলে মনে করেছে, আমি তার জন্য কঠিন পথে চলা সুগম করে দেব।’ (সুরা লাইল: ৪-১০)

আরও পড়ুন: অন্তরে নেক আমলের ঝোঁক সৃষ্টি হওয়া কীসের আলামত?

৪. গুনাহে প্রত্যাবর্তন না করা
বান্দা যখন গুনাহকে অপছন্দ করতে শুরু করবে এবং তাতে প্রত্যাবর্তন তার কাছে অপ্রিয় হবে, তখন বুঝতে হবে- তার ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছে। পাশাপাশি যদি বিগত দিনের গুনাহগুলোর স্মরণ তাকে চিন্তিত ও লজ্জিত করে, অন্তরে আফসোস সৃষ্টি করে, তবে বুঝতে হবে তার আমল কবুল হচ্ছে। ‘মাদারিজুস সালেকিন’ নামক গ্রন্থে আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, গুনাহের কল্পনা যদি কাউকে আনন্দ দেয় (সে গুনাহে লিপ্ত থাকতে পছন্দ করে এবং পাশাপাশি ইবাদতও করে) তবে সে ৪০ বছর ইবাদত করলেও তা কবুল হবে না।
ইয়াহইয়া ইবনে মুআজ (রহ.) বলেন, যার জিহ্বা ইস্তেগফার করে কিন্তু তার অন্তর গুনাহের ওপর আবদ্ধ থাকে এবং তার দৃঢ় সংকল্প থাকে মাসখানেক (কিছুদিন) পর পাপে ফিরে যাওয়ার, সে ফিরেও যায়, তবে তার রোজা প্রত্যাখ্যাত হয় এবং তার জন্য কবুলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।


বিজ্ঞাপন


৫. ইবাদতের প্রতি ঝোঁক তৈরি হওয়া
ইবাদত কবুল হওয়ার এটাও একটি চিহ্ন যে ইবাদত করতে আগ্রহী হওয়া, গুনাহতে অনাগ্রহ সৃষ্টি হওয়া। ইবাদতে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়, জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।’ (সুরা আর-রাদ: ২৮)

আরও পড়ুন: যে দোয়া পড়লে ইবাদত করার আগ্রহ বাড়ে

৬. ইবাদত কবুলের আশা করা
আল্লাহর ভয় এবং তাঁর রহমতের আশা বান্দাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। শুধু ভয় মানুষের হতাশা বাড়ায়, মানুষকে বেপরোয়া করে তুলতে পারে। আর যখন আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশার মিলন ঘটে, তখন ইবাদতে খুশুখুজু আসে এবং আল্লাহর রহমতের আশায় ঈমান বৃদ্ধি পায়। যা ইবাদত কবুলে সহায়ক ভূমিকা রাখে। মহান আল্লাহ জাকারিয়া (আ.) ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাপারে বলেন, ‘তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর আমাকে আশা নিয়ে ও ভীত হয়ে ডাকত, আর তারা ছিল আমার প্রতি বিনয়ী।’ (সুরা আম্বিয়া: ৯০)

৭. নেককার ব্যক্তির সোহবত পছন্দ করা
যারা নেককারদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে পছন্দ করে আর বদকারদের থেকে দূরে থাকে, তারা আল্লাহর সুদৃষ্টির আশা করতে পারে। কারণ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) আবু জার (রা.)-কে বলেন, হে আবু জার, ঈমানের কোন শাখাটি অধিক মজবুত? তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুলই অধিক অবগত। তিনি (স.) বলেন, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর সখ্যতা স্থাপন করা এবং শুধু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালোবাসা ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ঘৃণা করা। (শুআবুল ঈমান)

৮. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা
বেশি বেশি ইস্তেগফার আমলকে ত্রুটিমুক্ত করে। ফলে ইস্তেগফারকারীরা আমল কবুল হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর দরবারে আশাবাদী হতে পারে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর তোমরা প্রত্যাবর্তন করো, যেখান থেকে মানুষ প্রত্যাবর্তন করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা বাকারা: ১৯৯)

৯. আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা
নেক আমলের ধারাবাহিকতা বান্দাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। তাদের আমল কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা ঠিকভাবে ও মধ্যমপন্থায় নেক আমল করতে থাকো। আর জেনে রাখো যে তোমাদের কাউকে তার আমল বেহেশতে নেবে না এবং আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল হলো, যা নিয়মিত করা হয়। তা অল্পই হোক না কেন। (বুখারি: ৬৪৬৪) 

আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেককে নবীজির অনুসরণে ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলা আমাদের ইবাদত কবুল করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর