বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

লিবিয়ায় বন্দী মাদারীপুরের ১৬ যুবক, পণেও মিলছে না মুক্তি

বিধান মজুমদার অনি
প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২২, ০৪:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

লিবিয়ায় বন্দী মাদারীপুরের ১৬ যুবক, পণেও মিলছে না মুক্তি
১৬ যুবকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছবি: ঢাকা মেইল

মাদারীপুরের দুধখালী ইউনিয়নের ১৬ জন যুবক তিন মাস ধরে লিবিয়ার বন্দিশালায় আটক রয়েছেন। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, দালালদের লাখ লাখ টাকা দিলেও মুক্তি মিলছে না তাদের।

অভিযোগ উঠেছে, এই আটক যুবকদের শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে মোবাইলে পাঠিয়ে পরিবারগুলোর কাছ থেকে বারবার মুক্তিপণের টাকা আদায় করছে এই দালালচক্র। এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ বলছে, অভিযোগ পেলে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: বৈধভাবে বিদেশ গিয়েও ‘বিক্রি’, দায় নিতে গড়িমসি বিএমইটির!

জানা যায়, সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের দুর্গাবর্দী গ্রামের নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী নাজমিন বেগমের হাত ধরে ছয় মাস আগে ইতালির উদ্দেশে লিবিয়া যাত্রা করেন দুর্গাবর্দী গ্রামের লুৎফর ব্যাপারীর ছেলে আল আমিন ব্যাপারী, মোতালেব খানের ছেলে ইয়াসিন খান, লুৎফর ব্যাপারীর ছেলে আল আমিন ব্যাপারী, মনির হাওলাদারের ছেলে তমাল হাওলাদার, আলী হোসেন ব্যাপারীর ছেলে ইমন ব্যাপারী, তাজমুল চোকিদারের ছেলে শান্ত চোকিদার, কালাম ফকিরের ছেলে মেহেদী ফকির, দুধখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য হুয়ায়ন ব্যাপারীর ছেলে সৌরভ ব্যাপারী, ফারুক হাওলাদারের ছেলে ফারদিন হাওলাদার, এসকান ব্যাপারীর ছেলে হাসান ব্যাপারী, হাবিব খানের ছেলে আল আমিন খান, মোস্তফা মাতুব্বরের ছেলে সাব্বির মাতুব্বর, মনির খানের ছেলে নাঈম খান, শাহ্আলম মুন্সির ছেলে হৃদয় মুন্সি, ওহাব আলি ব্যাপারীর ছেলে হারুণ ব্যাপারী, এহসাক হাওলাদারের ছেলে রুবেল হাওলাদার।

madaripur2

এসময় তাদের প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া হয় নয় লাখ টাকা। কিন্তু লিবিয়া নেওয়ার পরে এই যুবকদের বিক্রি করে দেওয়া হয় লিবিয়ান মাফিয়াদের হাতে। আবার ওই যুবকদের মুক্তির কথা বলে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে আদায় করেছে মুক্তিপণের ছয় লাখ টাকা। এতেও মুক্তি মিলছে না তাদের। ঘটনার পর বসতঘরে তালা দিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে অভিযুক্তরা।


বিজ্ঞাপন


সরেজমিনে দেখা যায়, তমাল হাওদারের মা মুরশিদা বেগম ও ইমনের ব্যাপারী মা নাহার বেগমে প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে কষ্টে আর দুশ্চিন্তায়। তারা জানেন না, তাদের আদরের সন্তান কোথায়, কেমন আছে। শুধু ইমন ও তমালের পরিবারই নয়, একই অবস্থা আল আমিন, মেহেদী ফকির, ইয়াসিন খান, শান্ত চৌকিদার, সৌরভ ব্যাপারী, হৃদয় মুন্সীসহ দুর্গাবর্দী গ্রামের ১৬ যুবকের পরিবারের। সন্তাদের খোঁজ না পেয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো। সন্তানদের ফিরে পেতে সরকারের কাছে বারবার আকুতি জানাচ্ছে এসব ভুক্তভোগী পরিবার।

আরও পড়ুন: মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুকদের সতর্ক করল মন্ত্রণালয়

তমাল হাওদারের মা মুরশিদা বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, নুরুল আমিন আমাদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়েছিল। বলেছিল আমার সন্তানকে ভালোভাবে ইতালি নিয়ে যাবে। এজন্য সে আমাদের থেকে নয় লাখ টাকা নিয়েছিল। টাকা নেওয়ার পর মাফিয়াদের হাতে বিক্রি করে দিয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে আমার সন্তানের কোনো খোঁজ নেই। আমি আমার ছেলেকে ফেরত চাই।

madaripur3

ইমনের ব্যাপারীর মা নাহার বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার একটি মাত্র ছেলে। বড় আশা করে দালালের আশ্বাসে ছেলেকে ইতালির জন্য পাঠিয়েছিলাম। দালালরা এমন করবে তা কিছুতেই মানতে পারছি না। আমি এখন বড়ই অসহায়। আমার ছেলের কোনো ক্ষতি হলে আমি মরে যাবো। সরকার ও প্রশাসনের কাছে আমার ছেলেসহ যারা আটকা পড়ছে তাদের উদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাই।

এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীরা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের ধরতে তৎপরতা চালানো হবে।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর