হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর ২০১৫ সালে ভারতের শিলংয়ে উদ্ধার হওয়া বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতার নিরসন হয়েছে। ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগের মামলায় শিলংয়ের আদালত থেকে তাকে খালাস দেওয়ার পর দেশে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। এমন সিদ্ধান্তে দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব এই বিএনপি নেতার কর্মী-সমর্থকরাও আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। কিন্তু দুইমাস হতে চললেও এখনো নিশ্চিত নন কবে নাগাদ তিনি দেশে ফিরতে পারবেন।
দলীয় ও তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, সালাহউদ্দিন আহমেদের কাছে কোনো ট্রাভেল ডকুমেন্ট না থাকায় তাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে শিলংয়ের পুলিশ। আদালতের নির্দেশনা অনুসারে কাজও শুরু করেছে সেখানকার পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে যাতে পরবর্তীতে কোনো সমস্যা না হয় সে কারণে দিল্লির পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সালাহউদ্দিন আহমেদের বরাত দিয়ে তার ঘনিষ্ঠ একজন ঢাকা মেইলকে বুধবার রাতে বলেন, দিল্লি পুলিশের অনুমতির জন্য শিলংয়ের পুলিশ চেষ্টা করছে। কিন্তু এখনো কোনো রেসপন্স পাওয়া যায়নি। সালাহউদ্দিন ভাই নিজেও তার জায়গা থেকে চেষ্টা করছেন। সুনির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন।
>> আরও পড়ুন: দেশবাসীকে গণতন্ত্র ‘পুনরুদ্ধারের’ বার্তা দিলেন খালেদা জিয়া
এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে যখন অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় তাকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় দেন মেঘালয় রাজ্যের শিলং জজ আদালতের আপিল বিভাগ তখন সেখানে ছিলেন সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। ওই যাত্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় তিনি শিলংয়ে ছিলেন। সম্প্রতি দেশে এসেছেন। ঈদের পর আবারও যাবেন বলে ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন হাসিনা আহমেদ।
ঢাকা মেইলকে হাসিনা আহমেদ বলেন, আমি তো ওখানে নেই, চলে এসেছি। আবারও কিছুদিন পর যাব। তবে যতটুকু শুনেছি ওখানকার পুলিশ দেশে পাঠানোর জন্য দিল্লি পুলিশকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বিস্তারিত সালাহউদ্দিন সাহেব নিজেই ভালো বলতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন
সালাহউদ্দিন আহমদের পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ ও দৈনিক দিনকালের কক্সবাজারের স্টাফ রিপোর্টার নুরুল ইসলাম হেলালী ঢাকা মেইলকে বলেন, কবে নাগাদ সালাহউদ্দিন সাহেব দেশে ফিরবেন তা এখনো অনিশ্চিত। শিলংয়ের পুলিশ প্রশাসন তাকে বারবার আশ্বাস দিচ্ছে খুব শিগগিরই হস্তান্তর করার। কিন্তু কবে নাগাদ করবে সেটা পরিষ্কার করছে না। তিনি নিজেও চেষ্টা করছেন দ্রুত সময়ে কিভাবে দেশে ফেরা যায়। কারণ দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় মানুষ সালাহউদ্দিন আহমেদ।
>> আরও পড়ুন: প্রভাবশালী আ.লীগ নেতাদের হারানো সেই মেয়ররা কেমন আছেন?
শারীরিকভাবে মাঝে কিছুটা সমস্যা থাকলেও বর্তমানে তিনি ভালো আছেন বলেও জানান নুরুল ইসলাম হেলালী।
এখন কি কারণে দেশে ফেরা পিছিয়ে যাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যতটুকু জেনেছি কোর্ট আদেশ দিয়েছে তাকে বাংলাদেশে হ্যান্ডওভার করার জন্য। কিন্তু শিলং পুলিশ দিল্লির পুলিশ হেড কোয়ার্টারের কাছে অনুমতি চাইলেও এখনো পাচ্ছে না।
দূরে থাকলেও দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদের যোগাযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকেও (বুধবার) তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সবসময় নেতাকর্মীদের খোঁজ রাখেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয়, কক্সবাজার জেলা ও চকরিয়া উপজেলার কর্মসূচিতে তিনি ভার্চুয়ালিও অংশ নিয়েছেন।
১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এরপর সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০০১ সালে তিনি কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হন।
ভারতে আটকের সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। ভারতে আটক অবস্থায় বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন।
যেভাবে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ
২০১৫ সালে রাজনীতির উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে তাকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নেতাকর্মীদের ধরপাকড় হওয়ায় অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রতিদিনকার আন্দোলন কর্মসূচির তথ্য গণমাধ্যমে সরবরাহ করতেন সালাহউদ্দিন আহমেদ।
এরমধ্যে ওই বছরের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। ৬৩ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে উদ্ধারের পর সেখানকার একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করায়। পরদিন তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
পরে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী সালাহউদ্দিনকে গ্রেফতার দেখায় মেঘালয় থানা পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়।
যে প্রক্রিয়ায় খালাস পেলেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী
অনুপ্রবেশের মামলায় সালাহউদ্দিন আহমেদ ২০১৮ সালে নিম্ন আদালত থেকে খালাস পেলেও দেশটির সরকার আপিল করায় এতদিন দেশে ফেরার সুযোগ পাননি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় দিয়েছেন মেঘালয় রাজ্যের শিলং জজ আদালতের আপিল বিভাগ। ফলে তার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।
সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে সালাহউদ্দিন আহমেদের হোয়াটসআপ নম্বরে যোগাযোগ করলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে আপিলে খালাস পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যে পরিস্থিতিই হোক দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি দেশে ফিরতে চান। এমন কি মারা গেলেও তিনি দেশে মারা যেতে চান।
এজন্য ভারত সরকার তাকে সহযোগিতা করবে এমন প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছিলেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।
বিইউ/জেএম

