শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রবাসীর মায়ের কাছে খোলা চিঠি

আহসান রাজীব বুলবুল
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রবাসীর মায়ের কাছে খোলা চিঠি

মাগো সালাম নিও। তুমি কেমন আছো? নিশ্চয়ই আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালোই আছো। কতদিন তোমার ডাক শুনতে পাই না। আমার এই চিঠিই তোমাকে বলে দেবে, তুমি ছাড়া আমি কেমন আছি।

মাগো, তোমার কথা খুব মনে পড়ে। তোমার হাতের প্রতিটি রান্না আমার মুখস্থ। বাড়িতে আসলে কোনটার পর কোনটা খাওয়াবে তার একটুও ব্যত্যয় ঘটেনি। তুমি জানতে আমি কোনটা পছন্দ করতাম। সবকিছু খেতে পারতাম বলে তুমিও মনের আনন্দে রান্না করতে। রান্নার পর যখন খাবারের সামনে দাঁড়িয়ে আমার খাওয়া দেখতে, সে কি আনন্দ তোমার! যেন সন্তানের প্রতি তোমার দায়িত্ব পুরোটাই সার্থক। আজ প্রবাসে বসে সবই মনে পড়ছে।


বিজ্ঞাপন


তোমার মনে আছে মা, একবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটিতে বাড়ি আসলাম। আমার অলস সময়ে আমাকে দিয়ে তুমি বাড়িতে সজনে গাছ লাগিয়েছিলে। গাছ লাগানোর কাজটাকে ফাঁকি দেবার জন্য পরদিন তোমাকে বলেছিলাম, আমাকে দিয়ে সজনে গাছ লাগালে, দেখনি তুমি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘কোনো এক মাকে’ কবিতায় খোকা লাশ হয়ে বাড়ি ফিরে? সেদিনকার তোমার উদ্বিগ্ন চেহারা আমার এখনও মনে আছে। পরদিনই তুমি লোক দিয়ে সেই গাছ উঠিয়ে ফেললে তারপর আর কোনোদিন আমাকে গাছ লাগাতে বলোনি। প্রবাসে আজ স্মৃতির পাতায় সবই ভাসছে।

কানাডায় চলে আসার পর আমার ফাঁকা রুমে বারংবার উকি দিয়েছো, বিছানায় শুয়ে আমার শরীরের ঘ্রাণ নেবার চেষ্টা করেছো, মনের অজান্তেই বারবার মূর্ছা গেছো, কাছে না পাওয়ার কষ্ট চেপে ধরেছো, একাই রাস্তায় বের হয়ে পড়েছো, যদি তোমার আদরের সন্তানকে দেখতে পাও। আমার পুরানো শার্ট বুকে জড়িয়ে ধরে রাস্তায় রাস্তায় আমাকে খুঁজেছো। আমাকে কোনোদিনও জানতে দাওনি। মাগো, তোমার মৃত্যুর পর আমি সবই জেনে গেছি মা। মাগো, তুমি কি আমার কষ্ট অনুভব করতে পারো? আমার সফলতায় তুমি যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছিলে কোনোদিনও বুঝতে দাওনি। প্রবাসে আজ সবই অনুভব করছি।

আরও পড়ুন

জন্মদিন ও একটি ডায়মন্ডের আত্মকাহিনী
মানব জীবন থেকে যান্ত্রিক জীবন

শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বার্ধক্য। তারপর একসময় পৃথিবী থেকে বিদায়। আর এই দীর্ঘ সময়ের রঙ্গমঞ্চে কি সুন্দর অভিনয়। প্রতিটি চরিত্রই যেন নিজস্ব স্বকীয়তায় বয়ে চলছে। রঙ্গমঞ্চের একেকটা চরিত্র যেন একেক রকমের। মাগো, প্রবাসে বসে শুধুই ভাবছি তোমার অকৃত্রিম পদক্ষেপগুলোর কথা।

তোমার নিজের সঙ্গে নিজের অন্তর্দ্বন্দ্ব হলেও সন্তানের সুখের কথা ভেবে সবকিছু নীরবে নিভৃতে সহ্য করেছো। মাগো, অনেক দেরি হলেও আজ প্রবাসে সবই বুঝতে পারছি।

পূথিবীর সবচেয়ে মধুমাখা শব্দটির নাম হলো ‘মা’। আর সেটাই তুমি। তোমার মতো এমন মধুর শব্দ পৃথিবীর কোনো অভিধানে আর দ্বিতীয়টি নেই। তুমি সংজ্ঞাহীন ছোট্ট একটি বর্ণ। মাগো, কারণ ছাড়া এখানে কেউ কাউকে ভালোবাসে না। প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে হলেও কোনো না কোনো প্রয়োজন লুকিয়ে থাকেই। কিন্তু তোমার ভালোবাসা ছিল নিখাদ ও লৌকিকতাবিহীন। একবিংশ শতাব্দী ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের এই যুগে এসেও তোমার ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপের জন্য কোনো যন্ত্র আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে বলে মনে হয় না।

দূর প্রবাসে বসে পাহাড়ের পাদদেশে আজ কত কথাই না মনে পড়ছে, কত শত স্মৃতিই না আলোড়িত করছে, শুধু পাশে তুমি নেই। প্রবাসের সন্তানদের দোয়ায় ওপারে তুমি ভালো থেকো মা। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় হয়তো আবার দেখা হয়েও যেতে পারে।

লেখক: আহসান রাজীব বুলবুল, সাংবাদিক ও কলামিস্ট, প্রধান সম্পাদক, প্রবাস বাংলা ভয়েস, ক্যালগেরি, কানাডা।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর